ভারতের রাজস্থানে আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকা থেকে শনিবার এক পাকিস্তানি রেঞ্জারকে আটক করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ)।
আটক পাকিস্তানি রেঞ্জারের পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তিনি বর্তমানে বিএসএফের রাজস্থান সীমান্ত ইউনিটের হেফাজতে রয়েছেন।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে অনিচ্ছাকৃত সীমান্ত অতিক্রমের ক্ষেত্রে সেনা বিনিময়ের একটি প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া থাকলেও, বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে পাকিস্তান এখনো পূর্ণম সাহুকে ফেরত দিতে রাজি হয়নি। ফলে ভারতও এই আটক রেঞ্জারকে নিয়ে কী পদক্ষেপ নেবে তা অনিশ্চিত।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর, ৩ থেকে ৪ মে রাতব্যাপী জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারা, বারামুলা, পুঞ্চ, রাজৌরি, মেন্ধর, নওশেরা, সুন্দরবনি ও আখনূরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাকিস্তানি সেনারা ১০ম দিনের মতো বিনা উসকানিতে গুলি চালায়। ভারতীয় সেনাও পাল্টা ও সামঞ্জস্যপূর্ণ জবাব দেয়। এটি সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে সবচেয়ে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে।
এখনো পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর না মিললেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। বিএসএফ জানিয়েছে, কনস্টেবল সাহুর মুক্তির জন্য একাধিক বৈঠক হয়েছে, কিন্তু পাকিস্তান কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বা তার বর্তমান অবস্থান জানায়নি।
১৮২তম বিএসএফ ব্যাটালিয়নে কর্মরত সাহু ‘কিষাণ গার্ড’-এর অংশ ছিলেন, যারা সীমান্তের শূন্যরেখা সংলগ্ন কৃষিজমিতে কৃষকদের সুরক্ষা দিয়ে থাকেন। ভুলভাবে সীমান্ত চিহ্নিত করে বিশ্রামের জন্য একটি গাছের নিচে বসতেই পাকিস্তানি রেঞ্জাররা তাকে ধরে নিয়ে যায়।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, অতীতে এমন ঘটনা দ্রুত সমাধান হয়েছে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে। তবে এবার পাকিস্তান পক্ষ সহযোগিতায় অনীহা দেখাচ্ছে।
সাহুর গর্ভবতী স্ত্রী রাজনী ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের হুগলির রিষড়া থেকে পাঞ্জাবে পৌঁছেছেন। চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে পৌঁছে ছেলে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সাহুর ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
এই উত্তেজনার পটভূমিতে রয়েছে ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পহেলগাঁওয়ে চালানো প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা, যাতে ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন ছুটিতে বেড়াতে আসা সাধারণ মানুষ। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে।
জবাবে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে—এর মধ্যে আছে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, আটারি-ওয়াঘা স্থলসীমান্ত বন্ধ, কূটনীতিক প্রত্যাহার, পাকিস্তানি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা, ডাক ও সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে সংযোগ বন্ধ করা।
এই উত্তপ্ত অবস্থার মধ্যেই শনিবার পাকিস্তান তার আবদালি ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা একে ‘স্পষ্ট উসকানি’ বলে উল্লেখ করেছেন। প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র ‘সিন্ধু মহড়া’র অংশ হিসেবে পরীক্ষা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান।
ঊষার আলো-এসএ