যশোর প্রতিনিধি : ভারত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে গত ২৬ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত ভারত থেকে ফিরেছেন ২ হাজার ৪৭৫ জন বাংলাদেশি যাত্রী। এদের মধ্যে ১৩ জন ছিল করোনা পজিটিভ। আক্রান্তরা ভারতে গিয়ে সংক্রমণের শিকার হয়।
করোনা পজিটিভ যাত্রীদের যশোর সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের রেড জোনে রাখা হয়েছে। শনিবার (৮ মে) যশোরের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার ইউছুফ আলী এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে চিকিৎসা শেষে ভারত ফেরত অসহায় যাত্রীদের ভোগান্তি ও অর্থ খরচ কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন যশোরের শার্শা উপজেলা প্রশাসনের করোনা প্রতিরোধ কমিটি।
জটিল রোগে আক্রান্তদের হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাসহ যানবাহন ও হোটেল খরচ সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। হোটেল ভাড়া অর্ধেক নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে হোটেল মালিকদের। ইমিগ্রেশনে দালাল শ্রেণির বহিরাগতদের প্রবেশ রোধেও জারি করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। সকালে বেনাপোল বন্দরের প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ও ইমিগ্রেশন ভবনে সাঁটানো যাত্রী সুবিধার এমন নোটিশ চোখে পড়ে।
শার্শা উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর আলীফ রেজা জানান, ভারত ফেরত যাত্রীরা যাতে কোন ভাবে দালাল শ্রেণির মানুষের দ্বারা হয়রানির শিকার না হয় এ জন্য ইমিগ্রেশন ও বন্দরের প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের একাধিক জায়গায় বিভিন্ন সতর্কবার্তা দিয়ে ব্যানার দেয়া হয়েছে। এছাড়া জটিল রোগে আক্রান্ত যাত্রীদের সাথে থাকা কাগজ পত্র পরীক্ষা করে হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার বিচিত্র মল্লিক জানান, গতকাল ভারত থেকে ৩১৮ জন ফিরেছেন। এর মধ্যে ৫ জন ছিল করোনা পজিটিভ। এরা ভারতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হন। আক্রান্ত যাত্রীদের যশোর সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের রেড জোনে ও সাধারণ যাত্রীদের যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন আবাসিক হোটেল এবং জটিল রোগে আক্রান্তদের ১৪ দিন হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন খরচ গত বছর সরকার বহন করলেও এবার যাত্রীদের নিজেদের ব্যয় করতে হচ্ছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব জানান, ভারতের করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট রোধে বাংলাদেশ সরকার গত ২৬ এপ্রিল থেকে ১৪ দিনের ভ্রমণ সীমান্ত পথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর মধ্যে নতুন করে কোন পাসপোটধারী যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করেনি। তবে নিষেধাজ্ঞার আগে যারা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আটকা পড়েছিল তারা ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ছাড়পত্র নিয়ে দেশে ফিরছেন।
ভারত ফেরত যাত্রী জহিরুল ইসলাম জানান, যাত্রীদের ভোগান্তি ও হয়রানি রোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাতে অনেকটা তারা উপকৃত হবেন। চলমান ক্রান্তিকাল সময়ে এ নির্দেশনা বহাল রাখার আহ্বান জানান যাত্রীরা।
এদিকে বেনাপোল চেকপোস্টের বিপরীতে পেট্রাপোল স্থলবন্দরে বাণিজ্য-সংক্রান্ত কাজে মানা হচ্ছে না করোনা-বিধি, এমনটাই অভিযোগ করলেন ক্লিয়ারিং এজেন্টরা। এ বিষয়ে পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
সংগঠনের সাধারন সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে পেট্রাপোল বন্দরে করোনা-বিধি মেনে বাণিজ্য-সংক্রান্ত কাজ চলছিল। কিন্তু এখন সংক্রমণ বাড়লেও বন্দর এলাকা স্যানিটাইজার করা হচ্ছে না। ট্রাকের চালক-খালাসিদের কোভিড পরীক্ষা হচ্ছে না। মাস্ক-স্যানিটাইজার বিলি কিছুই করা হচ্ছে না। এর ফলে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ক্লিয়ারিং এজেন্টদের দাবি, সংক্রমণের আশঙ্কা নিয়েও তাঁরা সামনে থেকে বাণিজ্যের কাজ করছেন। সরকারি আধিকারিকদের প্রতিষেধক দেয়ার ব্যবস্থা করা হলেও তাঁদের প্রতিষেধক দেয়ার ব্যবস্থা হয়নি। কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, গত বছর সিডাব্লুসি কর্তৃপক্ষ বন্দর এলাকায় স্যানিটাইজ করতেন। এ বার তাঁদের হাতে দায়িত্ব নেই। ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি এখন নিজেরাই দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু স্যানিটাইজার করা হচ্ছে না।
দৈনিক ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত পণ্য-বোঝাই ট্রাক নিয়ে বন্দরে আসেন চালক-খালাসিরা। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। নেই পিপিই। কেউ কেউ একই পিপিই একাধিকবার ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ।
অন্যদিকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বাইরে থেকে পেট্রাপোল বন্দরে আপাতত ট্রাক আসা বন্ধ করার দাবি তুলে ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মেন্টর গোপাল শেঠ মুখ্য সচিব-সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। গোপাল শেঠ বলেন, বনগাঁর করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। অবিলম্বে বাইরের ট্রাক ঢোকা বন্ধ করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেবে। ইতিমধ্যেই চলে আসা ট্রাকগুলি দ্রুত খালি করে ফেরত পাঠানোরও আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
(ঊষার আলো-এমএনএস)