UsharAlo logo
শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বৃষ্টিতে প্লাবিত বাগেরহাট, হাজারো পরিবার পানিবন্দী

usharalodesk
জুলাই ২৯, ২০২১ ২:২৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে বিরামহীন বৃষ্টিতে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলীয়ে গেছে শত শত মাছের ঘের। মৌসুমি সবজী পানির নীচে তলীয়ে থাকায় ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চলতি আমন ধানের বীজতলাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায়। গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় গড়ে ৯৩ দশমিক ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে বলে বাগেরহাট কৃষি বিভাগ জানায়। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বর্ষাকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছে বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর। বাগেরহাট সদরে অধিকাংশ গ্রামে বুধবার বিকাল থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ নাই। বাগেরহাট সদরে অধিকাংশ গ্রামে বুধবার বিকাল থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ নাই।

জেলার শরনখোলা উপজেলার তালবুনিয়া আশ্রয়ন প্রকল্প, রায়েন্দা বাজারের পূর্ব এলাকা ও বান্ধাকাটাসহ সাউথখালির বিভিন্ন নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বহাল রয়েছে। এসব এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন চরম দূর্ভোগে।

এছাড়া শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর, মোরেলগঞ্জের পানগুছি, মোংলার পশুর, বাগেরহাটের ভৈরব, দড়াটানাসহ সকল নদ ও নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। বাগেরহাটজেলা সদরের পৌর শহরসহ বিভিন্ন এলাকা বৃষ্টির পানিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক কাচা-পাকা রাস্তাঘাট। সদর উপজেলার যাত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা শেখ বাদশা বলেন, মঙ্গলবার দিনগত রাতে বৃষ্টি হয়েছে। সকালে উঠে দেখি রাস্তায় হাঁটুপানি।

যাত্রাপুর বাজারের অনেকের দোকানের ভিতরে পানি ঢুকে পড়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টি হলেই আমাদের এলাকার সড়কে পানি উঠে যায়। এ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর কোন উদ্যোগও নেই। একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। হাড়িখালী এলাকার ইদ্রিস আলী ছোট বলেন, শুধু বৃষ্টি নয় জোয়ার হলেই এলাকায় পানি উঠে যায়। দুর্ভোগে পড়তে হয় আমাদের। জলাবদ্ধতা নিরসনে লোক দেখানো নয় কার্যকরী উদ্যেগ নিতে হবে। যাতে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা রোধ করা যায়। না হলে মানুষের দুর্ভোগ নিরসন হবে না। এরপর জনস্বার্থে নির্মিত ¯স্লুইজ গেট গুলি মাছ ধরতে ইজারা দেয়ায় এ দুর্যোগকালিন সময়ে আরো ক্ষতি করছে জলাবদ্ধ মানুষদের।

এ সমস্যা লোকাল রাজনৈতিক। শরণখোলা উপজেলার তালতলী এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা সবুর বয়াতি, আবুল হারেস খানসহ কয়েকজন বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, বৃষ্টির ফলে আমরা ঘরে থাকতে পারি নাই। ঘরের ভিতরে পানি উঠে গেছে। কখন পানি নামবে বুঝতেছিনা। রান্না-খাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় উত্তাল বঙ্গোপসাগরে টিকতে না পেরে দুই শতাধিক মাছধরা ট্রলার সুন্দরবনসহ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। পুর্ব-সুন্দরবনের দুবলা ফরেষ্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রলাদ চন্দ্র মুঠোফোনে জানান, অবিরাম বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় সাগরে প্রবল ঢেউয়ে টিকতে না পেরে বেশ কিছু ফিসিংবোট দুবলারচরের মেহেরআলী, ভেদাখালী, আলোরকোল, মাঝেরকেল্লা, নারিকেলবাড়ীয়া, কচিখালীসহ বনের বিভিন্ন স্থানে খালে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।

শরণখোলা ফিসিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন জানান, ৬৫ দিনের অবরোধ শেষে তাদের ফিসিংবোটবহর সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে দুর্যোগের কবলে পড়েছে। দুই শতাধিক ফিসিংবোট মাছ ধরতে না পেরে মহিপুর, নিদ্রা সখিনা, পাথরঘাটাসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে । এতে জেলে ও ফিসিংবোট মালিকরা প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েবে বলে আবুল হোসেন জানান।

শরনখোলা উপজেলা নির্বাহি অফিসার খাতুনে জান্নাত জানান, বিরামহীন বৃষ্টিতে উপকুলীয় উপজেলা শরনখোলায় অসংখ্য পুকুর ও মাছের ঘের তলীয়ে গেছে। জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। বাগেরহাট সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সাদিয়া সুলতানা বলেন, আমন মৌসুমে রোপা চারার বীজতলা পানিবদ্ধ হয়ে পড়েছে। দ্রুত পানি সরে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না। আর মৌসুমি সবজী পানি সরে গেলে ক্ষতি হবে বলে আশংক করা হচ্ছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল জানান, বিরামহীন বৃষ্টিতে সদর ও রামপাল উপজেলার অসংখ্য চিংড়ী ঘের ও পুকুর তলীয়ে গেছে। তলীয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া মাছের ঘেরের তালিকা করা হচ্ছে। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ আজিজুর রহমান বলেন, পানিবন্ধি মানুষদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। প্রতিটা উপজেলার ইউএনওদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ক্ষতি গ্রস্থ মানুষদের সহায়তা প্রদানের।

(ঊষার আলো-আরএম)