UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাতক্ষীরায় নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধা  বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর হাজারো মানুষ

koushikkln
মার্চ ২১, ২০২১ ৯:০৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আক্রান্ত হচ্ছে পানি বাহিত নানান অসুখে

বি. এম. জুলফিকার রায়হান, তালা : জলাবদ্ধবার কারণে সাতক্ষীরার কয়েকটি ইউনিয়নের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর হাজার হাজার মানুষ সুপেয় পানি, নিরাপদ পায়খানা এবং হাইজিন সংকটে ভুগছেন। নিরাপদ পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার অভাবে এখানকার পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মানুষরা পানি বাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। এলাকার অধিকাংশ মানুষ স্বল্প শিক্ষিত এবং অর্থনৈতিক ভাবে তারা দরিদ্র ও অতি দরিদ্র। যে কারনে পানি বাহিত নানান রোগে আক্রান্ত হলেও সচেতনতা ও আর্থিক সংকটে তারা পরিপূর্ণ চিকিৎসা নিতে পারছেনা।


একটি বে-সরকারি সংস্থার জরিপ রিপোর্ট সূত্রে জানাগেছে, সাতক্ষীরা সদরের আগরদাড়ি ইউনিয়নের বাবুলিয়া গ্রামের ৪৬৫ পরিবার, ইন্দ্রিরায় ৪৭২ পরিবার, চুবাড়িয়া গ্রামে ৮৫০ পরিবার, রামেরডাঙ্গায় ৫৮৭ পরিবার ও কাশিমপুর গ্রামে ১২৮৯ পরিবারের ১৮ হাজার ৩১৫জন নারী, শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী এবং পুরুষ নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও হাইজিন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অপরদিকে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়ায় ৬৯৬ পরিবার, বলাডাঙ্গায় ৬৮৬ পরিবার, মাধবকাটি গ্রামে ১৮০ পরিবার, আখড়াখোলায় ২৯৮পরিবার ও ওয়ারিয়া গ্রামে ৫৯৬ পরিবারের ১২ হাজার ২৮০ জন সদস্য ভুগছেন নানা রোগে। সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩৩টি গ্রামের শত শত পরিবার এখনো নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা এবং হাইজিন সমস্যায় আক্রান্ত। পুষ্টিহীনতার পাশাপাশি তারা ডায়রিয়া, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, চুলকানি, পাচড়া, উচ্চ রক্তচাপ, হাপানীসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব এলাকায় অধিকাংশ মানুষ আর্সেনিক ও আয়রনযুক্ত অগভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করেন। আবার এসব পরিবারের অধিকাংশ সদস্যরা স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করেন না।
বল্লী ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গ্রামের মেছের গাজীর স্ত্রী লাইলী বেগম, ঝাউডাংগা ইউনিয়নের বলাডাংগা গ্রামের কাশেম সরদারের স্ত্রী শরবানু বেগম, কলেজ ছাত্রী রুপা পারভীন, আগরদাড়ি ইউনিয়নের বকচরা গ্রামের শহিদুল্লাহ সরদার, হাফিজুর রহমানের স্ত্রী সেলিনা খাতুনহ অনেকেই বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ও হাইজিন সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, তাদের এলাকা জলাবদ্ধতা (বৃষ্টির সময় ৭/৮মাস জলাবদ্ধ থাকে) এবং লবণাক্ত থাকায় খাবার পানির কোন ব্যবস্থা নেই। প্রায় ২/৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এক কলস খাবার পানি আনতে হয়। আবার এক ড্রাম পানি ৩০ টাকা দিয়ে কিনে খাওয়া লাগে। বর্ষা মৌসুমে ভিটেবাড়িতে পানি জমে থাকায় ল্যাট্রিন করার মতো জায়গাও থাকেনা। আর লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, চুলকানী, পাচড়া, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তারা।
তারা আরও বলেন, বেতনা নদী ভরাট হওয়ায় এবং এলাকায় শত শত মাছের ঘেরের কারণে পানি সঠিকপথে নিষ্কাশন হতে না পারায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে আগরদাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. মজনুর রহমান মালি জানান, এলাকায় খাবার পানির সমস্যা প্রকট। তাদের খাবার পানি ও স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করতে সরকারি বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরী। উত্তরণ দীর্ঘদিন ধরে অত্র এলাকায় হতদরিদ্র ও সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন এ্যাডভোকেসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। উত্তরণসহ বিভিন্ন বে-সরকারি সংস্থার কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান জানান, বল্লী, ঝাউডাঙ্গাসহ কয়েকটি এলাকায় লেয়ার না পাওয়ায় ডিপটিউবওয়েল বসানো সম্ভব হয়ে উঠছেনা। তবে নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা আগের চেয়ে বর্তমানে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। খোলা স্থানে মলত্যাগের হারও প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
উত্তরণ’র ওয়াই ওয়াশ প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী হাসিনা পারভীন জানান, বেইজলাইন রিপোর্ট, ২০১৮ তে দেখা যায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় নিরাপদ পানির ব্যবস্থা ছিল ৪১%, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ছিল ৫৪% হাইজিন ছিল ৪৮% এবং সাতক্ষীরা পৌরসভায় নিরাপদ পানির ব্যবস্থা ছিল ৬৪%, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ছিল ২৮% হাইজিন ছিল ৯৬%। সাইক্লোন বুলবুল এবং সাইক্লোন আম্ফানে এলাকা ল-ভ- এবং বৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতার কারণে সেই অবস্থার কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাতক্ষীরা পৌরসভা এবং সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আঁগরদাড়ী, বল্লী ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নে মোট ২৪৩টি (২০০পরিবারের জন্য একটি মানচিত্র) সামাজিক মানচিত্রের (পানি,স্যানিটেশন ও হাইজিন) মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা গেছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় নিরাপদ পানির ব্যবস্থা ২৮%, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ২৮% হাইজিন ৬৮% এবং সাতক্ষীরা পৌরসভায় নিরাপদ পানির ব্যবস্থা ৪৫%, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ৪৮% হাইজিন ৯২%।