UsharAlo logo
শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

যাত্রী নিয়ন্ত্রণে রেলের হিমশিম অবস্থা

usharalodesk
মার্চ ২৭, ২০২৪ ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট :  প্রতিবার ঈদযাত্রায় রেলে ঘরমুখো মানুষের বাঁধভাঙা ভিড় থাকে। যদিও হাজার হাজার যাত্রীর বিপরীতে কর্তৃপক্ষ আসনভিত্তিক টিকিট বিক্রি করে। অবশ্য যাত্রার দিন অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণে ২৫ শতাংশ সিটবিহীন টিকিট বিক্রি করা হয়। এবার ঈদযাত্রায় ৩ থেকে ৯ এপ্রিল এবং ১৩ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থায় ট্রেন চলবে।

এসব ট্রেনের ৩৩ হাজার ৫০০ টিকিটের বিপরীতে প্রতিদিন কয়েক মিনিটের মধ্যে লাখ লাখ মানুষ টিকিট কাটতে অনলাইনে হিট করছে। বিনাটিকিটের যাত্রী ঠেকাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। নানা কারণে ঈদযাত্রায় যাত্রী নিয়ন্ত্রণে রেলের হিমশিম অবস্থা দাঁড়িয়েছে।

রেলওয়ে মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সরদার সাহাদাত আলী জানান, সীমিত আসন থাকায় সবাইকে কাঙ্ক্ষিত টিকিট দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে শুধু যাত্রার দিন অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণে ২৫ শতাংশ সিটবিহীন টিকিট বিক্রি করা হবে। যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা এবারও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি।

মঙ্গলবার কমলাপুর স্টেশন সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে-স্টেশন চত্বর থেকে প্ল্যাটফর্ম গেট পর্যন্ত বাঁশের অস্থায়ী বেড়া এবং স্টেশনে যাত্রী প্রবেশের চারটি পথ তৈরি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঈদযাত্রায় স্টেশনে এবং অধিকাংশ ট্রেনে কার হাতে টিকিট আছে অথবা কার হাতে নেই তা দেখা সম্ভব হয় না। টিকিট যাচাই করার অনুকূল পরিস্থিতিও থাকে না। প্রচণ্ড ভিড়ে আবার ট্রেনে টিটিইরাই চলাফেরা করতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে লেন তৈরি করা হচ্ছে। যাতে যাত্রীদের সারিবদ্ধভাবে স্টেশনে প্রবেশ করানো যায়। এতে কিছুটা হলেও টিকিট যাচাই করা সম্ভব হবে।

রেলওয়ে পুলিশ ও আরএনবি সূত্র বলছে, প্রায় ৯৫ শতাংশ রেলওয়ে স্টেশন উন্মুক্ত থাকায় স্টেশনে কড়াকড়ি করা যায় না। ট্রেন ছাড়ার পর স্টেশনে সামনে এবং আউটার থেকে বিনাটিকিটে যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
মুহূর্তের মধ্যে শত শত মানুষ ট্রেনে উঠে পড়ে, অনেকে ট্রেনের ছাদ, ইঞ্জিন ও দুই বগির সংযোগস্থলে অবস্থান নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শত চেষ্টা থাকলেও কিছু কিছু ট্রেনের ছাদে যাত্রী ওঠা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। কারণ শত শত মানুষ আগে থেকে স্টেশনের টিনশেডের ওপর অবস্থান নেয়। ট্রেন স্টেশনে প্রবেশ করতেই ওঁৎ পেতে থাকা মানুষ ট্রেনের ছাদে উঠে পড়ে। ওই সময় একেকটি ট্রেনের পুরো ছাদ লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা করে তাদের নামিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় না। শত প্রচেষ্টায়ও বিনাটিকিট রোধ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। প্রচণ্ড ভিড়ে টিকিটের যাত্রীদের অনেকে নির্ধারিত সিটে পর্যন্ত যেতে পারে না। এক প্রকার ঝুঁকির মধ্যেই বিশেষ করে ঈদযাত্রা পরিচালনা করা হয়।

ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির জানান, বিনাটিকিটের যাত্রী রোধে তিন স্তরের বিশেষ ব্যারিকেডের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টিকিট ছাড়া ট্রেনে ভ্রমণ দণ্ডনীয় অপরাধ। বিষয়টা সাধারণ মানুষেরও বোঝা উচিত। আমরা আশা করছি-টিকিট যার তিনিই ট্রেনে ভ্রমণ করবেন। ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাসের ভাষ্য, তাদের চেষ্টার ত্রুটি থাকে না। তবে শত শত মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তিনি আরও বলেন, দিন দিন ট্রেনের ছাদে মানুষের ওঠা কমে আসছে। ট্রেনে সংখ্যা বাড়লে এমনটা একসময় একেবারেই থাকবে না।

জানা গেছে, রেল কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন রাজধানী থেকে ৮২টি আন্তঃনগর ট্রেনে ৩৩ হাজার ৫০০ যাত্রী পরিবহণ করবে। অনলাইনে ১২৫টি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবির জানান, ঈদের সময় যাত্রীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী টিকিট দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে প্রতিবারই অতিরিক্ত স্পেশাল ট্রেন ও কোচ সংযুক্ত করা হয়। এবারও ১৬টি আন্তঃনগর ট্রেন এবং ৭২টি কোচ যুক্ত করা হবে। টিকিট কালোবাজারি রোধে এবারই প্রথম ওয়ান টাইম পিন (ওটিপি) ব্যবহার করা হচ্ছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বেশ কয়েকটি সেকশনে অতিরিক্ত কোচ ও ইঞ্জিন রাখা হচ্ছে।

রেলওয়ে অবকাঠামো দপ্তর সূত্র বলছে, বিশেষ করে ঈদের তিন দিন আগে থেকে একেকটি ট্রেনে নির্ধারিত যাত্রীদের চেয়ে প্রায় ৫-৬ গুণ যাত্রী চলাচল করে। ছাদে যাত্রী ওঠায় ট্রেনের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। ওই সময় চরম ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালাতে হয়। শিডিউল বিপর্যয়ও ঘটে। এছাড়া ঝুঁকি নিয়ে চলা ট্রেনগুলোর গতি কমিয়ে চালাতে হয়।

রংপুর, একতা, মোহনগঞ্জ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ, চট্টলাসহ অন্তত ২০টি আন্তঃনগর ট্রেনের ইঞ্জিনের দুপাশে যাত্রীর জটলা বাঁধে। চট্টগ্রামগামী যাত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, গত ঈদে শত চেষ্টায় টিকিট পেলেও সিটে বসতে পারিনি। ২ ঘণ্টা বিলম্বে আসা ট্রেন কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছতেই শত শত মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সিট দখল করে বসে বিনা টিকিটিরাও। দরজার সামনে কোনোমতে দাঁড়িয়ে তিনি গন্তব্যে পৌঁছেছেন। ট্রেনের এমন অব্যবস্থাপনা রোধ না করতে পারা-রেলের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।

একাধিক যাত্রী জানান, টিকিট কেটে কাঙ্ক্ষিত সিটে বসতে না পারা খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশ, আরএনবি সদস্যদের বিশেষ তৎপর হতে দেখা যায় না। কমলাপুর স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানান, মানুষের বাঁধ কি আইন বা ঘোষণা দিয়ে রোধ করা যায়। শুধু বিলম্বিত ট্রেন নয়, নির্ধারিত সময়ের ট্রেন পৌঁছতেই যাত্রীরা হুড়মুড় করে ট্রেনে উঠে পড়ে।

ঊষার আলো-এসএ