UsharAlo logo
সোমবার, ১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রলঙ্ককারী সিডরের ১৫ বছর, ক্ষত মোছেনি এখনও

koushikkln
নভেম্বর ১৫, ২০২২ ১২:১২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : ১৫ নভেম্বর ২০০৭। এদিন বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় সিডর। আঘাতের সময় সিডরের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। তবে এ সময় দমকা হাওয়ার বেগ উঠছিল ঘণ্টায় ৩০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। সিডরের প্রভাবে উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ¡াসের সৃষ্টি হয়। সিডরে খুলনা অঞ্চলে সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হয় বাগেরহাটের শরণখোলা। গোটা এলাকা এদিন লÐভÐ হয়ে যায়।
২০০৭ সালের ১৩ নভেম্বর থেকেই সারা দেশের আকাশ ছিল মেঘলা। আবহাওয়া অফিস প্রথমে ৫ নম্বর সংকেত দেয়। ১৪ নভেম্বর রাতে তা ৮ নম্বর বিপৎসংকেতে গিয়ে পৌঁছায়। অর্থাৎ বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটারের বদলে ৮৯ কিলোমিটার বা তার বেশি হতে পারে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

১৫ নভেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের গতি বাড়তে থাকে। রাত ৯টার দিকে সিডর প্রথম আঘাত হানে সুন্দরবনের কাছে দুবলারচরে। এরপর বরগুনার পাথরঘাটায় বলেশ্বর নদের কাছে উপকূল অতিক্রম করে। সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চল। ধ্বংসযজ্ঞ চলে বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর, ঝালকাঠিসহ দেশের প্রায় ৩১টি জেলায়।
সিডরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হিসেবে চিহ্নিত হয় বাগেরহাট আর বরগুনা। সরকারি হিসাবে বাগেরহাট জেলায় নিহত হন ৯০৮ জন ও আহত হন ১১ হাজার ৪২৮ জন। বরগুনা জেলায় মারা যান ১ হাজার ৩৪৫ জন। নিখোঁজ ছিলেন ১৫৬ জন।

সিডর আক্রান্ত এলাকায় জায়গার অভাবে গণকবর দিতে হয়। অনেক লাশের কোনো পরিচয়ও পাওয়া যায়নি। কাপড়ের অভাবে অনেক মরদেহ পলিথিনে মুড়িয়ে দাফন করা হয়। ঘটনার এক মাস পরেও ধানখেত, নদীর চর, বেড়িবাঁধ, গাছের গোড়া আর জঙ্গলের নানা আনাচকানাচ থেকে লাশ, লাশের অংশবিশেষ অথবা কঙ্কাল উদ্ধার হয়। কেউ কেউ সিডর আঘাত হানার অনেক দিন পর স্বজনদের কাছে ফিরেও আসেন। স্মৃতি হারিয়ে অনেকেই আর গ্রামের বাড়ি খুঁজে পাননি। ফিরতে পারেননি।

সরকারি হিসাবে সিডরে এক হাজার একজনের নিখোঁজের কথা বলা হয়েছিল। তবে প্রকৃত নিখোঁজের সংখ্যা এর দ্বিগুণ বা তার বেশি হতে পারে বলে উপকূলবাসী তখন ধারণা করেছিল। লাশ পাওয়া না গেলে ব্যক্তি আইনের চোখে নিহত হিসেবে গণ্য হন না। খয়রাতি ক্ষতিপূরণের হকদার হতে পারে না তাঁর পরিবার। নিখোঁজ জলদাসদের স্ত্রীরা শাঁখা হাতে বিধবা বধূর জীবন যাপন করেন। পাথরঘাটার লাশ না পাওয়া ৪৬ জন জেলেকে শেষ পর্যন্ত আর মৃত ঘোষণা করা হয়নি। আজ পর্যন্ত তাঁদের কেউ ফিরেও আসেননি।

মঙ্গলবার খুলনাসহ উপক‚লীয় এলাকায় পালিত হবে সিডরের ১৫তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন স্মরণসভা, দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।