ঊষার আলো ডেস্ক : রাশিয়া ও ইউক্রেন খাদ্যশস্য পরিবহন পুনরায় চালু করতে জাতিসংঘ ও তুরস্কের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। শুক্রবার (২২ জুলাই) এই চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট কিছুটা নিরসন হতে পারে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও ইউক্রেনের অবকাঠামোমন্ত্রী ওলেক্সান্ডার কুব্রাকভ পৃথকভাবে জাতিসংঘ ও তুর্কি কর্মকর্তাদের সঙ্গে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। ইস্তাম্বুলে এক অনুষ্ঠানে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এর ফলে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে খাদ্যশস্য পরিবহন পুনরায় চালু হতে পারে।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, পাঁচ মাসের যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার সঙ্গে একই নথিতে তারা স্বাক্ষর করবে না। ফলে চুক্তিতে দুটি দেশ পৃথকভাবে স্বাক্ষর করে।
ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া কৃষ্ণ সাগর দিয়ে খাদ্যশস্য রফতানি আগস্টের মাঝামাঝিতে পুনরায় শুরু হতে পারে বলে প্রত্যাশা করছেন কূটনীতিকরা।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেছেন, কৃষ্ণ সাগরে একটি আশার আলো, সম্ভাবনার আলো দেখা যাচ্ছে। এর ফলে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে আসবে।
জাতিসংঘের ধারণা, যুদ্ধের কারণে বিশ্বের আরও ৪ কোটি ৭০ লাখ মানুষ চরম অনাহারের মুখে রয়েছে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেছেন, তিনি আশা করছেন এই চুক্তি শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনে শান্তির পথ দেখাবে।
খাদ্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকায় বেশ কিছুদিন ধরে এই চুক্তির জন্য তুরস্ক এবং জাতিসংঘ রাশিয়া ও ইউক্রেনের ভেতর মধ্যস্থতা করছিল।
শেষ পর্যন্ত শুক্রবার (২২ জুলাই) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে একটি চুক্তি হয়েছে যাতে রাশিয়া ও ইউক্রেন ছাড়াও জাতিসংঘ এবং তুরস্ক সই করেছে।
ইস্তাম্বুলে গিয়ে রাশিয়ার হয়ে চুক্তিতে সই করেন তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগু। ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সে দেশের অবকাঠামো বিষয়ক মন্ত্রী ওলেকসান্দার কুবরাকভ।
চুক্তির ফলে আওতায় রাশিয়া কৃষ্ণসাগরে তাদের অবরোধ শিথিল করবে যাতে ইউক্রেন থেকে জাহাজে করে খাদ্য রপ্তানি হতে পারে।
তুরস্ক বলছে, এই চুক্তির ফলে শুধু ইউক্রেন নয়, কৃষ্ণসাগর দিয়ে রাশিয়ার খাদ্য রপ্তানিও সহজ হবে।
পাঁচ মাস আগে যুদ্ধ শুরুর পরপরই রাশিয়া ইউক্রেনের উপকূলের কাছে কৃষ্ণসাগরে নৌ অবরোধ দিলে ইউক্রেনের রপ্তানি মুখ থুবড়ে পড়ে।
ইউক্রেন জুড়ে বিভিন্ন গুদামে প্রচুর খাদ্যশস্য মাসের পর মাস রপ্তানির জন্য পড়ে রয়েছে। কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী ওডেসা বন্দরে গুদামেই এখন দুই কোটি টনের মত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে।
এগুলো এখন আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন যেসব দেশে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে সেখানে রপ্তানি করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যে মাত্রায় অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে তাতে এই চুক্তি শেষ পর্যন্ত কতটা কাজ করবে এবং কতদিন তা টিকবে তা নিয়ে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে যথেষ্ট আশংকা রয়েছে।
বিবিসির কূটনৈতিক সংবাদদাতা পল অ্যাডামস বলছেন, কাগজে কলমে চুক্তি সবার জন্য অত্যন্ত সুখবর। পাঁচ মাস বাদে ইউক্রেন খাদ্য রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছে। ফলে, যেসব দেশে ইউক্রেনের গম ও তেল বীজের ওপর নির্ভরশীল তারা কিছুটা হলেও হাফ ছেড়ে বাঁচবে।।
চুক্তি হতে যাচ্ছে তা নিশ্চিত হওয়ার পরপরই বিশ্ব বাজারে গমের দাম বেশ কিছুটা পড়ে গেছে।
তার নিজের খাদ্য রপ্তানিতে রাশিয়ারও কিছু অসুবিধা দূর হবে। সবচেয়ে বড় কথা, খাদ্যকে রাশিয়া অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে এবং বহু দেশে দুর্ভিক্ষের কারণ হচ্ছে বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা খ-নের একটি সুযোগ রাশিয়া পাবে।
চুক্তির ঝুঁকি কোথায় : কিন্তু পল অ্যাডামস বলছেন, এমন অনেক ঝুঁকি রয়েছে যাতে যে কোনো সময় এই চুক্তি ধসে পড়তে পারে।
প্রথম কথা, রাশিয়া যাতে সাগর পথে সৈন্য সমাবেশ না করতে পারে তার জন্য কৃষ্ণসাগরে উপকূলের কাছে বিশাল এলাকায় মাইন পেতে রেখেছে ইউক্রেন। জাহাজ বন্দরে ভেড়ার জন্য এখন তাদেরকে সাগরে মাইন-মুক্ত ‘সেফ প্যাসেজ’ নিশ্চিত করতে হবে।
ইউক্রেনের ভয়, সেটা করলে ভবিষ্যতে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ভবিষ্যতে তার সুযোগ নিতে পারে।
এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার রাতে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপত্তার গ্যারান্টি এবং কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ‘শক্ত সামরিক অবস্থান’ অব্যাহত রাখার গ্যারান্টি দেয়া হলেই তারা এই চুক্তিতে সই করবে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার শর্ত যে খাদ্য রপ্তানির সূত্রে ইউক্রেন যেন কোনোভাবেই সাগর পথে অস্ত্র নিয়ে না আসতে পারে।
শিপিং কোম্পানিগুলো ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে যেতে কতটা আগ্রহী হবে সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। কারণ, সাগরে কোনও একটি জাহাজে একটি বিস্ফোরণ হলেই এই চুক্তি ভেস্তে যাবে। এরপর কোনও জাহাজই আর ধারে কাছে ভিড়বে না।