মোঃ মেহেদী হাসান, মণিরামপুর : যশোরের মণিরামপুরে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত গরুর খামারিদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি ইউনিয়ের তালিকা ইউএনও অফিস হয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে জমা পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রয়োজনীয় নীতিমালা অনুসরণ না করেই এই তালিকা তৈরি হচ্ছে। গরু নেই এমন ব্যক্তির নামও তালিকায় স্থান পাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে বিষয়টি নিয়ে সরব।
অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে তালিকা চাওয়া হয়। কিন্তু তালিকা দিতে অস্বীকৃতি জানান প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুজার সিদ্দিকী। তালিকা না দিয়ে নিজের বাধ্যবাধকতার কথা শোনালেন তিনি। একপর্যায়ে তথ্য অধিকার আইনে ইউএনও অফিসে আবেদনের পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, করোনাকালীন দ্বিতীয় ধাপে মণিরামপুর উপজেলার একহাজার তিনশ গরুর খামারিকে বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেবে সরকার। যেসব খামারির সংসারের মোট আয়ের ৩০ ভাগ গরু পালন থেকে আসে এবং যাদের পাঁচ লিটার করে মোট ১০ লিটার দুধ দেওয়ারমত দুইটি গাভী আছে তারাই মূলত এই সুবিধা পাবেন। সুফলভোগী নির্বাচন ও তালিকা বাস্তবায়নের জন্য ইউএনওকে প্রধাণ ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কোটা ভাগকরে কমিটির পথেকে উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ের যোগ্য খামারিদের তালিকা চেয়ে গত পহেলা জুন চিঠি করা হয়েছে সব ইউপি চেয়ারম্যানদের। যেখানে ৯জুন তালিকা জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ভোজগাতী ইউনিয়ন বাদে ইতিমধ্যে সব ইউনিয়ন থেকে তালিকা জমা পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সরকারের নির্ধারিত শর্ত না মেনে তৈরি হয়েছে এই তালিকা। দুধেরগাভীতো দূরের কথা গরু নেই এমন ব্যক্তিদের নামের পাশে ৪-৫টি গরু দেখিয়ে তালিকায় নাম দেওয়া হয়েছে। আবার যেসব গরিব খামারির নাম এসেছে টাকা হাতে পেলে তাদেকরে অর্ধেক ভাগ দিতে হবে এমন শর্তেও নাম অন্তভর্‚ত করা হয়েছে বলে খবর রটছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি ইউনিয়নে প্রাণিসম্পদ অফিসের একাধিক কর্মী থাকলেও তাদের বাদ রেখে ইউপি চেয়ারম্যানদের দিয়ে এই তালিকা করা হয়েছে। যার অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া তালিকা তৈরিতে চেয়ারম্যানদেরও অনেক চাপ সইতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন কোন কোন চেয়ারম্যান। খেদাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান এসএম আব্দুল হক বলেন, আমাকে ৯০ জনের তালিকা করতে বলা হয়েছে। আমি মেম্বরদের নিয়ে ৪৫ টা দিতে পেরেছি। বাকি ৪৫টা নাম বিভিন্নভাবে আমার কাছে এসেছে। যেগুলো দিতে হয়েছে।
জমাপড়া তালিকা যাচাইবাছাই করার পে মত দিয়েছেন এই জনপ্রতিনিধি। কাশিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আহাদ আলী বলেন, মেম্বর বা সরকারদলীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে ৬৫ জনের তালিকা করে জমা দিয়েছি। তালিকায় ত্রুটি থাকতে পারে। তিনিও যাচাইয়ের প।ে মশ্মিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, সমষ্টিগতভাবে কাজ করে ৭০ জনের তালিকা জমা দিয়েছি। ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে। অফিস যাচাইবাছাই করে তালিকা চুড়ান্ত করবে। এদিকে গরুর খামারির তালিকা প্রস্তুতি নিয়ে ফেসবুকে নানা মন্তব্য আসছে। জমাপড়া তালিকা গোপন না রেখে ইউএনও অফিস বা প্রাণিসম্পদ অফিসে উন্মুক্তস্থানে টানিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছে। এছাড়া তালিকা যাচাইবাছাই করে গাভী আছে করোনায় তিগ্রস্ত এমন লোকের নাম অন্তভর্‚ত করার দাবি করা হচ্ছে।
গতবছর প্রথমধাপে মণিরামপুরে এক হাজার ৩০০ জন তিগ্রস্ত গরুর খামারি হিসেবে ১০ হাজার করে টাকা পেয়েছিলেন। সেখানে একই গরু দেখিয়ে ধনী পরিবারের স্বামী-স্ত্রী সরকারি এই সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মণিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুজার সিদ্দিকী বলেন, ‘দ্বিতীয়ধাপে সহায়তা দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে আমাদের ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মী ও ইউপি চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। সংগত কারণে সেই তালিকা বাদ দিতে হয়েছে। নতুন করে শুধু চেয়ারম্যানদের দিয়ে আবার তালিকা করা হয়েছে। ভোজগাতী ইউনিয়ন বাদে বাকি ইউনিয়নগুলোর তালিকা হাতে পেয়েছি। এই তালিকা ঢাকায় পাঠানো হবে। সেখান থেকে সিরিয়াল হয়ে আসলে যাচাইবাছাই করা হবে।’ জমা পড়া তালিকার মধ্যে কয়েকটি ইউনিয়ের তালিকা চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘তালিকা আমি দিতে পারব না। অনেক সাংবাদিক তালিকা চাচ্ছেন। সবাইকে একই কথা বলে দিয়েছি। তালিকা নিতে হলে ইউএনও বরাবর তথ্য আইনে আবেদন করতে হবে। তিনি বললে তালিকা পাবেন।’ পরে এই কর্মকর্তার কথামত তালিকা পেতে আইন মেনে ইউএনও অফিসে আবেদন করা হয়েছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, আমাকে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। সবকাজ প্রাণিসম্পদ অফিসের। অপশন থাকলে তালিকা যাচাইবাছাই ও উন্মুক্ত করা হবে।
(ঊষার আলো-আরএম)