মোঃ মেহেদী হাসান, মণিরামপুর : যশোরের মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে আগত রোগীরা প্রয়োজনীয় সব ওষুধ পাচ্ছেন না। দূরদূরান্ত থেকে সেবা নিতে এসে রোগীদের ফিরতে হচ্ছে ওষুধ বাদে। রোগীরা ডাক্তার দেখিয়ে স্লিপ নিয়ে ফার্মেসীতে গেলে ওষুধ নেই বলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের ভর্তি ও বহির্বিভাগে মিলছে না প্রয়োজনীয় সব ওষুধ। ফলে ভোগান্তি তে পড়তে হচ্ছে দুস্থ অসচ্ছল রোগীদের।
হাসপাতাল কর্তৃপ বলছেন, করোনায় চাহিদার তুলনায় কম সরবরাহ পাওয়ায় অধিক চাহিদাপূর্ণ কিছু ওষুধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমনটি দাবি কর্তৃপক্ষের।
বৃহস্পতিবার (২৭মে) উপজেলার কোদলাপাড়া এলাকা থেকে গ্যাসের সমস্যা নিয়ে মণিরামপুর হাসপাতালে আসেন আয়েশা বেগম ও রুনা খাতুন। চিকিৎসক তাদের দেখে ব্যবস্থাপত্র দেন। গ্যাসের ওষুধসহ কিছু ওষুধ হাসপাতাল থেকে নেওয়ার জন্য স্লিপও দেন ডাক্তার। সেই স্লিপ নিয়ে হাসপাতালের ফার্মেসীতে গেলে গ্যাসের ওষুধ নেই বলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রুনা খাতুন বলেন, ডাক্তার গ্যাসের ক্যাপসুল লিখেছেন। হাসপাতাল থেকে একটাও দেয়নি। বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। মণিরামপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গত ৩-৪ দিন চিকিৎসা নিচ্ছেন রঘুনাথপুর গ্রামের সোনিয়া খাতুন। ভর্তির পর থেকে গ্যাসের ইনজেকশন পাননি তিনি। গত বুধবার (২৬মে) সকালে চার বছরের ছেলে সিয়ামকে ডায়রিয়া জনিত কারণে এই হাসপাতালে ভর্তি করেছেন মা লিমা খাতুন। একদিনের ব্যবধানে তাকে ছেলের জন্য ৫০০ টাকার ওষুধ কিনতে হয়েছে। রোগীদের অভিযোগ, টাকা পয়সা খরচ করে হাসপাতালে আসি। ছয়টার বেশি গ্যাসের বড়ি পাইনা। আর দুপুর ১২টার পর হাসপাতালে আসলে বলে, গ্যাসের বড়ি নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মণিরামপুর হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডায়াবেটিস রোগীরা চারমাস ধরে কোন ওষুধ পাচ্ছেন না।
মণিরামপুর হাসপাতালের চিকিৎসক আসাদুজ্জামান বলেন, আমি গত দেড় বছর ধরে এনসিডি কর্ণারে রোগী দেখছি। এখানে নিয়মিত ৬০-৭০ জন ডায়াবেটিসের রোগী আসতেন। রোগীরা ৪-৫ রকমের ওষুধ বিনামূল্য পেতেন। গত চারমাস ধরে ডায়াবেটিসের কোন ওষুধ নেই। এই পর্যন্ত তিন-চারবার ওষুধ চেয়ে চিঠি করা হয়েছে। সরবরাহ আসছে না। এখন ডায়াবেটিসের রোগী কম আসছেন। ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত মণিরামপুর উপজেলা। এখানে সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে একটি হাসপাতাল। এছাড়া উপজেলার নেহালপুর ও রাজগঞ্জ বাজারে দুইটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও সেখানে নিয়মিত চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা সেবা পাননা বলে অভিযোগ। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ বেশি। নিয়মিত এখানে বহির্বিভাগে ৪০০-৪৫০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসতেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ না পাওয়ায় এখন রোগীর সংখ্যা কমে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। সরেজমিন জানা গেছে, মণিরামপুর হাসপাতালের বহির্বিভাগে গত ১৫দিন ধরে গ্যাসের ক্যাপসুল, একমাস ধরে এন্টাসিড ও ক্যালসিয়াম বড়ি সরবরাহ নেই। এরআগে প্যারাসিটামল ছিল না বেশ কয়েকদিন। ভর্তি বিভাগে গ্যাসের ইনজেকশন নেই একমাসেরও বেশি সময়। মেলেনা ডায়রিয়ার সব ওষুধ। হাসপাতালের ভর্তি বিভাগে নারী ও শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ বন্ধনা নন্দী জানান, গ্যাসের ইনজেকশনের চাহিদা বেশি থাকায় দ্রুত সরবরাহ শেষ হয়ে গেছে। একমাস ধরে গ্যাসের ইনজেকশন নেই। আর ডায়রিয়ার রোগীদের সব ওষুধ হাসপাতালে আছে। অনেক সময় রোগীর অবস্থা বুঝে ডাক্তার কিছু বাইরের ওষুধ লেখেন।
মণিরামপুর হাসপাতালের ষ্টোরকিপার মহিতোষ কুমার বলেন, ডায়াবেটিসের ওষুধ ঢাকা থেকে আসে। তিন-চার পদের ওষুধ আসে এই রোগীদের জন্য। গতবার তিন লাখ চাহিদা পাঠানো হয়েছে পাইছি মাত্র ৫০ হাজার। কিছু ওষুধ হাতে রেখে পাঁচমাস আগে আবারও চাহিদা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোন খবর নেই। মহিতোষ বলেন, ডায়াবেটিসের বাদে বাকি ওষুধ বগুড়া থেকে আসে। তিন-চার মাস পরপর ওষুধ পাই। গ্যাসের ক্যাপসুলের চাহিদা ছিল তিন লাখ; পাইছি ৩০ হাজার। আবার তিন লাখ চাহিদা পাঠানো হয়েছে। ক্যালসিয়াম বড়ি ৯০ হাজার পাইছি; তিনমাসে শেষ হয়ে গেছে। এন্টাসিড এক-দেড় লাখ পাইছি। তা একমাস আগে শেষ হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী কম ওষুধ পাওয়ায় রোগীদের হিসাব করে দিতে হয়। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা: অনুপ বসু বলেন, মণিরামপুর উপজেলার আয়তন বড় হওয়ায় এই হাসপাতালে রোগীর চাপ সবসময় বেশি। হাসপাতালে সর্বমোট ২০-২২ পদের ওষুধ আসে। আমরা যা ওষুধ চাই সরবরাহ পাই অনেক কম। উপজেলায় ৪৩টি কমিউনিটি কিনিক আছে। সেখানে পর্যাপ্ত ওষুধ আসে। রোগীরা সাধারণ রোগে হাসপাতালে না এসে সেখানে গেলে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাবেন।
মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা শুভ্রারানী দেবনাথ বলেন, করোনার কারণে ওষুধ কম এসেছে। সেই কারণে গ্যাসের ওষুধসহ কয়েক প্রকারের ওষুধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নতুন চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ওষুধ চলে আসবে।
(ঊষার আলো-আরএম)