তিতাস গ্যাসফিল্ডের ১৪ নম্বর কূপের সংস্কারকাজের (ওয়ার্কওভার) পর মাত্র ৪৮ দিন গ্যাস তোলা গেছে। এরপরই এটি ফের বন্ধ হয়ে যায়। কূপটি কবে নাগাদ পুনরায় চালু করা যাবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই কর্তৃপক্ষের কাছে।
অভিযোগ উঠেছে, ভালো করে যাচাই না করেই বন্ধ কূপটি ওয়ার্কওভার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করেছিল বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল)।
বিজিএফসিএল’র এমডি সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠজন প্রকৌশলী ফজলুল হক এবং প্রকল্প পরিচালকের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এমনি হয়েছে।
জানা গেছে, বিজিএফসিএল পরিচালিত তিতাস গ্যাসফিল্ডের ২৭টি কূপের মধ্যে বর্তমানে ৫টি কূপ বন্ধ রয়েছে। বাকি ২২টি কূপ থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে। মূলত কূপগুলোতে মজুত কমতে থাকায় ক্রমাগত কমছে গ্যাসের উৎপাদন। গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে ৫২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন গ্যাসফিল্ডের ৭টি কূপের সংস্কারকাজ হাতে নেয় বিজিএফসিএল। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-বিশ্বরোড এলাকায় অবস্থিত তিতাসের ১৪ নম্বর কূপটির সংস্কারকাজ শুরু হয় গেল বছরের ১৯ মার্চ। ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়ার্কওভার শেষে একই বছরের ২১ মে কূপটি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। এরপর ২৫ মে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয় কূপটি থেকে।
জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তৎকালীন জ্বালানি সচিব মো. নুরুল আলম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওয়ার্কওভার প্রকল্পের পরিচালক ইসমাইল মোল্লা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, কূপটি থেকে আগামী ১০ বছর পর্যন্ত ৪০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। যার বাজারমূল্য প্রায় ২৬শ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলেও জানান তিনি। কিন্তু ৪৮ দিনে মাত্র ২৫৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয় ১৪ নম্বর কূপ থেকে। এরপর এটি বন্ধ হয়ে যায়।
জানা গেছে, এক সময় কূপটি থেকে দৈনিক ২৯ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উত্তোলন হতো। তবে গ্যাসের সঙ্গে অতিমাত্রায় পানি ওঠার কারণে ২০০৯ সালে কূপটি ওয়ার্কওভার করে দৈনিক ১৯ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন করা হয়। তবে গ্যাসের সঙ্গে পানি ওঠার হার বৃদ্ধির কারণে ২০২১ সালের নভেম্বরে কূপটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
১৪ নম্বর কূপের ব্যর্থতার মধ্যেই গেল বছরের শেষদিকে ১৬ নম্বর কূপের ওয়ার্কওভার কাজ শুরু করে বিজিএফসিএল। যদিও কূপটি আগে থেকেই সচল ছিল। এ কূপটি থেকে আগে প্রতিদিন ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হলেও ত্রুটিপূর্ণ ওয়ার্কওভারের পর তা এখন গড়ে ৪ মিলিয়নে নেমে এসেছে। ফলে কূপটি পুনরায় ওয়ার্কওভারের জন্য নতুন করে আরও ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ওয়ার্কওভার প্রকল্পের পরিচালক মো. ইসমাইল মোল্লা মুঠোফোনে জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে ১৪ নম্বর কূপটি বন্ধ হয়ে গেছে। এত দ্রুত কারিগরি ত্রুটির কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে অপারেশন বিভাগে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। এই প্রতিবেদক পরিচয় দিয়ে পরপর তিন দিন ইসমাইল মোল্লাকে ফোন দেন। প্রতিদিনই তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে এড়িয়ে যান। অথচ অন্য মাধ্যমে খবর নিয়ে জানা যায়, ওই সময় তিনি কোনো মিটিংয়ে ছিলেন না।
বিজিএফসিএলের একটি সূত্র বলছে, নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠজন হওয়ার সুবাদে জ্যেষ্ঠতা ভেঙে বাপেক্সের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক, অপেক্ষাকৃত জুনিয়র কর্মকর্তা প্রকৌশলী ফজলুল হককে বিজিএফসিএলের এমডি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। নিয়োগ পাওয়ার পর নিজের পছন্দের এবং আওয়ামী লীগপন্থি কর্মকর্তাদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে অনিময়-দুর্নীতি করছেন তিনি।
বিজিএফসিএলের সিবিএ সভাপতি নূর আলম বলেন, শুধু কোম্পানির এমডির অদক্ষতায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সুফল মিলছে না। ১৪ নম্বর কূপের ওয়ার্কওভার কাজটি ভালোভাবে করতে পারেনি বিধায় বেশিদিন গ্যাস উত্তোলন করা যায়নি।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজিএফসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, আমি কোনো সিন্ডিকেট করিনি। আর আমার সঙ্গে নসরুল হামিদ বিপুর কোনো ঘনিষ্ঠতা ছিল না। আমার মাথাতে এগুলো কখনো আসেইনি। আমি এমডি হয়ে আসার পর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা ব্যক্তিস্বার্থে কিছুই করিনি।
ঊষার আলো-এসএ