UsharAlo logo
রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুর আগে বাবাকে যে কথা বলে গেল আসিফ

usharalodesk
জুলাই ২৭, ২০২৪ ৬:০৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট :  কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় নিহত শেরপুরের আসিফুর রহমান নামে ১৭ বছরের এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ায় একটি পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে চূরমার হয়ে গেছে। আসিফুর রহমান শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেন ও ফজিলা খাতুন দম্পতির ছেলে।

আসিফের মা ফজিলা খাতুন শুক্রবার রাতে বলেন, ‘আমার ছেলে খুবই ধীরস্থির ও শান্ত স্বভাবের ছিল। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় কুরআনে হাফেজ হওয়ার জন্য পড়াশোনা করত। তেরো সিফারা পর্যন্ত পড়েছে। অভাব-অনটনের সংসার তাই ছোট বয়সেই এক বছর আগে মিরপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। মাসে সে ১৩ হাজার টাকা বেতন পাইত।’

ফজিলা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, আমার দুই ছেলে। চার মেয়ে। ছেলেমেয়েদের মধ্যে আসিফ দ্বিতীয়। বড় মেয়ের ঢাকায় বিয়ে হয়েছে। ছেলে আসিফ ও তার বাবা ঢাকার মিরপুরে থাকে। ৮ মাস বয়সের শিশু ছেলে ও অপর তিন মেয়েকে নিয়ে নালিতাবাড়ী কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামে থাকি। আমার ছেলে আসিফ ছিল আমাদের সম্বল। অকালে তার মৃতুতে আমাদের সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। সরকার যদি এখন আমাদের জন্য কিছু করে তা হলে আমরা বাঁচার শক্তি পামু। আপনারা দেখেন আমাদের জন্য কিছু করতে পারেন কিনা।

নিহত আসিফুর রহমানের বাবা আমজাদ হোসেন শুক্রবার রাতে বলেন, আমার ছেলের বয়স কম। সে কোনো রাজনীতি করত না।  আমার সঙ্গে ঢাকায় থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করত। গত ঈদের আগে সে বেতন ও ঈদ বোনাস মিলিয়ে ১৬ হাজার টাকা পাইছিল।  আমি আগে মানুষের দোকানে কাজ করতাম। ধার করে মিরপুর-১০-এ আব্বাস উদ্দিন স্কুলে পেছনে গোডাউন ভাড়া করে গার্মেন্টসের জুটের ব্যবসা শুরু করেছি। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে খাওয়াদাওয়ার পর ছেলে আসিফ ও আমি ঘুমিয়ে পড়ি। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠে আমার ছেলে আসিফ তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যায়। সন্ধ্যা ৬টা দিকে ছেলে মোবাইল ফোনে বলে বাবা আমি অ্যাক্সিডেন্ট করেছি। খবর পেয়ে গোলাগুলির মধ্যে দৌড়াইয়া যাই। গিয়া দিখি আমার ছেলে মাথার ডান পাশে গুলি লাগছে। আহত হয়ে মিরপুরে আলোক হাসপাতালে পড়ে আছে। সেখান থেকে রিকশায় করে ছেলেকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যাই। সেখানে ব্যান্ডেজ করে ছেলেকে নিয়ে রিকশায় করে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে যাই। সেখানে ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। রিকশায় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নেওয়ার পথে ছেলের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। ছেলে বলে বাবা আমি আর বাঁচব না। তোমার মনের আশা আমি পূরণ করতে পারলাম না। আমাকে মাফ করে দিও।

আসিফের ফুফাতো ভাই আনোয়ার হোসেন শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, আসিফ আমার মামাতো ভাই। ১৯ জুলাই শুক্রবার ৪-৫ বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে যায়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিরপুরে ধাওয়া-পালটাধাওয়া শুরু হলে মোবাইলে ছবি তোলার চেষ্টা করলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে মারা যায়। সে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। খুবই সাদাসিধা ও নরম প্রকৃতির ছেলে ছিল সে।

নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শুক্রবার রাতে জানান, ওই ছেলে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। মিরপুরে গার্মেন্টসে চাকরি করত আর বাবার সঙ্গেই থাকত। গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় সে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকাতেই মারা যায়। মরদেহ এলাকায় নিয়ে এসে দাফন করা হলেও আমাকে সে কথা জানানো হয়নি। পরে আমি লোক মুখে শুনেছি। আমার মনে হয় অজানা ভয়ের কারণেই হয়তো আমাকে জানায়নি। তবে তার বাবা-মা আমাদের নৌকাতেই ভোট দিত।

নালিতাবাড়ী থানার ওসি মনিরুল আলম ভুইয়া আসিফুর রহমানের লাশ দাফনের সত্যতা নিশ্চিত করে এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে জানান, আসিফ কোনো রাজনৈতিক দলে সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে গার্মেন্টসে চাকরি করত।

ঊষার আলো-এসএ