আরিফুর রহমান,বাগেরহাট : বেসরকারী শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বানিজ্যে আলোচিত বাগেরহাটে এবার আদালতে মামলা চলামান অবস্থায় একটি স্কুলে অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্টরা। যা নিয়ে গোটা বাগেরহাটে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অবৈধ অর্থের কাছে কোন আইন আদালত মানা হচ্ছে না বলে আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার আগে আদালতে মামলা থাকার পরেও নিয়ম বহির্ভুতভাবে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বি.কে মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের তিনটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার ও প্রধান শিক্ষক মীর নজরুল ইসলাম অনৈতিক সুবিধার জন্য আদলত কে উপেক্ষা করে এই নিয়োগ দিয়েছেন। এমনই অভিযোগ করেছেন কমিটির শিক্ষানুরাগী সদস্য মোঃ মতিয়ার রহমান খান। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে গেলে বিকে মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও বাগেরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরসহ বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া কাগজপত্রে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নৈশ্যপ্রহরী ও নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগের জন্য গত ২৯ জুন একটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। এই তিনটি পদে নিয়োগের জন্য প্রধান শিক্ষক মীর নজরুল ইসলাম ও সভাপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেন তিনজন প্রার্থীর কাছ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা গ্রহন করেছেন এমন অভিযোগ এনে গত ৩ আগস্ট শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দেন শিক্ষানুরাগী সদস্য মোঃ মতিয়ার রহমান খান। ৪ আগস্ট বাগেরহাট জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর একই অঅভিযোগ দেন তিনি। এরপরও কোন প্রতিকার না পেয়ে পরে ৮ আগস্ট এই নিয়োগের নামে অর্থ বানিজ্য ও অনিয়মের অভিযোগ এনে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতের জন্য বিদ্যালয়ের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক এবং খুলনা অঞ্চলের উপ-পরিচালককে বিবাদী করে শরণখোলা সহকারি জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন মোঃ মতিয়ার রহমান খান। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া কেন অবৈধ এবং স্থগিত ঘোষনা করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করেন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক।
এসবের পরেও রবিবার( ২৭ আগস্ট) বাগেরহাট শহরের খানজাহান আলী কলেজে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষানুরাগী সদস্য মোঃ মতিয়ার রহমান খান বলেন, জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে আবেদনসহ আদালতে মামলা করার কারণে অসাধু এ ব্যাক্তিরা তারা আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকী ধামকী দিচ্ছে। আমাকে মেরেও ফেলতে পারে তারা। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মীর নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সব নিয়ম-কানুন মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এর থেকে বেশি জানতে হলে সভাপতির সাথে কথা বলুন। বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, আদালত আমাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। তাই আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। কারণ দর্শানো নোটিশের বিষয়ে আইনগতভাবে মোকাবেলা করব।
এ দিকে বাদী পক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক বলেন, আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে বিকে বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছেন। এছাড়া শরণখোলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক এবং খুলনা অঞ্চলের উপ-পরিচালককে সমন দিয়েছেন। এই অবস্থায় আইনগতভাবে তারা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে না। এটা আদালত অবমাননার শামিল।
এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, আদালতে মামলা থাকা অবস্থায় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা উচিত হয়নি। যেহেতু আদালতে বিষয়টি বিচারাধিন রযেছে। সেই কারণে তাদের অপেক্ষা করা উচিত ছিল। এ বিষয়ে আদালতের কাছে তাদের জবাবদিহিতা রয়েছে।