ঊষার আলো রিপোর্ট : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) দুদিন ধরে শাখা ছাত্রলীগের তিন পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র হাতে সংঘর্ষে জড়ান তারা। এতে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। তিন পক্ষেরই দাবি, নিজেদের কর্মীকে মারধরের জেরে ঘটনার সূত্রপাত। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে ছাত্রলীগের উপপক্ষগুলো। আধিপত্য দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই এসব সংঘর্ষের নেপথ্য কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার আগে শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষগুলোকে ‘শান্ত’ রাখতে একটি ‘পার্সেন্টেজ’ দিয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরীক্ষার সময় ছাত্রলীগের সংঘর্ষ বা কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এটি দেওয়া হয়। এছাড়া প্রশাসনের সুবিধার্থে ছাত্রলীগকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করারও অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। তবে এসব বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলতে চান না কেউই।
গত দুই দিনে তিন দফা সংঘর্ষে জড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি উপপক্ষ। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিক্সটি নাইন ও বিজয় সংঘর্ষে জড়ায়। এদিন রাতে সিএফসির সঙ্গে সংঘর্ষ হয় সিক্সটি নাইনের। শুক্রবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফের সংঘর্ষ হয় সিক্সটি নাইন ও সিএফসির মধ্যে। এসব সংঘর্ষে ধাওয়া-পালটাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং রামদা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া দিয়েছেন তারা। সংঘর্ষে সব পক্ষের অন্তত ৩৭ জন আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, এ বিষয়ে আমি সরাসরি কিছু বলতে পারব না। তবে কোনো অভিযোগ তো উড়িয়েও দেওয়া যায় না। আমার মতে, রানিং শিক্ষার্থীদের হাতে নেতৃত্ব থাকলে এ ধরনের অভিযোগগুলো আসবে না।
সাবেক সহসভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, আমার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হচ্ছে ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে এ সংঘর্ষের ঘটনার সংযোগ নেই। সামনে নতুন কমিটি আসার কথা হচ্ছে। এজন্য আধিপত্য বিস্তারের জন্য এটা হতে পারে। আবার অফিশিয়াল কমিটি না থাকায় নেতৃত্ব শূন্যতার জন্যও হয়ে থাকতে পারে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, ছাত্রলীগের বারবার সংঘর্ষের নেপথ্যের ব্যাপারে আমি সঠিক জানি না। তবে এ প্রশাসন যেহেতু কোনো কিছুই করার সক্ষমতা রাখে না এবং যে কোনো ইস্যুতেই লেনদেনে বিশ্বাসী। এছাড়া প্রশাসন যেহেতু নানা রকম লেনদেনের মাধ্যমে সুবিধা দেয় এবং নেয় তাই এ সুযোগটা যে কেউই কাজে লাগাতে পারে। বিবদমান সিক্সটি নাইন উপপক্ষের নেতা সাইদুল ইসলাম সাঈদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে এ ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। এগুলো ভিত্তিহীন কথা। সামান্য বিষয় নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়েছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব পালনে ঘাটতি আছে। যার কারণে এরকম ঘটনা ঘটে চলেছে।
সিএফসির নেতা ও চবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফ বলেন, সিক্সটি নাইনের কর্মীরা আমাদের ছেলেকে মেরে ঝামেলা শুরু করেছে। সুতরাং তারা বলতে পারবে তাদের উদ্দেশ্য কী। প্রক্টরিয়াল বডি চাইলে গতকালই বিষয়টা সমাধান করতে পারত। কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঘটনাটা বড় হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতারকে কল করলে তিনি ফোন রিসিভ করে কথা না বলেই কেটে দেন। প্রক্টর অধ্যাপক ড. নূরুল আজিম সিকদারও সাড়া দেননি। তবে সহকারী প্রক্টর রোকন উদ্দিন বলেন, লেনদেন সংক্রান্ত এ ধরনের কোনো বিষয় আমার জানা নেই।
শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে ছাত্রলীগের সিক্সটি নাইন ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) উপপক্ষের নেতাকর্মীরা দুই হলে অবস্থান নেন। সিএফসি শাহ আমানত ও সিক্সটি নাইন শাহজালাল হলে অবস্থান নিয়ে প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় ধাওয়া-পালটাধাওয়া এবং লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দেয় তারা। সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার দুদফা সংঘের্ষ আরও ২৫ জন আহত হয়েছেন।
ঊষার আলো-এসএ