UsharAlo logo
মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শহীদ এমএ গফুরের ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী

usharalodesk
জুন ৫, ২০২৩ ৫:০১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা, খুলনাঃ  সোমবার (৬ জুন) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সহচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ভাষা সৈনিক খুলনার পাইকগাছা-কয়রার কৃতি সন্তান সাবেক এমএনএ শহীদ এমএ গফুরের ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রতিবছর ন্যায় এবছরও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শহীদ এএম গফুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন, আলোচনা সভা, দোয়া অনুষ্ঠান এবং এতিম শিশুদের মাঝে উন্নতমানের খাবার বিতরণ সহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে বলে এমএ গফুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র, পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার ইকবাল মন্টু জানিয়েছেন।

স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস অর্ধশত বছরের আর মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ৭০ বছরের। অথচ দীর্ঘ এই সময়ে ইতিহাসের পাতায় একদিকে ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ভাষা সৈনিক শহীদ এমএ গফুরের। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার পরও এখনো পর্যন্ত মেলেনি স্বাধীনতা পদক। দেরিতে হলেও বর্তমান সরকারের সময়ে বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন শহীদ এম,এ গফুর ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি এবং স্বাধীনতা পদক পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন শহীদ এমএ গফুরের পরিবার ও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত এলাকাবাসী।

খুলনার ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী এমএ গফুর বাংলা ১৩৩২ বঙ্গাব্দে ২৬ বৈশাখ খুলনার (বর্তমান) কয়রা উপজেলার হরিনগর গ্রামের এক সম্ভান্ত্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মৃত জনাব আলী সানা, মাতা সোনাবান বিবি। কর্মময় জীবনে তিনি যেমন ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছের মানুষ, তেমনি ছিলেন সাধারণ মানুষের কাছে একজন আলোকিত ব্যক্তি। আজও অবহেলিত রয়েছে সংগ্রামী এ ব্যক্তির নামে নিজ এলাকায় গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো। শহীদ এম এ গফুর ছিলেন ৪ ভাই ও দু’বোনের মধ্যে পঞ্চম। তিনি কপিলমুনি স্কুল থেকে প্রাইমারী শেষ করে পাশ্ববর্তী আশাশুনির বুধহাটা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে ভর্তি হন খুলনার ঐতিহ্যবাহি বিএল কলেজে। ছাত্র জীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন (ন্যাপ) রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। এইচএসসি পাশ করার পর বিএ পড়াকালীন শুরু হয় ৫২ এর ভাষা আন্দোলন। ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকার রাজপথে রক্তঝরার খবরটি খুলনায় পৌছায় পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারী আর তখনই রাজপথে নেমে আসে খুলনার ছাত্রসমাজ। এদিন সমীর আহম্মেদের নেতৃত্বে নগরীর আহসান আহম্মেদ রোডের এ কে শামসুদ্দিন আহমেদ শুনুর আজাদ গ্রহন্থাগারে প্রথম বৈঠক করেন খুলনার ছাত্রসমাজ।

বৈঠকে এমএ গফুরসহ উপস্থিত ছিলেন আবু মোহাম্মদ ফেরদৌস, এমএ বারী, নূরুল ইসলাম দাদু, এসএম জলিল, জাহিদুল হক ও তোফাজ্জেল হোসেনসহ অনেকেই। বৈঠকে কঠোর আন্দোলনের সিদ্ধান্তনেন উপস্থিত সকলেই। পরবর্তী এ আন্দোলনে নেতৃত্বদেন এমএ গফুর। তখনকার মুসলিমলীগের গুন্ডা ও পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে গফুরসহ তার সহকর্মীরা পায়ে হেঁটে নগরির স্কুল, কলেজগুলোতে গিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে ভাষা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন। পুলিশের হয়রাণীর শিকার ও মিথ্যা মামলায় জেলও খাটেন আন্দোলনের অনেকেই। এম এ গফুর বিএল কলেজ থেকে বিএ পাশ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগে যোগদান করার মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে ঝাঁপিয়ে পড়েন গণ অভ্যূত্থান আন্দোলনে। ধীরে ধীরে তিনি আস্থা এবং বিশ্বাস অর্জন করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি পাইকগাছা-কয়রা ও আশাশুনি এলাকা থেকে এমএনএ নির্বাচিত হন।

এরপর তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি ৯নং সেক্টরে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ৯ মাসের স্বসস্ত্র সংগ্রামে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এরপর এমএ গফুরের অনুরোধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী সফর করেন খুলনার পাইকগাছা উপজেলার আলমতলা এলাকায়। দক্ষিণ উপকূলীয় এ অঞ্চলের বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুখী, সমৃদ্ধিশালী সোনার বাংলা গড়ার শুভ সূচনা করেন। বেড়িবাঁধ নির্মানসহ অন্যান্য সামাজিক উন্নয়ন কাজ ও সহজ সরল জীবন যাপনের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে এমএ গফুর হয়ে ওঠেন একজন আলোকিত ব্যক্তি। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্শ¦ান্বিত হয়ে ওঠেন স্বার্থন্বেষী একটি মহল। ১৯৭২ সালের ৬ জুন আততায়ীর গুলিতে নিহত হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ভাষা সৈনিক এমএ গফুর। ১৯৯০ সালে মৃত্যুবরন করেন সহধর্মীনি লায়লা বেগম। বরেন্য এ ব্যক্তির নামে জন্মস্থান হরিনগর ও পাইকগাছা সরল এলাকায় দু’টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উপজেলা সদরে একটি মিলনায়তন ও সরল এলাকার প্রাইমারী স্কুলের সাথেই একটি স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলা হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো পড়ে রয়েছে অবহেলায়।

বর্তমানে শহীদ এম এ গফুরের ৭ ছেলে মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে হোসনেয়ারা আমেরিকায়, পুত্র আনোয়ার ইকবাল মন্টু বর্তমান পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি’র  দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পৌর সদরের সরল গ্রামে এবং আনোয়ার জাহিদ, কন্যা নিশাত বানু ও তামারা বানু খুলনায় বসবাস করছেন। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে স্থান করে নিলেও এ আন্দোলনে যাদের অবদান ছিল তাদের অনেকেরই স্থান হয়নি ইতিহাসের পাতায়। তাদেরই মধ্যে তেমনই একজন শহীদ এমএ গফুর। ভাষা আন্দোলনে এম এ গফুরের অবদান এলাকাবাসী স্মরণ করলেও আজও ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ এমএ গফুরের। অনুরুপভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হওয়া স্বত্ত্বেও আজও মেলেনি স্বাধীনতা পদক। যদিও সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না পাইকগাছায় যোগদান করার পর তিনি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই দুইবার শহীদ এমএ গফুরকে স্বাধীনতা ও ভাষা সৈনিকের মরোনত্তর সম্মাননা প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে শহীদ এমএ গফুরের জৈষ্ঠ্য পুত্র আনোয়ার ইকবাল মন্টু জানান, ভাষা আন্দোলনে খুলনার অবদানের বিষয়টি ইতিহাসে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। যার ফলে অনেকের ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই মেলেনি। ওই সময় যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং সক্রিয় অংশগ্রহন করেছিলো তাদেরকে ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি দিয়ে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করা উচিত এবং একইসাথে আমার পিতা হিসেবে নয় শহীদ এমএ গফুর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হওয়ায় আমরা আশা করবো বর্তমান সরকার স্বাধীনতা পদক দিয়ে শহীদ এমএ গফুরকে সম্মানিত করবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ হেলাল উদ্দীন এমপি’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ভবিষ্যতে দেশ এবং দলের জন্য দলের পক্ষ থেকে যে দায়িত্ব অর্পন করা হবে তা যথাযথভাবে পালন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু।