ঊষার আলো রিপোর্ট : ভর্তিযুদ্ধের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পড়ার সুযোগ পান আফসানা করিম রাচি (২০)। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মাসখানেক আগে পা রাখেন ক্যাম্পাসে। কিন্তু তার স্বপ্নযাত্রা থেমে গেছে শুরুতেই। মঙ্গলবার ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। তার মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার আট দফা দাবিতে ‘জাহাঙ্গীরনগর ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
রাচির দাফন শেরপুরের নকলা উপজেলার গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের চকবড়ইগাছি গ্রামে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
সড়ক দুর্ঘটনায় বিসিএস কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হলো না রাচির। জাবির মার্কেটিং বিভাগের ৫৩ ব্যাচের (২০২৩-২৪ সেশন) শিক্ষার্থী আফসানা রাচির স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার। কিন্তু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় রাচিসহ তার পরিবারের সব স্বপ্ন মিশে গেছে পিচঢালা কালো রাস্তায়।
আফসানা রাচির বাবা ব্যবসায়ী রেজাউল করিম জানান, তার ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে রাচি সবার ছোট। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকার গ্রিন রোডে বসবাস করলেও ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কোদালধর এলাকায় নিজের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি মাছের খামার পরিচালনা করেন। মাঝে-মধ্যে ময়মনসিংহ শহরের একটি বাসায় থেকে মাছের খামারগুলোর দেখভাল করেন তিনি। খোঁজ-খবর নিতে আসেন গ্রামের বাড়িতেও। তার ছোট মেয়ে রাচি ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ৫৩তম ব্যাচে (২০২৩-২৪ সেশন) ভর্তি হয়েছিলেন। রাচি থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম খালেদা জিয়া আবাসিক হলে। কিছুদিন ধরে রাচির মা তার এক ছেলের সঙ্গে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন।
রাচির স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা। কিন্তু তার সে স্বপ্ন কেড়ে নিল ঘাতক অটোরিকশা চালক। দুনিয়ার মায়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমাতে হলো রাচিকে।
এর আগে, বুধবার দুপুরে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডির গ্রিন রোডে আফসানা রাচির প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাচির পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সহপাঠীসহ স্থানীয় মুসল্লিরা অংশ নেন।
এরপর রাচির লাশ দাফনের জন্য নিজ গ্রামের বাড়ি শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের চকবরইগাছি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে রাত সাড়ে ৮টায় দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর জাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন শোকের ছায়া নেমে আসে, তেমনি নিজ গ্রামের বাড়িতে তার লাশ পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে তাকে একনজর দেখতে ভিড় জমায় আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি এলাকার লোকজন। ওইসময় সেখানে শুরু হয় শোকের মাতম।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাস্তা পারাপারের সময় ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশার ধাক্কায় গুরুতর আহত হন রাচি। পরে শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ও পরে মুমূর্ষু অবস্থায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজে নেন। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাচির এ অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। কান্নায় ভেঙে পড়েন সহপাঠীরা। রাতেই জাবি শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাঠামোগত এ হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ ৮ দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
ঊষার আলো-এসএ