UsharAlo logo
মঙ্গলবার, ১লা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোট হবে কবে, ডিসেম্বর না জুনে?

ঊষার আলো রিপোর্ট
মার্চ ৩০, ২০২৫ ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে সেটি নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হয়েছিল ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট হবে। তবে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সরকারের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেছেন, সংস্কার শেষ করে ভোট করতে আগামী বছরের জুন নাগাদ লেগে যেতে পারে।এর পরই নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা সংশয় তৈরি হয়েছে।ভোট কি তাহলে পিছিয়ে যাচ্ছে?

বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছে। তবে দু চারটি দল প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ না করে ভোট করার বিরোধী। বিএনপিসহ ৫২ টি দল চাচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন।

প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চান তারা। তা না হলে এপ্রিলের শেষদিকে রাজপথে নামার কর্মসূচি দেওয়া হবে। এ নিয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি ও তার মিত্রদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

গত তিনটি সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়নি। এ কারণে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ দেখার জন্য উদগ্রীব দেশের মানুষ।জেন জিসহ তরুণ জনগোষ্ঠীও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত বহুদিন ধরে। তারা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখার পক্ষে।

সরকারের প্রায় ৮ মাস শেষ হতে চলছে, অথচ নির্বাচন নিয়ে কোনো কিছু দৃশ্যমান নয়। এ কারণে সন্দেহের মাত্রা আরও বাড়ছে। তবে সরকারের উচিত হবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ ও অনাস্থা যাতে তৈরি না হয়, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দ্রুত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা এখন সব রাজনৈতিক দলের দাবি। দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে সংসদ ও সরকার গঠন করবে। নির্বাচিত সরকার আগামী দিনে মানুষের আশা পূরণ করবে।

১৬ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অহেতুক কোনো বিলম্ব না করে জাতির আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করতে যতটুকু সময়ের প্রয়োজন, সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ও রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ‘আমরা বলেছি নির্বাচনও দরকার, প্রয়োজনীয় সংস্কারও হওয়া দরকার। তবে যৌক্তিক সময় মানে অস্পষ্ট বিষয় নয়। এটা লাগামহীন কোনো বিষয়ও নয়। অনেকে মনে করেন, আমরা সংস্কার চাই, নির্বাচন চাই না-এটা ঠিক নয়। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন না হলে ১৪, ১৮ ও ২৪ এর নির্বাচনে যা হয়েছে-ফের সেগুলো হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।’

তিনি বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন-এ কথার মধ্যে একটা তাৎপর্য আছে। এক মাস বা দুমাস সময় বেশি লাগলে এতে কি আসে যায়। রাজনৈতিক দলগুলো একমত থাকলে এটি কোনো সমস্যা নয়।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, কবে নাগাদ নির্বাচন হবে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ হলে সবার জন্য ভালো হতো। সুনির্দিষ্ট হলে সংশয় হয়তো কেটে যেত।

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আমাদের জোট বা দলের অবস্থান হলো দ্রুত নির্বাচন। নির্বাচন দেরি হলে নতুন নতুন সংকট সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, কিছুদিনের মধ্যে সরকার যদি সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেয়, তাহলে অতীতের মতো সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন আদায়ে যুগপৎভাবে আন্দোলনে নামব।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আশা করছি সৃষ্ট অনাস্থা ও সন্দেহ দূর করার বিষয়ে সরকার একটা উদ্যোগ নেবে। তিনি মনে করেন, সরকারের মধ্যকার আলাপ-আলোচনা সম্পন্ন করে এ বছরের মধ্যই যাতে নির্বাচন হতে পারে, সরকার প্রধান সে ব্যাপারে দলগুলোকে আশ্বস্ত করবে। এরপরও কোনো কিছু স্পষ্ট না হলে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির জন্য রাজপথে নামার প্রয়োজন হতে পারে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে স্বল্প ও দীর্ঘ সংস্কারের কথা বলেছেন-সেখানে অনেক কিছু পরিষ্কার করেননি। সুতরাং এটা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বলেছে নির্বাচন ব্যবস্থা ভালো করার জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার, তা করেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দেন এবং তা ২০২৫-এর আগেই সম্ভব।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটা সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা হলে তা প্রধান উপদেষ্টার জন্য একটা সম্মানজনক বিষয় হতে পারে। ফলে নির্বাচনের সময়সীমা স্পষ্ট করা না হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হবে; যা কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।

ঊষার আলো-এসএ