UsharAlo logo
শুক্রবার, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রার্থী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশনা ইসির

usharalodesk
ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩ ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আচরণ বিধিমালার গুরুতর লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত প্রার্থী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার পর্র্যন্ত অন্তত তিন প্রার্থী ও এক প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। যাদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম-ঝিনাইদহ-১ আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আব্দুল হাই এবং ওই জেলার শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম।
আরও রয়েছেন চট্টগ্রাম-১৬ আসনের সরকারদলীয় সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এছাড়া খুলনা-৩ আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী এসএম কামালের সমর্থক জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আজগর বিশ্বাস তারা। তবে আচরণবিধির সাধারণ লঙ্ঘনের ঘটনায় সতর্ক করছে নির্বাচন কমিশন। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ-২ এর একাধিক কর্মকর্তা জানান, যাদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাদের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। ইতোমধ্যে ইসির নির্দেশনায় করা মামলায় নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন জেলে রয়েছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় বরগুনা-১ আসনের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও তার সমর্থক আমতলী পৌরসভার মেয়র মো. মতিয়ার রহমানকে ইসিতে তলব করা হতে পারে।

জানা গেছে, নির্বাচনে আচরণ বিধিমালা প্রতিপালনের ওপর জোর দিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। ওই নির্দেশনায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করে আচরণ বিধিমালা ভঙ্গের পরিণাম ও শাস্তি সম্পর্কে বার্তা দেওয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বলার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা যাতে আচরণবিধি মেনে চলতে বাধ্য হন, সেজন্য ভিজিল্যান্স টিম, অবজারভেশন টিম, মনিটরিং টিম ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সেলকে সক্রিয় থাকার নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে। দুই-একদিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানোর কথা রয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচন কমিশন আচরণ বিধিমালা প্রতিপালনে সবাইকে সচেতন করছে। সবাই যাতে আচরণ বিধিমালা মেনে প্রচার চালান সেজন্য বারবার বার্তা দেওয়া হচ্ছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গতকাল সোমবার থেকে শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। মূলত প্রচারণার সময়ে আচরণবিধির লঙ্ঘন বেশি হয়ে থাকে। যদিও তফশিল ঘোষণার পর থেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আসছেন বিভিন্ন আসনের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনায় সোমবার পর্র্যন্ত দেড় শতাধিক প্রার্থীকে শোকজ করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। ওই সব ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সতর্ক করার সুপারিশ করা হয়েছে। গুরুতর অভিযোগের কয়েকটি ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে কমিটি। প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে।

জানা গেছে, কমিশন যাদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশনা দিয়েছে তাদের একজন হলেন-চট্টগ্রাম-১৬ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও ওই আসনের সংসদ-সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এ প্রার্থী গত ৩০ নভেম্বর বিশাল শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। সেখানে বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিকদের গালিগালাজ ও মারধর করে মাটিতে ফেলে দেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন।
ওই ঘটনা আচরণ বিধিমালার ৮ (খ) বিধির লংঘন হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে উপজেলা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আব্দুল হাই ও তার সমর্থক শৈলকুপা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিমের বিরুদ্ধে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগে জুডিশিয়াল আদালতে মামলা করতে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ১০ ডিসেম্বর শৈলকুপা থানার ১৪ নম্বর দুধসর ইউনিয়নের ভাটই বাজারে আব্দুল হাই ও তার অনুসারীরা দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মহাসড়কে মহড়া দেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া ১২ ডিসেম্বর আব্দুল হাইর অনুসারীরা কাতলাগাড়ী বাজারে মোটরসাইকেল মিছিল ও জনসমাবেশ করেন। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি এজেন্টদের হুমকি দেওয়া হয়।

সিলেট-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পদ থেকে প্রার্থিতা বাতিল হওয়া মো. মোশাহিদ আলীর বিরুদ্ধেও মামলা করতে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ওই প্রার্থী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করে নির্বাচনি এলাকায় পোস্টার-ব্যানার সাঁটিয়েছিল। ওই ঘটনায় তাকে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি শোকজ করলেও এর ব্যাখ্যা দেননি তিনি।

খুলনা-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসএম কামালের অনুসারী আজগর বিশ্বাস তারা’র বিরুদ্ধে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনায় মামলা করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। ওই ব্যক্তি প্রার্থীর পক্ষে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করে প্রচার চালিয়েছেন।

এছাড়া আরও কয়েক প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধেও আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের তথ্য রয়েছে ইসিতে। ক্রমান্বয়ে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বরিশালের মেয়রের আচরণবিধি লঙ্ঘন : জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর (খোকন সেরনিয়াবাত) বিরুদ্ধে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে বরিশাল-৫ আসনের নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। তার একটি বক্তব্যের ভিডিওতে ওই আসনের সরকারদলীয় প্রার্থী পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের পক্ষে প্রচার চালানোর অভিযোগ করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনে তাকে কঠোরভাবে সতর্ক করার সুপারিশ করা হয়েছে।

ঊষার আলো-এসএ