ঊষার আলো ডেস্ক : এবারের শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে।
শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) সকালে শ্রীমঙ্গলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে রেকর্ড করা হয় ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এই শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গতকাল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শ্রীমঙ্গলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সহকারী কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ কমে তা ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে নেমেছে। চলতি বছরের শীত মৌসুমে শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। জেলাজুড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা আরও কমতে থাকবে। এতে শীত আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি শীত শ্রীমঙ্গলে রেকর্ড করা হয়। প্রকৃতি ও পরিবেশগত কারণে এখানকার ঠান্ডা সিলেটের অন্যান্য জায়গার তুলনায় বেশি বলে তিনি জানান।
এদিকে শীতবস্ত্রের চাহিদা বাড়ায় ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। স্বচ্ছলরা শরীরে মোটা কাপড় জড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করলেও নিম্নবিত্ত, অস্বচ্ছল ও খেটে খাওয়া মানুষরা পড়েছে বিপাকে। হাড় কাঁপানো তীব্র শীতে কাঁপছেন তারা। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন বোরো চাষি, ছিন্নমূল ও দিনমজুররা।
মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওর বেষ্টিত এলাকার অধিকাংশ মানুষই খেটে খাওয়া ও নিম্নআয়ের মানুষের বসবাস। শীত এলেই তাদের কষ্ট বাড়ে। শীতের তীব্রতায় কাহিল হয়ে পড়েছে তারা। ঘন কুয়াশার কারণে সময় মত কাজে যেতে পারছে না তারা।
রাজনগর উপজেলার সোনাটিকি গ্রামের বোরো চাষি আফরান মিয়া বলেন, প্রচণ্ড ঠান্ডা ও কুয়াশার মধ্যেই মাঠে কাজে যাই। কাজে বের না হলে সংসার চলবে কি করে।
শহরে ভোরবেলায় ফেরি করে সবজি বিক্রি করেন সদর উপজেলার গিয়াসনগর এলাকার মইনউদ্দিন। তিনি বলেন, এই শীত ও কুয়াশায় ভ্যানগাড়ি চালিয়ে শহরে আসতে খুবই কষ্ট হয়। তারপরও ভোরে চলে আসি পেটের জ্বালায়।
শহরের চৌমোহনা চত্বরে কথা হয় দিনমজুর সোহেল, সাদিক ও মোশাহিদ মিয়ার সাথে। তারা জানান, শীতের কারণে কয়েকদিন ধরে সময়মত কাজে যোগ দিতে পারছে না। একটু বেলা হয়ে গেলে অনেক সময় সেদিনের মজুরি থেকেও তারা বঞ্চিত হন।
এদিকে জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ জন, এআরআইয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ জন এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন। গত এক সপ্তাহে শীতকালীন রোগে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭৮৬ জন। শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ে হাসপাতালে। সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় শিশু ও বয়স্করা। অন্যান্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ রোগীকে প্রতিদিন আউটডোর এবং ইনডোরে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে জেলার ৬৭ ইউনিয়ন ও পাঁচ পৌরসভায় ৩৫ হাজার ২৮০টি কম্বল পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি জেলার ৭টি উপজেলার প্রতিটা উপজেলায় নগদ দুই লাখ টাকা করে আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ বরাবর আরো কম্বলের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো পেলে বিতরণ করা হবে বলে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, তীব্র শীতে শীতার্ত মানুষের মাঝে উষ্ণতা ছড়িয়ে দিতে জেলা প্রশাসনের কম্বল বিতরণ অব্যাহত থাকবে।