সন্দেহভাজন তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ
সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত অর্ণবের শরীরের ৫ জায়গায় গুলির করার চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া তার শরীরের তিন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা ওই সময় অর্ণবের সাথে ছিলো। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
শনিবার (২৫ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় খুলনা মেট্রোপলিটর পুলিশ (কেএমপি)’র এডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ আহসান হাবীব বলেন, সন্দেহভাজনভাবে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার সময় ওই তিনজন সাথেই ছিলো। তদন্তে স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত নিহত অর্ণব এর পরিবার থেকে কেউ মামলা করতে আসেননি। অর্ণব হত্যাকাণ্ডে রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য মাঠ পর্যায়ে পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে। এ ঘটনায় শনিবার রাত সোয়া ৭টা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানা গেছে, শুক্রবার রাতে রব্বানী নামে এক ছেলে অর্নবকে ডেকে আনে। এছাড়া খালিদ ও সিফাত নামে আরও দুই ছেলে ছিলো। এদেরকে সন্দেহভাজনভাবে আটক করে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, ১০-১৫টি মটরসাইকেল যোগে যুবকরা আলীশান মোড় থেকে বানরগাতীর দিকে যেতে দেখা যায়। পরে ওরাই আবার মধ্যপাড়া থেকে বের হয়ে তেতুলতলা মোড়ে এসে উপস্থিত হয়। ওই সময় অর্ণব মটরসাইকেলে হেলান দিয়ে চা পান করছিলেন। তখন সন্ত্রাসীরা অর্নব এর ওপর গুলি করে। প্রথম গুলিতে অর্ণব পড়ে যায়। তার কয়েকজন মিলে তার ওপর ধারালো ছুড়ি দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্টেপ করে। পরে আবার কয়েক রাউন্ডগুলি করে তারা পালিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে উদ্ধার করে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
একটি গোয়েন্দার সূত্র মতে, অর্ণবের শরীরের ৫ জায়গায় গুলি লাগে। এর মধ্যে ডান গালে, বাম ঘারে, কানের ওপর, বান পায়ের গোড়ালীতে, বাম পায়ে রানে গুলির চিহৃ পাওয়া যায়। এছাড়া পিঠের উপরে নিচে, ডান হাতের কেনুর ওপর এবং ডান হাটুতে দেশীয় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহৃ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, অর্ণবদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগর গ্রামে। তাঁর বাবা নীতীশ চন্দ্র সরকার একজন ঠিকাদার। তাঁরা ১৫ বছর ধরে খুলনা নগরের বানরগাতি ইসলাম কমিশনারের মোড় এলাকার করতোয়া লেনে বাড়ি করে বসবাস করছেন। ওই লেনের একেবারে শেষ বাড়িটি তাঁদের। অর্ণবের লাশ শনিবার দুপুরে বাড়িতে পৌঁছায়। দুপুর ১২টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। লাশ বাড়িতে নিয়ে ঘণ্টাখানেক রেখে সৎকারের জন্য শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। ছেলের খুন হওয়ার কথা জানানো হয়নি অর্ণবের মাকে, তাঁকে বলা হয়েছে, অর্ণব মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তাঁর আহাজারি থামছেই না।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, অর্ণবের শরীরে বেশ কয়েকটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি পিস্তলের গুলি ও একটি শটগানের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। ওসি বলেন, বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অর্ণবের বাবা ঠিকাদার ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সেই ব্যবসা দেখাশোনা করতেন অর্ণব। এটা নিয়ে কোনো পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি নারীঘটিত কোনো ঘটনা বা অন্য কোনো দ্বন্দ্ব ছিল কি না, সে ব্যাপারগুলো তদন্তে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
অর্ণবের মা দীপিকা সরকার বারবার বিলাপ করতে করতে বলছেন, ‘বাবা তুই কেন মোটরসাইকেল নিয়ে বের হলি!’ তিনি আরও বলেন, ‘বিকেল পাঁচটার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছিল অর্ণব। কয়েকটি স্থানে ওর বাবার ঠিকাদারির কাজ চলছে। সেই কাজ দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ করে জানতে পারি, অর্ণব মোটরসাইকেল অ্যাক্সিডেন্ট করেছে।’
অর্ণবরা দুই ভাই। বড় অর্ণব। ছোট ভাই অনিক কুমার সরকার এবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ছিল। কিন্তু বড় ভাই মারা যাওয়ায় তাঁর আর পরীক্ষা দিতে যাওয়া হয়নি।
অর্ণবদের প্রতিবেশীরা জানায়, অর্ণব খুবই ভদ্র ছেলে। এলাকায় কারও সঙ্গে তাঁকে কোনো খারাপ আচরণ করতে দেখা যায়নি। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার ব্যবসা দেখতেন। হঠাৎ অর্ণবের খুন হওয়ার খবর শুনে এলাকার সবাই হতবাক হয়েছেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে খুলনা মহানগরীর শেখপাড়া তেতুলতলা মোড় এলাকায় একটি মোটরসাইকেল হেলান দিয়ে চা পান করছিলেন। এ সময় ১০-১৫টি মটরসাইকেলে সশস্ত্র লোকজন এসে অর্নবকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এ সময় স্থাণীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।