মোঃ মেহেদী হাসান, মণিরামপুর : যশোরের মণিরামপুরে ধুম পড়েছে বোরো ধান কাটার কাজে। করোনাকালীন শ্রমিক পেতে বেগ পেতে হচ্ছে চাষিদের। যারা কাজে যাচ্ছেন তারা পাচ্ছেন চড়া মূল্য। শ্রমিকপ্রতি ৫০০ টাকা গুনতে হচ্ছে চাষিদের। চড়া মজুরি পেয়ে ধান কাটার কাজে নামছেন শ্রমিকরা। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ৪০ দিনের কাবিখা কর্মসূচির কাজ। যাদের নাম এই তালিকায় রয়েছে তাদের অনেকেই ধান কাটায় ব্যস্ত থাকায় হাজির হচ্ছেন না সরকারি কাজে। শনিবার (২৪ এপ্রিল) শুরু হওয়া প্রথম দিনের কাবিখা (কাজের বিনিময় খাদ্য) কর্মসূচির কাজের খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য মিলেছে। চালুয়াহাটি ইউপির মোবারকপুর ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য মশিউর রহমান জানান, তার প্রকল্পে প্রথমদিনে ৩৯ জনের মধ্যে ১২ জন অনুপস্থিত রয়েছেন। রোহিতা ইউপির রোহিতা ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য মহিদুল ইসলাম জানান, তার প্রকল্পে ৩৪ শ্রমিকের মধ্যে ১০ জন অনুপস্থিত। খেদাপাড়া ইউপির হেলাঞ্চি কৃষ্ণবাটি ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য সাধন দাস জানান, তার প্রকল্পে ৩৮ শ্রমিকের মধ্যে নয় জন অনুপস্থিত। ওই ইউপির দীঘিরপাড় ওয়ার্ডে ৩২ জনের মধ্য ছয়জন শ্রমিক অনুপস্থিত। কাশিমনগর ইউপির কাশিমনগর ওয়ার্ডে ২২ জনের মধ্যে চারজন শ্রমিক অনুপস্থিত। এসব ইউপি সদস্যরা বলছেন, যারা কাজে আসেননি তাদের হাজিরা কেটে দেওয়া হবে। ধান কাটার মুখে কাজ শুরু না করে এক সপ্তাহ পর শুরু করালে ভাল হতো এমনটি মন্তব্য তাদের। তবে, হরিদাসকাঠি ইউপির দিগঙ্গা কুচলিয়া ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য প্রনব বিশ্বাস জানান, প্রথম দিনে তার ওয়ার্ডে ৩৩ জনের মধ্যে সব শ্রমিক হাজির ছিলেন। ইত্যা ওয়ার্ডে ১৫ জনের মধ্যে একজন ও কোমলপুর ওয়ার্ডে ২৫ জনের মধ্যে একজন শ্রমিক অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট দুই ইউপি সদস্য নিখিল দাস ও আব্দুল গফুর। রোববার (২৫ এপ্রিল) সকালে আরো কয়েকটি প্রকল্পের খবর নিয়ে একই চিত্র পাওয়া গেছে। প্রতিবছর দুইবার করে ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজ চলে। উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে ১৩৩টি প্রকল্পে চার হাজার ১৬২ জন শ্রমিক দৈনিক ২০০ টাকা পারিশ্রমিকে বছরে দুইবার করে এই কাজের সুযোগ পান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উপজেলার পূবঅঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে হরিদাসকাঠি ও কুলটিয়া ইউনিয়নের মাঠগুলোতে উল্লেখযোগ্য ধানের চাষ হয়নি। ফলে এসব এলাকার শ্রমিকরা কর্মসূচির কাজে ঠিকঠাক অংশ নিলেও ব্যতিক্রম অন্যসব ইউনিয়নে। যেখানে শ্রমিকরা অন্যকাজে ব্যস্ত থাকায় অধিকাংশ কর্মসূচির কাজে অনুপস্থিত থাকেন। আবার কোন কোন প্রকল্পের সভাপতি প্রভাব খাটিয়ে কর্মসূচির শ্রমিকদের দিয়ে নিজের জমির ধান কাটান বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। তাছাড়া ইউনিয় ভূমি কর্মকর্তা ও ট্যাগ অফিসারসহ একাধিক ব্যক্তি কর্মসূচির কাজ তদারকি করার কথা থাকলেও শনিবার প্রথমদিনে কেউ কাজ দেখতে সরেজমিন গেছেন কিনা তা জানা যায়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ বায়েজিত বলেন, প্রথম দিন কিছু শ্রমিক অনুপস্থিত ছিলেন বলে খবর পেয়েছি। কয়েকজন চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, দুই এক দিনের মধ্যে সব শ্রমিক কাজে ফিরবে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, অধিকাংশ শ্রমিক লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের দিকটা বিবেচনা করে কর্মসূচির কাজ শুরু করা হয়েছে। যারা হাজির হচ্ছে না তাদের বিষয়টি কঠোরভাবে দেখা হবে। তারা অনুপস্থিত দিনের পারিশ্রমিক পাবে না।
(ঊষার আলো-আরএম)