ঊষার আলো রিপোর্ট : তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গাবাসী। শীতে বিপর্যস্ত চুয়াডাঙ্গা জনপদের মানুষের জীবনযাত্রা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের দেখা মিললেও শৈত্যপ্রবাহের কারণে এখনো কমেনি শীতের দাপট। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা সারাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এছাড়া চলতি মৌসুমে এটি এই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
তীব্র শীতে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। ফলে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েছেন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো। ভোর থেকেই এলাকার বিভিন্ন মোড়ে ও চায়ের দোকানে শীত নিবারণের চেষ্টায় আগুন জ্বালিয়ে উত্তাপ নিতে দেখা গেছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে।
এদিকে তীব্র শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা হাসপাতালে ভিড় করছে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে। গত তিনদিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশুসহ প্রায় ১৫শ রোগী ঠান্ডাজনিত কারণে আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলা ও আলুক্ষেত রক্ষায় বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ধানের বীজতলা রক্ষায় সকালে চারার ওপর থেকে শিশির সরিয়ে দেওয়া, সম্ভব হলে চারা রাতের বেলা ঢেকে দেওয়া, বীজতলায় সেচ দিয়ে পরদিন সকালে পানি বের করে দেওয়া এবং বীজতলা লাল হলে জিপসাম ও ইউরিয়া সার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আলুক্ষেতে আগাম ধসা ও নাবিধসা ছত্রাক যাতে না লাগে, সে জন্য ছত্রাকনাশক স্প্রে দিতে বলা হয়েছে। এজন্য মাঠপর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুভাস চন্দ্র সাহা।
তীব্র শীতে শিশু শিক্ষার্থীরা বেশ কষ্ট পাচ্ছে। প্রাইভেট পড়তে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থীরা বলেন, ভোরে প্রাইভেটে যেতে ৬/৭ দিন যাবত খুব কষ্ট হচ্ছে। কারণ আগে ভ্যান কিংবা ইজিবাইকে যাতাযাত করতাম, এখন যাওয়া যাচ্ছে না। প্রচন্ড শীত সঙ্গে হিমেল বাসাতে হাত-পা বরফ হয়ে যাচ্ছে। তাই এই কদিন পায়ে হেটেই যেতে হচ্ছে। এতে শরীরটাও একটু গরম হয়।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি ভিক্টোরিয়া জুবিলি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিলাল হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ে সকালের শিফট শীতের কারণে সাড়ে ৭টা থেকে সোয়া ৮টায় করা হয়েছে। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত হলেও ওপরের শ্রেণিতে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি।
কয়েকজন অভিভাবক বলেন, তীব্র শীতে বাচ্চারা উঠতে চাইছে না। আমরাও জোর করতে পারছি না। এই জন্যেই মাঝে মধ্যেই স্কুলে যেতে দেরি হচ্ছে বাচ্চাদের।বৃহস্পতিবার ভোরে চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারে কাজের সন্ধানে আসা কয়েকজন দিনমজুর জানান, তীব্র শীতে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। যেন বরফ পড়ছে। মনে হচ্ছে একটা আস্ত ফ্রিজের মধ্যে রয়েছি। তারপরও থেমে নেই কাজ। বাধ্য হয়েই কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। শীতে কাজ না পেয়ে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে অনেকেরই।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আতাউর রহমান বলেন, তীব্র শীতে রোটাভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেশিরভাগই শিশু রোগী। শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালের আউটডোরে তিন থেকে চার শতাধিক বয়োবৃদ্ধরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত তিনদিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশুসহ প্রায় ১৫শ রোগী ঠান্ডাজনিত কারণে আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রকিবুল হাসান বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৭ শতাংশ। যা সারাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ মৌসুমে এটিই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত আছে।
ঊষার আলো-এসএ