UsharAlo logo
শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান

usharalodesk
জুন ৭, ২০২৩ ১:০৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : প্রধান শিক্ষক, চিড়িয়াখানা-বোটানিক্যাল গার্ডেন উচ্চবিদ্যালয়, মিরপুর, ঢাকা

প্রশ্ন : জীবের কেন পানি প্রয়োজন?

উত্তর : জীব বলতে উদ্ভিদ ও প্রাণীকে বোঝায়। প্রত্যেক জীবের বেঁচে থাকার জন্য পানি প্রয়োজন।

উদ্ভিদ : * উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য পানি প্রয়োজন। * উদ্ভিদের দেহের প্রায় ৯০ ভাগই পানি। * উদ্ভিদ খাদ্য তৈরিতে পানি ব্যবহার করে। * মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করতে পানি প্রয়োজন। * সংগৃহীত পুষ্টি উপাদান ও তৈরিকৃত খাদ্য উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে পরিবহণ করতে উদ্ভিদের পানি প্রয়োজন। * পানি ছাড়া উদ্ভিদ মাটি থেকে খনিজ উপাদান শোষণ করতে পারে না। * প্রচণ্ড গরমে পানি উদ্ভিদের দেহ শীতল করতে সাহায্য করে।

প্রাণী : * বেঁচে থাকার জন্য প্রাণীদেরও পানি প্রয়োজন।

* মানবদেহের গঠন উপাদানের মধ্যে ৬০-৭০ ভাগ পানি। * অধিকাংশ পানি পান না করে অল্প কিছু দিন বাঁচতে পারে মাত্র। * দেহের বিভিন্ন অংশে পুষ্টি উপাদান পরিবহণে সাহায্য করে। * খাদ্য হজমে বা পরিপাকে পানি প্রয়োজন। * দেহে পুষ্টি উপাদান শোষণে পানি প্রয়োজন। * প্রাণী দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে পানি প্রয়োজন।

* প্রাণীরা তৃষ্ণা নিবারণে পানি ব্যবহার করে।

মোট কথা, জীবের বেঁচে থাকাসহ নানা জৈবিক কাজে পানির কোনো বিকল্প নেই। তাই পানির অপর নাম জীবন।

প্রশ্ন : বাতাসে যে জলীয়বাষ্প আছে তা কীভাবে বোঝা যায়? বাতাসে পানি আছে তা আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি?

উত্তর : পরীক্ষার নাম : বাতাসে পানি জলীয়বাষ্প আছে তা পরীক্ষার সাহায্যে দেখাতে হবে।

মূলনীতি : জলীয়বাষ্প হলো পানির বায়বীয় অবস্থা। জলীয়বাষ্প ঠান্ডা পেলে জমে পানি অর্থাৎ তরল পদার্থে পরিণত হয়।

উপকরণ : * একটি গ্লাস * কয়েক টুকরা বরফ

* একটি সুতির কাপড়

কার্যধারা : প্রথমে একটি গ্লাসে কয়েক টুকরা বরফ রাখা হলো।

পর্যবেক্ষণ : * ১৫/২০ মিনিট লক্ষ করলে দেখা যাবে, গ্লাসের গায়ে বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে। বাতাসের জলীয়বাষ্প গ্লাসের গায়ে লেগে ঠান্ডা হয়। বাষ্প ঠান্ডা পেলে পানিকণায় পরিণত হয়। * সুতির কাপড় দিয়ে গ্লাসটির চারদিক মুছে দেওয়া হলো। লক্ষ করলে দেখা যাবে, গ্লাসটির বাইরে আবারও একই কারণে পানি জমা হয়েছে।

ফলাফল : ওপরের পরীক্ষা থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, বাতাসে পানি (জলীয়বাষ্প) আছে।

প্রশ্ন : পুকুরের পানিকে জীবাণুমুক্ত করতে হলে কীভাবে শোধন করতে হবে? পুকুরের পানি থেকে আমরা কীভাবে নিরাপদ পানি পেতে পারি?

উত্তর : পানি শোধন : সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের নিরাপদ পানি পান ও ব্যবহার করতে হবে। তাই নদীর পানিকে পান বা ব্যবহার করার আগে শোধন করে নিতে হয়। বিভিন্ন উপায়ে পানিকে শোধন করা যায়। নিচে এ উপায়গুলো বর্ণনা করা হলো।

ছাঁকন : পুকুর, খাল-বিল ও নদীর পানিতে কাদা ও ময়লা মিশে থাকে। পাতলা কাপড় বা ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে এ পানি পরিষ্কার করা যায়। তবে পরিষ্কার হলেও এভাবে পানি জীবাণুমুক্ত হয় না। আজকাল শহরের অনেক বাড়িতে উন্নতমানের ছাঁকনযন্ত্র বা ফিল্টার রয়েছে। এ ধরনের ফিল্টার দ্বারা পানিকে বেশিরভাগ জীবাণু থেকে মুক্ত করা যায়। তবে কোনো কোনো জীবাণু রয়ে যেতে পারে। পানিকে পুরোপুরি নিরাপদ করতে হলে পানিকে ফুটাতে হবে।

থিতানো : নদী বা পুকুরের পানি কোনো কলস বা পাত্রে রেখে দিতে হবে। দেখবে পাত্রের তলায় তলানি জমেছে। এতে করে ওপরের অংশের পানি পরিষ্কার হয়ে গেছে। তলানি জমে যাওয়ার পর কলস বা পাত্রটি অল্প কাত করে ওপরের পানি ঢেলে নাও। এভাবে পরিষ্কার পানি আলাদা করার পদ্ধতিকে থিতানো বলে। পাত্রের পানিতে অল্প ফিটকিরি দিলে তাড়াতাড়ি তলানি জমে এবং পানি কিছুটা জীবাণুমুক্ত হয়।

ফুটানো : পুকুর, নদী বা ট্যাপের পানি সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করতে চাইলে পানিকে ফুটাতে হবে। পানি ফুটতে শুরু করার পর আরও ২০ মিনিট তাপ দিলে পানিতে থাকা জীবাণু মারা যায়। এরপর পানি ঠান্ডা করে ছেঁকে নিলে তা পান করার জন্য নিরাপদ হয়।

রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে পানি বিশুদ্ধকরণ : অনেক সময় বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসের কারণে পানি ফুটানো সম্ভব হয় না। তখন ফিটকিরি, ব্লিচিং পাউডার, হ্যালোজেন ট্যাবলেট ইত্যাদি পরিমাণমতো মিশিয়ে পানিকে জীবাণুমুক্ত করা হয়।

সুতরাং, উপরের পদ্ধতিতে আমরা পুকুরের পানি থেকে নিরাপদ পানি পেতে পারি।

প্রশ্ন : ঠান্ডা পানির গ্লাসের গায়ে লেগে থাকা পানির কণা এবং শিশির কেন একই রকম?

উত্তর : রাতে ঘাস, গাছপালা ইত্যাদির ওপর যে বিন্দু বিন্দু পানি জমে তাকে শিশির বলে। বায়ু যখন ঠান্ডা কোনো বস্তুর সংস্পর্শে আসে, তখন বায়ুতে থাকা জলীয়বাষ্প ঠান্ডা হয়ে পানির ফোঁটা হিসাবে জমা হয়। বাতাসের জলীয়বাষ্প ঠান্ডা হয়ে পানিতে পরিণত হয়। বাষ্প থেকে তরলে পরিণত হওয়াকে ঘনীভবন বলে। শীতকালে পরিবেশের তাপমাত্রা গরমকালের চেয়ে কম থাকে। রাতে শীতল বা কম তাপমাত্রার কারণে বাতাসের জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় শিশির হিসাবে পানি কণায় পরিণত হয়।

অপরদিকে গ্লাসে বরফ রাখলে গ্লাসটি বরফের সংস্পর্শে ঠান্ডা হয়। এ ঠান্ডা গ্লাসের সংস্পর্শে বাতাসের জলীয়বাষ্প এলে তাও শিশিরের মতো ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় ঘনীভূত হয়ে পানি কণায় পরিণত হয়। পানি কণা দ্বারা গ্লাসটি ভিজে যায়।

সুতরাং, ঠান্ডা পানির গ্লাসের গায়ে লেগে থাকা পানির কণা এবং শিশির কণা উভয়েই ঘনীভবনের ফলে বাতাসের জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে পানি কণায় পরিণত হয়েছে। শিশির এবং ঠান্ডা গ্লাসের বাইরের পানি কণা উভয়েই বাতাসের জলীয়বাষ্প। তাই এরা একই রকম।

ঊষার আলো-এসএ