UsharAlo logo
রবিবার, ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লিবিয়ায় দালালের নির্যাতনে নিহত রাসেলের লাশ ফেরতে ১০ লাখ টাকা দাবি

ঊষার আলো রিপোর্ট
ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫ ৬:১২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ইতালি নেওয়ার কথা বলে দালালের খপ্পরে পড়ে রাসেল মিয়া নামে একজনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে লাশ ফেরত দিতে ১০ লাখ টাকা দাবি করছে দালাল চক্র।

নিহত রাসেল মিয়া উপজেলার ধরমণ্ডল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের লাওস মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় পর থেকে দালাল লিলু মিয়ায় বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে।

পরিবারের দাবি, ২১ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ায় মাফিয়া চক্রের লোকজন বিষাক্ত ইনজেকশন প্রয়োগ করে রাসেলকে হত্যা করে। ২২ ফেব্রুয়ারি এক প্রবাসীর মাধ্যমে মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারে পরিবার।

জানা যায়, পরিবারের অস্বচ্ছতাকে দূর করার জন্য ২০২৪  সালে  পৈতৃক ভিটা বিক্রি করে পাড়ি জমান লিবিয়ায়। স্থানীয় দালাল লিলু মিয়ার সঙ্গে কথা ছিল লিবিয়া থেকে রাসেলকে ইতালি পৌঁছে দেওয়া হবে; কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে যে এক নিষ্ঠুর ফাঁদ অপেক্ষা করছিল, তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। অবশেষে মাফিয়া চক্রের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে নিভে গেল এক তরুণ প্রাণ। তার মৃত্যুর খবরে এখন পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে রাসেল সবার বড়। ২০২৪ সালের প্রথমদিকে পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে পরিবারের শেষ সম্বল পৈতৃক ভিটা বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা তুলে দেন একই গ্রামের মানবপাচারকারী লিলু মিয়ার হাতে। কথা ছিল লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠানো হবে; কিন্তু বিদেশের মাটিতে পৌঁছে তার কপালে জোটে এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা।

সেখানে গিয়ে তাকে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয় লিবিয়ার একটি স্থানীয় দালাল চক্রের হাতে। এরপরই শুরু হয় দুঃস্বপ্নের অধ্যায়। মাফিয়া চক্র রাসেলকে নির্যাতন করে একাধিকবার ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ৩০ লাখ টাকা। সর্বশেষ আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করে চক্রটি। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় ইনজেকশন প্রয়োগ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের।

নিহতের পিতা লাওস মিয়া বলেন, আমার জীবনের শেষ সম্বল বসতভিটা ও ফসলি জমি বিক্রি কইরা কয়েকধাপে ৫০ লাখ টাকা দিছি। আরও টাকা চাইত কিন্তু পরবর্তীতে টাকা দিতে না পারায় আমার ছেলেকে হত্যা করছে দালাল লিলু মিয়া ও মাফিয়া চক্র।

রাসেলের মৃত্যুর বিষয়ে কথা বলতে দালাল লিলু মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার পরিবারও পলাতক আছে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে তার ঘর ভাঙা, টিনের চালা ও বেড়া খুলে নিতে দেখা যায় কয়েকজনকে।

নিহতের চাচা ফখরুল ইসলাম জানান, রাসেলকে দালালরা নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছিল। সেখানে সর্বশেষ সাড়ে ৯ লাখ টাকা চাওয়া হয়, না দিতে পারায় মেরে ফেলেছে। এখন লাশ ফেরত দিতে ১০ লাখ টাকা দাবি করছে। এখন কাকে টাকা দেব আমরা? টাকা দিলেও যে লাশ দিবে তার কি নিশ্চিত আছে?

ভাঙচুরের বিষয়ে তিনি বলেন, কারা এগুলো করছে আমরা জানি না। তবে দালালের ওপর মানুষের অনেক ক্ষোভ রয়েছে।

ধরমণ্ডল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, রাসেলকে বাঁচাতে তার পরিবার প্রায় ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে। কিন্তু টাকা দিয়েও বাঁচাতে পারেনি। যারা মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। রাসেলের মতো আর কোনো তরুণ যেন অকালে প্রাণ হারায়।

নাসিরনগর থানা ওসি মো. খাইরুল আলম বলেন, ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনা নাসরিন বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যারা মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

ঊষার আলো-এসএ