ঊষার আলো প্রতিবেদক : গোলাপের মতো দুটি ফুটন্ত নিষ্পাপ শিশু মুশফিক আর ছইফা। বড় আদরের নাড়ি চেড়া ধন এ দুটি সন্তানই ছিল যেন গৃহবধূ রাবেয়ার প্রাণ। ছেলে মুশফিক বয়স ৭ বছর। সামনে ভাতের থালা দিলে চুপচাপ বসে খেয়ে নিতে পারে কিন্তু মা রাবেয়ার হাতের মাখানো ভাত মুখে তুলে না দিলে মুশফিকের খিদে যেন মিটি না। আর মেয়ে ছইফা তার তো কথাই নেই ছোট্ট ৩ বছরের শিশু। মুখে ভাত খাইয়ে দেয়া তো দূরের কথা সারাণ মায়ের আঁচল টেনে ধরে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরির আর সারাণ মার কোলে উঠে বসে থাকা এটাই যেন তার কাজ। মুশফিক মধ্যডাঙ্গা হাফিজিয়া মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। যেকোনো অনুষ্ঠান আসলেই বিশেষ করে ঈদের কথা বলতে গেলে নিজের কাছে টাকা না থাকলেও কারো কাছ থেকে ধার দেনা করে অবুঝ এই দুই সন্তানের জন্য নতুন পোশাক কিনতেই হবে। রাবেয়ার বড় ভাই শেখ আজমল জানান, আমার ভাগ্নে-ভাগ্নি দুটি বোনের বড় আদরের। বিশেষ করে ছেলে থেকে মেয়ে কে বোনটি খুব ভালোবাসতো। সব সময় সাজিয়ে গুজিয়ে। আজ ১২ দিনের মাথায় কথাগুলো কেবল স্মৃতি।
আমার মা বাবাসহ আমরা কেউ আর এই অবুঝ দুইটি নিষ্প্রাণ শিশুর দিকে তাকাতে পারছিনা । দুই ভাই বোনে ঘুমের মধ্যে আম্মু কোথায়? আম্মু কোথায়? বলে চিৎকার করে কেঁদে উঠছে। তাদের আর্তনাদ ঠেকাবে কে, আজকে আদর করে মুখে ভাত তুলে দেবে এদের।
উল্লেখ্য, গত ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাত তিনটার দিকে রাবেয়ার স্বামী মাহমুদ (৩৪) একই এলাকার বাসিন্দা মধ্যাডাঙ্গার ফাল্গুনীর মোড়ের বাসিন্দা সুলতানের মেয়ে নাজমিনের পরকীয়ার জের ধরে গলায় রশি দিয়ে মারা যায় গৃহবধূ রাবেয়া। এ ঘটনায় শেখ আজমল বাদী মোঃ মাহমুদ (৩৪) ও তার কথিত প্রেমিকা মোসাঃ নাজমিন (২৫) কে আসামি করে মামলা করে। আসামিদ্বয়কে ইতিমধ্যেই আটকপূর্বক কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মামলার কর্মকর্তা। রাবেয়ার মৃত্যুতে পুরা পরিবারে শোকে পাথর। আর অবুঝ শিশু দুটি সারাক্ষন কান্নায় আর মাকে খুজে বেড়াচ্ছে। এটাই নির্মম সত্য যে ওদের মা আর কোনদিন ফিরে আসবেনা।
তবে এলাকাবাসীর ধারণা, নাজমিনের সাথে পরকীয়ায় জের ধরে উভয়ের জোত সাজোগে হয়তোবা রাবেয়াকে শ্বাসরুদ্ধ করে নিজের দায়মুক্তির জন্য নাটকীয়ভাবে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা হিসাবে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্ঠা করেছে মাহমুদ। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে। আসলেই এটি আত্মহত্যা না হত্যা?