UsharAlo logo
শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পাঁচজনের অবৈধ নিয়োগ বৈধ করলেন উপাচার্য

usharalodesk
ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪ ১২:৫০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট: সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের সব অবৈধ কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিতে শুরু করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক জামাল উদ্দিন ভূইয়া। ২০১৫ সালে নিজে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হয়ে বোনের ছেলেকে একটি প্রকল্পে নিয়োগ দেন তিনি। শুধু তিনিই নন, সেই বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম তার ছেলেকেও এ প্রকল্পে নিয়োগ দেন। যদিও সেসময় এ নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ সমালোচনাও হয় ক্যাম্পাসজুড়ে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালে। শর্ত অনুযায়ী তাদের আর চাকরি থাকার কথা নয়। বেতনভাতাও বন্ধ হয়ে যায় ৫ বছর আগেই। এরপর দুজন উপাচার্য তাদের চাকরির মেয়াদ বাড়াননি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্তীকরণের চেষ্টাও করেননি। ২০২২ সালে উপাচার্য হিসাবে যোগদান করেন অধ্যাপক জামাল উদ্দিন ভূইয়া। তার পরই তিনি সরকারি চাকরি বিধিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোনো ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছাড়াই তার ভাগিনাসহ ৫ জনের নিয়োগ সিন্ডিকেটে তুলে চূড়ান্ত করে নেন।

এসব বিষয়ে উপাচার্য জামাল উদ্দিন ভূইয়া জানান, এসব প্রকল্পে সাধারণত স্বজনদেরই নিয়োগ দেওয়া হয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও তাই ঘটছে। কিন্তু সরকারি নীতিমালা কেন মানেননি-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আদেশ দিয়েছেন, সেই আদেশ বলেই কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়া ছাড়াই তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ফেরদৌস জামান জানান, প্রকল্পের কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্তীকরণ করতে হলে প্রথমে তাদের অস্থায়ী চাকরির মেয়াদ ৬ মাস করে বাড়াতে পারেন উপাচার্য এবং এর মধ্যেই সরকারি চাকরি নীতিমালা অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জামিলুর রহমান বলছেন, মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সরাসরি আত্তীকরণ অবৈধ।

অনুসন্ধানে নিয়োগ সংক্রান্ত নথিপত্র থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধীনে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স সেল (আইকিউএসি)’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য শুধু প্রকল্প চলাকালীনের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৫ সালে। ওই বছরের ১৪ আগস্ট ৫টি পদে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। যেখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ২২ আগস্ট সকালে প্রকল্পটির পরিচালক অধ্যাপক নজরুল ইসলামের কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, এ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার ক্ষেত্রেও কোনো প্রশাসনিক অনুমোদন নেননি প্রকল্প পরিচালক। ২০১৫ সালের ২২ আগস্ট নিয়োগ পরীক্ষার কাগজপত্রে দেখানো হয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসাবে ১৪ জন, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসাবে ৬ জন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসাবে ৭ জন, রেকর্ডকিপার হিসাবে ১২ জন এবং এমএলএসএস হিসাবে ৪ জন হাজির হন। মৌখিক পরীক্ষা শেষে যাদের নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করা হয়, তাদের মধ্যে প্রকল্পের পরিচালক ও নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলামের ছেলে রফিকুল ইসলামকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক জামাল উদ্দিন ভূইয়া তার বোনের ছেলে আব্দুল রকিব রাব্বুকে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, আরও একজন শিক্ষকের আত্মীয়সহ পাঁচটি পদে অস্থায়ী নিয়োগ দেন। পরীক্ষার পরদিন ২৩ আগস্ট সবাইকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন। ২০১৮ সালের জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়। চুক্তি অনুযায়ী তাদের চাকরিও শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্প শেষ হওয়ায় তাদের বেতনভাতাও বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই পরিচালক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম নিজের ছেলেসহ ৫ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্তীকরণের জন্য চিঠি চালাচালি শুরু করেন। একটি কমিটিও হয়। সেই কমিটির সদস্যসচিব হয়ে যান বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক জামাল উদ্দিন ভূইয়া। কমিটির আলোচ্যসূচি ছিল এই প্রকল্পকে জনবলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্থায়ী অঙ্গ হিসাবে অন্তর্ভুক্তকরণ। কিন্তু ২০১৯ সালের শুরুতে প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব খাতে নেওয়া হলেও আগে যোগদান করা অস্থায়ী কর্মকর্তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সে বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি আইকিউএসি দপ্তরে সেকশন অফিসার, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, অফিস সহকারী ও সাপোর্ট স্টাফের জন্য জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মতিয়ার রহমান হাওলাদার। সেই বিজ্ঞপ্তিতে নাকি মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া অস্থায়ী ৫ জনও আবেদন করেন। এ বিষয়ে সাবেক উপাচার্য মতিয়ার রহমান হাওলাদার বলেন, ওই প্রকল্পে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের জুনে। তিনি উপাচার্য হিসাবে যোগদান করেছেন সেপ্টেম্বরে। তার আগে যিনি উপাচার্য ছিলেন, তিনিও তাদের বেতনভাতা দিতে পারেননি। প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব খাতে নেওয়ার পর তিনি চেষ্টা করেছিলেন সরকারি বিধিমালা মেনে নতুন করে বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছিলেন; কিন্তু নিয়োগ দিতে পারেননি। পরপর দুই উপাচার্য যে অবৈধ কাজটি করতে পারেননি, তা করে দেখিয়েছেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক জামাল উদ্দিন ভূইয়া। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ৫ বছর আগে চাকরি শেষ হওয়ার পরও নিজের বোনের ছেলেসহ ৫ জনকে গত বছরের ১৮ জুন ৪২তম সিন্ডিকেটে তুলে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সরাসরি আত্তীকরণ করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকল্পের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এ নিয়োগের বৈধতা নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জামিলুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, যদি প্রকল্পের মেয়াদ আগেই শেষ হয়ে থাকে তবে তা আত্তীকরণের সুযোগ নেই। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় উল্লেখ করলে তিনি বলেন, সেখানে প্রকল্পের মেয়াদ থাকাকালীন আত্তীকরণ করা হয়েছে, সেটা বৈধ। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হয়েছে, তা তারা খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।

ঊষার আলো-এসএ