UsharAlo logo
শনিবার, ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপির গন্ধ পেলেই ওসির তালিকা থেকে নাম বাদ

ঊষার আলো ডেস্ক
অক্টোবর ৫, ২০২৪ ৮:০৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশ পুলিশের কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ প্রভাবশালী পদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) এ পদটি ছিল অনেক বেশি লোভনীয়। বিগত সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ এ পদে নিয়োগ দেওয়া হতো ‘রাজনৈতিক পরিচয়’ দেখে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বহু কর্মকর্তা তাই চাকরিজীবনে ওসি হতে পারেননি।

দেশের সব থানার ওসির পদে সাধারণত পুলিশের ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক মতাদর্শ। বিএনপির ‘গন্ধ’ পেলেই ওসির তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হতো যোগ্য কর্মকর্তাদের। এছাড়া দেওয়া হতো ‘বাবর-তারেক’ ট্যাগ।

ডিএমপির কয়েকজন ইন্সপেক্টরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যারা ওসি হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই শুধু আওয়ামী পরিবারের সন্তান হওয়ার কারণে দায়িত্ব পেয়েছেন।

ওসি বানানোর ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব বা যোগ্যতা বিবেচনা করা হয়নি। শুধু নিজে বা পরিবার নয়, আত্মীয়-স্বজনের কেউও যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকতেন সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তাকে ওসি পদ দেওয়া হতো না।

যেসব পুলিশ সদস্যের বয়স ৫৪ বছর বা তার বেশি তারা ওসি হতে পারবেন না বলে পুলিশে লিখিত একটি নীতিমালা রয়েছে। এটি ছাড়া আর তেমন কোনো নীতিমালা নেই। দেশের থানাগুলোতে ওসি নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু প্রাধান্য পায় কমিশনার (মেট্রোপলিটন ও শহরে) ও স্ব স্ব রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) ব্যক্তিগত অভিমত। তবে যাদের চাকরি বিএনপি-জামায়াতের আমলে হয়েছিল, তাদের আগেই বাদ দেওয়া হতো ওসি হওয়ার তালিকা থেকে।

ঢাকার ওসি নিয়োগে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো ডিএমপির ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ডিভিশনের (আইএডি) রিপোর্টকে। এতে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্স, অর্গানাইজড অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ, সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ, পরিবহন বিভাগ, ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ফোর্স বিভাগ, পিআর অ্যান্ড এইচআরডি বিভাগ,

উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, ক্রাইম বিভাগ, অপারেশন বিভাগ, সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ, মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ, মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ বিভাগ, স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ, আইএডি বিভাগ, লজিস্টিক, প্রসিকিউশন বিভাগের শতাধিক ইন্সপেক্টরের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হতো।

আওয়ামী লীগের আমলে ইন্সপেক্টরদের নিয়ে আইএডির করা একটি প্রতিবেদন এসেছে ঢাকা পোস্টের হাতে। এতে দেখা যায়, বিএনপি-জামায়াতের মতাদর্শী পরিবার, এমনকি এই মতের আত্মীয়-স্বজন থাকলেই তাকে ‘বিএনপিপন্থি’ হিসেবে রিপোর্ট দেওয়া হতো।

ওসি নিয়োগের ক্ষেত্রে ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল এবং ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত পুলিশে যোগদান করা কর্মকর্তাদের বাদ দেওয়া হতো। এসব কর্মকর্তা ছাড়াও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ২০০৫ সালে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নিয়োগ দেওয়া ‘স্পেশাল ব্যাচ’ খ্যাত ৮২২ জনকে চিহ্নিত করে বাদ দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান  বলেন, ডিএমপিতে আগে কীভাবে ওসি নিযুক্ত করা হয়েছে সেটা আমার জানা নেই।

সে বিষয়ে আমি ওয়াকিবহাল নই। বর্তমান পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে অফিসারের সততা, দক্ষতা, কাজের মান বিবেচনা করে ওসির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ওসির দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব ও দক্ষতাটাই এখানে মুখ্য বিষয়।