UsharAlo logo
সোমবার, ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিয়ের জেরে ১২ বছর ধরে একঘরে চার পরিবার

usharalodesk
মার্চ ৭, ২০২৪ ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : বিয়েসংক্রান্ত ঘটনার জের ধরে গ্রাম্য সালিশে ১২ বছর ধরে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দড়গ্রাম ইউনিয়নের নওগাঁও গ্রামের চারটি পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া ওই চার পরিবারের কারও সঙ্গে কেউ মেলামেশা কিংবা সখ্যতা করলেই গুনতে হবে এক হাজার টাকা জরিমানা। এ রকম ফরমানের ওই চার পরিবারের সন্তানসহ তারা নিজেরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় বসবাস করছেন। পরিবারগুলোর কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে প্রতিবেশীরা হাজির হয় না। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য জাফর আলী গত ২৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শান্তা রহমান জানান, একঘরে করার বিষয়ে তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। উপজেলার প্রশাসনের গণশুনানিতে সংশ্লিষ্টদের ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। এর পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

লিখিত অভিযোগ, ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠায় ২০১২ সালে বিয়ে করার উদ্দেশে উপজেলার নওগাঁও গ্রামে এক হিন্দুধর্মাবলম্বী ছেলে ও মেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর দড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন সদস্য আবদুর রাজ্জাকসহ গ্রামের মাতবররা তাদের ধরে এনে সালিশ বসান। সালিশে মেয়েটিকে ১০১ ঘা দোররা মারা হয়।

সালিশে দোররা মারার ঘটনায় প্রতিবাদ করলে নওগাঁও গ্রামের জাফর, তার দুই ভাই সাদেক শিকদার ও আলম শিকদার এবং কাকা জিলাল হোসেনের পরিবারকে একঘরে করে রাখার ঘোষণা দেন ইউপি সদস্য রাজ্জাকসহ মাতবররা।

মাতবরদের দেওয়া সিদ্ধান্তের ফলে তাদের সঙ্গে গ্রামের অন্যদের কথাবার্তাসহ চলাফেরা করতে নিষেধ করা হয়। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা হলে এক হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে বলেও হুশিয়ারি দেওয়া হয়। তাদের বাড়িতে কেউ কাজে যেতে পারবে না, তারাও অন্যদের বাড়িতে কাজে যেতে পারবেন না। গ্রামের মসজিদ, মাদ্রাসা ও ঈদগাহে কোনো অনুদান দিতে পারবেন না বলেও নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়। প্রায় এক যুগ ধরে ওই চারটি পরিবার নিষেধাজ্ঞার আওতায় একঘরে জীবনযাপন করছে।

এ বিষয়ে জাফর আলী বলেন, গ্রামের সালিশ বিচারে মেয়েটিকে দোররা মারার ঘটনায় আমি প্রতিবাদ করি। তাই আমাদের একঘরে করে রাখছেন গ্রামের মাতবররা। গ্রামের কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে আমরা যেতে পারি না। মসজিদ, মাদ্রাসায় আমরা কিছু (অনুদান) দিতে পারি না। এটা আমাদের জন্য শুধু কষ্টের না, লজ্জারও।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, নওগাঁও গ্রামের উত্তর পাশে জাফর ও তার দুই ভাইয়ের বাড়ি পাশাপাশি। এ সময় কথা হয় ভুক্তভোগী জাফরের সত্তরোর্ধ্ব মা নুরজাহানের সঙ্গে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বয়স হয়েছে আল্লাহ না করুক আমি যদি মইর্যা যাই তাইলে প্রতিবেশীরা আমারে মাটি পর্যন্ত দিতে আইবো না! এমন পরিস্থিতির শেষ চান তিনি।

ওই ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য আবদুর হান্নান ওরফে হানিফ বলেন, একঘরে করে রাখার বিষয়টি বেশ কয়েকবার মঅমাংসা করে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। ওই পরিবারের লোকজনকে মাতবরদের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কেউ যাননি।

তবে ওই পরিবারগুলোকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, তাদের একঘরে করে রাখা হয়নি। সমাজের লোকজনের সঙ্গে ওই পরিবারের সদস্য মেলামেশায় কোনো বাধানিষেধ নেই। তবে একটি ঘটনা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। গ্রামবাসী সবাই বসে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে। ইতোমধ্যে বর্তমান ইউপি সদস্যকে উদ্যোগ নিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ঊষার আলো-এসএ