UsharAlo logo
শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী আর নেই

pial
মে ১৯, ২০২২ ২:৫৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো ডেস্ক : কালজয়ী একুশে গানের রচিয়তা, প্রখ্যাত সাংবাদিক এবং সাহিত্যিক আবদুল গাফফার চৌধুরী (৮৮) আর নেই। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ খবরটি নিশ্চিত করেছেন আবদুল গাফফার চৌধুরীর কেয়ারার জাহানরা ঝর্ণা। দীর্ঘদিন ধরেই দুরারোগ্য কিডনি জনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি।

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুৃশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ অমর গানের শ্রষ্টা আব্দুল গাফফার চৌধুরী। তিনি আমৃত্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়ম কলাম লিখেছেন। তিনি ছিলেন কিংবদন্তী সাংবাদিক।

দীর্ঘদিন ধরেই নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল হাসপাতালে থাকা অবস্থায় মারা যান তাঁর মেয়ে বিনীতা চৌধুরী। এর পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি।

১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়ার চৌধুরীবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তার বাবা হাজী ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা জহুরা খাতুন। ১৯৫০ সালে গাফ্ফার চৌধুরী পরিপূর্ণভাবে কর্মজীবন শুরু করেন। এ সময় তিনি ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। মহিউদ্দিন আহমদ ও কাজী আফসার উদ্দিন আহমদ তখন ‘দৈনিক ইনসাফ’ পরিচালনা করতেন। ১৯৫১ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’ প্রকাশ হলে গাফ্ফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। এরপর তিনি বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন।
মাসিক সওগাত, দিলরুবা, মেঘনা, ইত্তেফাক, আজাদ, জেহাদ, পূর্বদেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছেন। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয় বাংলায় লেখালেখি করেন। এ সময় তিনি কলকাতায় দৈনিক আনন্দবাজার ও যুগান্তর পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক জনপদ বের করেন।
১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে যান। দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে সুস্থ না হওয়ায় তাকে নিয়ে ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে লন্ডনে যান। এরপর তার প্রবাসজীবনের ইতিহাস শুরু হয়।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘সম্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশী’সহ তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৩০। এ ছাড়া তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটকও লিখেছেন। এর মধ্যে আছে ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’, ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’।

কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গাফ্ফার চৌধুরী। ১৯৬৩ সালে ইউনেসকো পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ আরো অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তারা প্রয়াত আবদুল গাফফার চৌধুরীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন ও তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

(ঊষার আলো-এসএইস)