UsharAlo logo
রবিবার, ১৮ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সহসা কাটছেনা বিদ্যুৎ সংকট : সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

koushikkln
জুলাই ৫, ২০২২ ১১:৫৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : দেশজুড়ে লোড শেডিং পরিস্থিতি সহসা কমছে না। বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম বৃদ্ধি, গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মঙ্গলবার (০৫ জুলাই) প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বিশে^র বিভিন্ন দেশে বিদ্যুৎ, জ¦ালানি তেলের সংকটের কথা তুলে ধরে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার এবং গ্রামাঞ্চলে আট থেকে ১০ বার লোড শেডিং হচ্ছে। রবিবার থেকে হঠাৎ করেই সারা দেশে লোড শেডিং বেড়ে যায়। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীও এক ফেসবুক স্টাস্টাসে লোডশেডিংয়ের জন্য দু:খ প্রকাশ করেন। তিনি এ সমস্যার জন্য গ্যাস সংকটকে দায়ী করেন।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, গত জুনের শেষ সপ্তাহে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনতে প্রতি ইউনিটে (এমএমবিটিইউ) খরচ হয়েছিল প্রায় ২৫ ডলার। সেটি এখন হয়ে গেছে প্রায় ৪০ ডলার। এ কারণেই সরকার স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ অবস্থায় জাতীয় গ্রিডে যে পরিমাণ গ্যাস ঘাটতি হচ্ছে, তা দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে জোগান দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য বেশ কয়েকটি কূপে ওয়ার্কওভার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা তিন হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গড়ে সরবরাহ করা হয় তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। তার মধ্যে দেশে উৎপাদিত গ্যাসক্ষেত্র থেকে আসে দুই হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বাকিটুকু পূরণ করা হয় আমদানীকৃত এলএনজি দিয়ে। গত কয়েক দিন ধরে গ্যাসের সরবরাহ ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট কমিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে দুই হাজার ৭৫০ থেকে দুই হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গত মাসে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ করা হয় দৈনিক ৭৫০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। দুই দিন ধরে কমিয়ে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। এখন শুধু দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ওমান ও কাতার থেকে আসা এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে।

গ্যাসসংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় চাহিদামতো বিদ্যুৎ পাচ্ছে না বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানিগুলোও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্যাসসংকটের কারণে গত কয়েক দিনে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। এদিকে জ্বালানি তেলের দামও চড়া। দিনে ১০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান করছে বিপিসি। তাই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে লোড শেডিং দিতে হচ্ছে। ’

চাহিদা বাড়লেও বিদ্যুতের উৎপাদন এখনও কম। লোডশেডিংও গত কয়েক দিনের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানিই বলছে, লোডশেডিং করা হচ্ছে ৪৬০ মেগাওয়াট। প্রতিটি ফিডারে নিয়ম মাফিক এই লোডশেডিং করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার (০৫ জুলাই) দিনে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ১০ হাজার ৮৩১ মেগাওয়াট এবং রাতে পিক আওয়ারে ১২ হাজার ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। কিন্তু দিনে-রাতে সবসময়ই এর চেয়ে অন্তত ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা রয়েছে।

আরইবি বলছে, দেশের গ্রামীণ জনপদে বিদ্যুতের অবস্থা বেশি খারাপ। চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ কম থাকায় ৬৯টি গ্রিডের সবক’টিতে লোডশেডিং করা হচ্ছে।

লোডশেডিং হচ্ছে- কড্ডা, কবিরপুর, জয়দেবপুর, টঙ্গী, রাজেন্দ্রপুর, ভুলতা, ধামরাই, সাভার, মানিকগঞ্জ, সোনারগাঁও, নরসিংদী, ভালুকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, মাগুরা, যশোর, বেনাপোল, ফেনী, চৌমুহনী, কুষ্টিয়া, খুলনা, বাগেরহাট, মংলা, চুয়াডাঙ্গা, ফরিদপুর, যশোর, নওয়াপাড়া, নড়াইল, শাহাজীবাজার, শ্রীমঙ্গল, কূলাউড়া, ফেঞ্চুগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কচুয়া, ছাতক, বিয়ানীবাজার, দোহাজারী, শাহমীরপুর, শিকলবাহা, বারইরহাট, হাটহাজারী, কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জ, শাহজাদপুর, পাবনা, ঈশ্বরদী, ভাঙ্গুড়া, আমনুড়া, পাবনা, নওগাঁ, নিয়ামতপুর, আমনূরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, কাটাখালী, বগুড়া, মহাস্থানগড়, পলাশবাড়ী, পূর্ব সাদিপুর, রংপুর, মিঠাপুকুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট।

আরইবির অধীন সমিতিগুলোর মধ্যে আছে—ঢাকা-১-এ ১০৫ মেগাওয়াট, ঢাকা-৩-এ ১৫ মেগাওয়াট, গাজীপুর-১-এ ৮৫, গাজীপুর-২-এ ২৩, মানিকগঞ্জ-১৫, নরসিংদী-১-এ ৩৫, নরসিংদী-২-এ ৩০, নারায়ণগঞ্জ-১-এ ২২, নারায়ণগঞ্জ-২-এ ২৫, ময়মনসিংহ-১-এ ৪০, ময়মনসিংহ-২-এ ৭৬, ময়মনসিংহ-৩-এ ২৩, জামালপুর ৫০, নেত্রকোনা ৩০, শেরপুর ২৫, টাঙ্গাইল ৩০, কিশোরগঞ্জ ৬০, মাগুরা ১২, ফরিদপুর ১০, সাতক্ষীরা ১৮, মেহেরপুর ৩০, কুষ্টিয়া ১০, যশোর-১-এ ১৭, যশোর-২-এ ১৬, বাগেরহাট ১২, খুলনা ৩৭, পিরোজপুর ০৪, নোয়াখালী ৩০, হবিগঞ্জ ৩৫, ফেনী ৩০, চাঁদপুর-১-এ ২০, সুনামগঞ্জ ১৫, মৌলভীবাজার ১৮, সিলেট-১-এ ২৫, চট্টগ্রাম-১-এ ৪৮, চট্টগ্রাম-৩-এ ১৫, কক্সবাজার ৩৫, সিরাজগঞ্জ-১-এ ২০, সিরাজগঞ্জ-২-এ ২২, পাবনা-১-এ ২০, পাবনা-২-এ ২১, বগুড়া-২-এ ১২, নওগাঁ-১-এ ৩০, রাজশাহী ৩৪, গাইবান্ধা ৪, দিনাজপুর-১-এ ৩৭, রংপুর-১-এ ২৩, রংপুর-২-এ ৩০, ঠাকুরগাঁও ২৭, কুড়িগ্রাম ১৯ মেগাওয়াট করে লোডশেডিং করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল ৪০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে লোডশেডিং করা হয়েছে একঘণ্টা করে।

পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ওজোপাডিকো’র এক কর্মকর্তা জানান, তাদের অধীন এলাকায় মোট বিদ্যুতের চাহিদা ৬১৩ মেগাওয়াট। বিপরীতে সোমবার রাত ৯টায় ঘাটতি হয়েছে ৬২ মেগাওয়াট।

জ¦ালানি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বর্তমান বিদ্যুৎ সংকট সহসা উত্তরণের সম্ভাবনা নেই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অস্থির জ¦ালানি তেল ও এলএনজি মূল্যবৃদ্ধি কমে না আসলে সংকট নিরসন হবে না। শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশে^র বিভিন্ন দেশকেই এ সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে।