দুর্নীতির ‘মাস্টার’ হয়ে উঠেছেন মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. হান্নান মোল্লা। কলেজে কর্মচারী থাকার পরও তিনি একই সঙ্গে হিসাবরক্ষক ও কোষাধ্যক্ষের কাজ করছেন। কলেজের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র তিনি নিজের কাছে রাখেন। দুর্নীতি করে অধ্যক্ষ হান্নান মোল্লা কলেজের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে বিশেষ নিরীক্ষা কমিটি।
অধ্যক্ষের অসহযোগিতা, করোনাসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০২২ সালের এপ্রিলে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় নিরীক্ষা কমিটি। এ তদন্তে অধ্যক্ষের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি উঠে আসে। নিরীক্ষা কমিটি ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কলেজের আয়-ব্যয় ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেনে অনিয়ম পেয়েছে।
এছাড়া এক কোটি চার লাখ ৫৩ হাজার ৫৫৯ টাকা ৪২ পয়সার কোনো হদিস পায়নি নিরীক্ষা কমিটি। এ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে কমিটি ধারণা করছে। কলেজের আয়-ব্যয়ের হিসাবের খাতা কলেজ সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মচারীর কাছে না রেখে অধ্যক্ষ নিজ জিম্মায় রাখেন এবং কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব নিজেই পালন করেন।
কলেজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে চেকের মাধ্যমে অধ্যক্ষ নিজ নামে সাত লাখ টাকা উত্তোলন করেন যা কলেজের কোনো আয়-ব্যয়ের হিসাব খাতায় পাওয়া যায়নি। অধ্যক্ষ কলেজ ক্যাম্পাসে ফ্রি আবাসন ভোগ করে বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, ডিশ বিল ও ইন্টারনেট বিল কলেজ ফান্ড থেকে পরিশোধ করেন। এছাড়া কলেজের বিভিন্ন উন্নয়ন দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
কেন্দ্র ফি, পরীক্ষার ফিসহ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাতে টাকা আদায় করে সিংহভাগই তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ নিরীক্ষা কমিটি লাখ লাখ টাকার অনিয়ম পেলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন অধ্যক্ষ।
জেলা প্রশাসক বিশেষ নিরীক্ষা কমিটির রিপোর্টসহ অধ্যক্ষ মো. হান্নানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের সচিব বরাবর পাঠালেও অদৃশ্য কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
হিসাবরক্ষক মিজানুর রহমান জানান, ‘আমি এ কলেজের নিয়োগপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষক। তিনি (অধ্যক্ষ) আসার পর থেকে আমাকে হিসাব দেখতে বা লেখতে দেন না। তিনি একাই হিসাবে লেখেন, খরচাপাতি করেন। আমরা এর কিছুই জানতে পারি না। প্রয়োজন ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন দেখিয়ে তিনি টাকা নয়ছয় করেছেন। অথচ আমাদের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। আমাদের অর্থাভাবে রেখে তিনি উন্নয়নের নামে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।’
কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষ হান্নান কলেজে যোগদানের কিছুদিন পর থেকেই স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেছেন। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা তার ইচ্ছামতো দেন। এ কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের অনেক টাকা বকেয়া হয়ে গেছে।
এছাড়া তিনি লাখ লাখ টাকা লুটপাট করে কলেজটিকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছেন। আমরা তার অপসারণ এবং লুট করা টাকা আদায়সহ দুর্নীতির বিচার চাই।’ অধ্যক্ষ মো. হান্নান মোল্লার কাছে তদন্ত রিপোর্টের ব্যাপারে জানতে চাইলে এ প্রতিবেদকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
তিনি বলেন, ‘এ রিপোর্ট আমি মানি না। আমার সব ঠিক আছে। আপনারা পারলে আমার কিছু কইরেন।’
জেলা প্রশাসক মোসা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘বিশেষ নিরীক্ষা কমিটির তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব বরাবর পাঠিয়েছি। আমরা কলেজের অধ্যক্ষ বা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেন। তিনিই বোর্ডের সর্বেসর্বা।’ ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দকার এহসানুল কবিরের সঙ্গে তার অফিসিয়াল মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
ঊষার আলো-এসএ