বাগেরহাট প্রতিনিধি : প্রকাশ্য ঘুষ ও অনিয়ম দূর্নীতিতে আলোচিত বাগেরহাটের আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্য্যলয়ে বুধবার দুপুরে গনশূনানী করেছে জেলা প্রশাসন। পাসপোর্ট করতে আসা পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের নানা ধরনের হয়রাণির অভিযোগ প্রচার পাওয়ায় পাসপোর্ট কার্যালয়ের কর্মচারিদের বিরুদ্ধে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
ভুক্তভোগি অসংখ্য পাসপোর্ট প্রত্যাশিরা পাসপোর্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারি ও দালালদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনসহ নানা হয়রাণির অভিযোগ তুলে ধরেন। পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা এই পাসপোর্ট অফিসকে হয়রাণি ও দালালমুক্ত করতে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।
কার্য্যলয় চত্বরে প্রায় দেড় ঘন্টা ব্যাপী পাসপোর্ট প্রার্থীদের নানা অভিযোগ শোনেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান। পাসপোর্ট অফিসে দালালির অভিযোগ ওঠায় জেলা প্রশাসক নিজেই দুই দালাল কে তাৎক্ষনিক গ্রেপ্তার করে পুৃলিশে দেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অনুজা মন্ডল দুই দালালকে এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন। বিকেলে তাদের বাগেরহাট জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ সময়ে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ খোন্দকার রিজাউল করিম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোছাব্বেরুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দীন ও দুর্নীতিতে আলোচিত বাগেরহাট পাসপোর্ট আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক এ এস এম সানি উপস্থিত ছিলেন।
ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অনুজা মন্ডল বলেন, পাসপোর্ট করতে আসা পাসপোর্ট প্রার্থীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুই ব্যক্তিকে এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তাদের জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। দ;ন্ডপ্রাপ্ত এ দালালরা হলো, বাগেরহাট শহরের খারদ্বার এলাকার সরদার আহমেদ আলীর ছেলে সরদার নাসির উদ্দিন এবং দশানী এলাকার ইসমাইল হাওলাদারের ছেলে মাসুম হাওলাদার।
এদের পাসপোর্ট অফিসের পাশে কম্পিউটার ও ফটোস্ট্যাটের দোকান রয়েছে। বাগেরহাট শহরের দশানী এলাকার মো. জিল্লুর রহমান অভিযোগ করেন, আমার স্ত্রী অসুস্থ। তার পাসপোর্ট করানোর জন্য আমাকে পাসপোর্ট অফিসে আসতে হয়। এখানে আসলে পাসপোর্ট অফিসের লোকজনের কাছে হয়রাণির শিকার হতে হয়। এখানে দালালের মাধ্যমে বেশী টাকা দিলে সমাধান মেলে। সম্প্রতি আমার পাটপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আমি এখানে আসি। তারা আমাকে অনলাইনে আবেদন করতে বললে আমি তা করি। সেই আবেদনে নামের বানান ভুল থাকায় তারা আমাকে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে এ্যাফিডেভিড করে জমা দিতে বলে। তা জমা দেয়ার পর নতুন করে আরেকটি ভুল ধরে তা সংশোধন করতে আড়াই হাজার টাকা দাবি করে দালাল। আমি আড়াই হাজার টাকা দিয়ে আবেদনটি জমা দেই। আবেদন জমা দেয়ার পর পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত আনসার সদস্য আমাকে ডেকে বলে আপনার পাসপোর্ট কিন্তু ঢাকায় আটকে যাবে। এর থেকে সমাধান পেতে হলে আমাকে ৪ হাজার টাকা দিলে দ্রুত পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবেন। আমি টাকা দিয়েও পদে পদে হয়রাণির শিকার হচ্ছি বুঝতে পেরে তাদের সব কথা ফোনে রেকর্ড রেখে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে গেলে আমি পাসপোর্টটি হাতে পাই। এখানে পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষের নানা ভুল ধরে দালাল ও পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারিরা প্রতিনিয়ত হয়রাণি করে যাচ্ছে।
পাসপোর্ট অফিস দালালমুক্ত হোক এবং সাধারণ মানুষ যেন আর হয়রাণির শিকার না হয় সেই দাবি সবার। এসময় স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, রাজনীতিতে সরকার বিরোধী একটি চক্র ও কতিপয় সংবাদ কর্মী এখানে নিয়মিত দালালী করে আসছে। গনশুনানী শেষে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, বাগেরহাট পাসপোর্ট অফিসে দূর্নীতি, অনিয়ম, পাটপোর্ট প্রত্যাশীদের সাথে খারাপ আচরণ করা, অসহযোগিতার নানা অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রশাসনের সভায়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে হয়রাণির শিকার পাসপোর্ট প্রার্থীদের কথা শুনতে গনশুনানি করার সিদ্ধান্ত নেই। আজকের এই গনশুনানিতে আর্থিক লেনদেন, খারাপ আচরণ, দালালদের দৌরাত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাসপোর্ট প্রার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে দুইজন চিহ্নিত দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে। এখন থেকে পাসপোর্ট অফিস দালালমুক্ত হবে। এই দালালমুক্ত করার দায়িত্ব এখানকার কর্তৃপক্ষের। এই অফিস দালালমুক্ত রাখতে এখানে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পর্যবেক্ষণ করবে। এখানে কেউ দালালি করলে আর ওই দালালের সাথে পাসপোর্ট অফিসের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রেমিটেন্সযোদ্ধাসহ সকল নাগরিক যেন কোন প্রকার হয়রাণি ছাড়া সঠিক সেবাটা পায় তা নিশ্চিত করতে চাই। ভবিষ্যতে কেউ এখানে দালালি করতে আসলে সঙ্গে সঙ্গে তথ্য দিলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।
(ঊষার আলো-এফএসপি)