UsharAlo logo
মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মণিরামপুরে জীবিতকে মৃত দেখিয়ে নামপত্তন

usharalodesk
এপ্রিল ৫, ২০২১ ৯:৫৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ মেহেদী হাসান, মণিরামপুর : যশোরের মণিরামপুরে ইউনুস আলী (৬০) নামে জীবিত একব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে তার স্ত্রীর সম্পত্তির নামপত্তনের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার রোহিতা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব জাহিদুর রহমান লিপটন মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করে একাজ করেছেন বলে অভিযোগ। ইউনুস আলীর বাড়ি কোদলাপাড়া গ্রামে। তিনি ঢাকায় রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে কর্মরত আছেন।
এছাড়া নায়েব জাহিদুল রহমান লিপটনের বিরুদ্ধে নামপত্তন বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আহরহ। নায়েবের চাহিদা পূরণ করতে না পেরে বহু মানুষ প্রয়োজন থাকলেও নামপত্তন করাতে পারছেন না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইউনুস আলীর প্রথম স্ত্রী মরিয়ম বেগম তিন মেয়ে ও এক ছেলে রেখে মারা যান ১৫-১৬ বছর আগে। এরপর মরিয়ম বেগমের পিতার (মৃত আলী আহম্মদ) কোদলাপাড়া মৌজার ৩৬ শতক জমির অংশীদার হন মরিয়ম বেগমের ছেলে মাইনুল হাসান ইমন, তিন মেয়ে আফরোজ ইয়াসমিন,ইয়াসমিন আরা সিমু, নিলুফা ইয়াসমিন ও মরিয়ম বেগমের স্বামী ইউনুস আলী। মৃত আলী আহম্মদের সেই সম্পত্তি অংশহারে ভাগ করে নায়েব জাহিদুল রহমান লিপটনের মাধ্যমে নামপত্তনের আবেদন করেন মরিয়ম বেগমের ভাই আব্দুল ওহাব। গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি নামপত্তনের কপি হাতে পান আব্দুল ওহাব। সেখানে মরিয়ম বেগমের চার সন্তানের অংশ উল্লেখ থাকলেও নেই ইউনুস আলীর অংশ। নায়েব জাহিদুল রহমান লিপটন মোটা অংকের টাকা খেয়ে নামপত্তনের কপিতে ইউনুস আলীকে মৃত দেখিয়েছেন। নামপত্তনের সেই কপিতে নায়েব ছাড়াও স্বাক্ষর রয়েছে উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো আকরামুল ইসলাম ও এসিল্যান্ড পলাশ কুমার দেবনাথের।
এই বিষয়ে জানতে সোমবার (৫ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে সরেজমিন এই প্রতিবেদক হাজির হন কোদলাপাড়া গ্রামে ইউনুস আলীর বাড়িতে। সেখানে গিয়ে জানা যায়, ইউনুস আলী ঢাকায় চাকরিতে কর্মরত আছেন। এসময় কথা হয় ইউনুস আলীর ছেলে ইমনের সাথে। ইমন বলেন, “আমার আব্বা মৃত হবেন কেন! তিনিতো ঢাকায় রেডক্রিসেন্টে গাড়ি চালক হিসেবে কর্মরত আছেন। কয়েকদিন আগে তিনি বাড়ি থেকে ছুটি কাটিয়ে গেছেন।” নামপত্তনের কপিতে ইউনুস আলীকে মৃত দেখানোর ব্যাপারে ইমন কিছু জানেন না বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
নায়েব জাহিদুর রহমান লিপটন রোহিতা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগ দেন একবছর আগে। এখানে যোগ দিয়ে কয়েকজন দালাল ও অফিসের পিয়ন আবুল কাশেমের মাধ্যমে নামপত্তনের নামে বাণিজ্যে মেতে ওঠেন। নামপত্তনের বিষয়টি উপজেলা ভূমি অফিসের। এইক্ষেত্রে প্রতি দলিলে নামপত্তনের সরকারি খরচ একহাজার ১৫০ টাকা হলেও নায়েব জাহিদুল রহমান লিপটন দলিল প্রতি দশ হাজার টাকা দাবি করেন। এমন কয়েকটি অভিযোগ গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে আসলে নায়েব জাহিদুল রহমান লিপটনের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়। তখনই জীবিত লোককে মৃত দেখিয়ে জাহিদুল রহমান লিপটনের নাম পত্তন করিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
অভিযোগ রয়েছে নায়েব জাহিদুল রহমান লিপটন বাসুদেবপুর গ্রামের ভ্যানচালক ইউনুছ আলীর কাছে চারটি দলিলের বিপরীতে ৩০ হাজার টাকা, একই গ্রামের শয্যাশায়ী জহির সরদারের কাছে এক দলিলে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। তারা দুইজন নায়েবের চাহিদা মেটাতে না পারায় জমির নামপত্তন করাতে পারেননি।
এছাড়া অফিসের পিওন আবুল কাশেমের মাধ্যমে নায়েব জাহিদুল রহমান লিপটন বাসুদেরপুর গ্রামের ইউনুছ আলী নামে অপর একব্যক্তির কাছে এক দলিলে নামপত্তনের জন্য ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। ইউনুছ আলী দুইহাজার টাকা জমা দিয়ে নামপত্তনের আবেদন করেছেন। বাকি টাকা নামপত্তনের কাগজ হাতে পাওয়ার পর দেওয়ার কথা।
এদিকে পট্টি গ্রামের সেকেন্দার আলী নামে একব্যক্তির কাছ থেকে এক দলিলের নামপত্তন বাবদ নায়েব পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য আমিনুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সেকেন্দার আলী সম্পর্কে মেম্বর আমিনুরের চাচা।
এই বিষয়ে সরাসরি রোহিতা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে কথা হয় নায়েব জাহিদুর রহমান লিপটনের সাথে। তিনি ইউনুস আলীকে মৃত দেখানোর বিষয়ে ভুল স্বীকার করেছেন। পিওন আবুল কাশেমের মাধ্যমে নামপত্তনের নামে বাসুদেরপুর গ্রামের ইউনুছ আলীর কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়টিও স্বীকার করেছেন নায়েব। তবে অন্য অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন নায়েব।
নায়েব জাহিদুল রহমান লিপটন বলেন, ইউনুস আলীকে মৃত দেখিয়ে নামপত্তনের বিষয়টি আমি ঠিক করে দেব।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পলাশ দেবনাথ বলেন, নামপত্তনের বিষয়ে নায়েব জরিপ করে আমার কাছে প্রস্তাব পাঠান। তারপর কানুনগো স্বাক্ষর করেন। সর্বশেষে আমি স্বাক্ষর করি। নায়েব জাহিদুল রহমান লিপটনের বিরুদ্ধে আসা সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঊষার আলো-এমএনএস)