মামলার স্বাক্ষ্য গ্রহণ শুরু
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট্য খুলনা জেনারেল হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের দায়ের করা মামলায় আদালতে প্রথম স্বাক্ষী গ্রহণ শুরু হয়েছে। এই সমরয় আদালতে মামলায় চার্জশিট ভুক্ত আসামি খুলনা সাবেক সিভিল সার্জন ডা: সুজাত সহ ৬ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আসামিরা হলেন তৎকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করা খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ ও সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) প্রকাশ কুমার দাস, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) মো: রওশন আলী, ক্যাশিয়ার তপতী সরকার ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: এস এম মুরাদ হোসেন। মঙ্গলবার ৮ এপ্রিল খুলনা বিভাগীয় স্পেশাল আদালতে প্রথম এই মামলা স্বাক্ষী গ্রহণ শুরু হয়। বিজ্ঞ বিচারক মো: আশরাফুল ইসলাম পরবর্তী স্বাক্ষীর জন্য আগামী ২৯ মে দিন ধার্য্য করেন।
এই মামলার বাদী দুদকের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক খন্দকার কামরুজ্জামান বর্তমানে বরিশাল জেলায় কর্মরত তিনি বলেন, মঙ্গলবার ৮ এপ্রিল খুলনা বিভাগীয় স্পেশাল আদালতে এই মামলায় প্রথম স্বাক্ষী গ্রহণ শুরু হয়েছে। এ সময় চার্জশিটভুক্ত ৬ আসামিরাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। স্বাক্ষী শেষে বিজ্ঞ বিচারক মো: আশরাফুল ইসলাম পরবর্তীতে স্বাক্ষী গ্রহণের জন্য আগামী ২৯ মে দিন ধার্য্য করেন। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ ( খুমেক) হাসপাতালে সর্বস্তরের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ সাবেক সিভিল সার্জন ডা: সুজাতকে খুমেক হাসপাতালে উপ-পরিচালক পদে যোগদানে বিরোধী করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন। তাদের দাবি এই সাবেক সিভিল সার্জন ডা: সুজাত ফ্যাসিবাদের দোসর ও দুর্ণীতি মামলায় অভিযুক্ত ও চিহিৃত দুর্ণীতিবাজকে কোন মতেই এই হাসপাতালে উপ-পরিচালক হিসেবে যোগদান করতে দিবে না। সে এই হাসপাতালে যোগদান করলে হাসপাতালের চিকিৎসকবৃন্দদের ভাবমুর্তিক্ষুন্ন হওয়াসহ দুর্ণীতিবাজরা আরও উৎসাহিত হবে। খুমেক হাসপাতালের পুরাতন জরুরি বিভাগের সামনে ‘দুর্ণীতি মামলায় অভিযুক্ত ও ফ্যাসিবাদের দোসর, চিহিৃত দুর্ণীতিাবজ ডা: সুজাত আহমেদকে খুমেক হাসপাতালে উপ-পরিচালক হিসেবে মানি না মানবো না’ যা: সুজাতের ছবিসহ একটি প্যানানো টানানো দেখা যায়।
এ ব্যাপারে খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা: মহসীন আলী ফরাজী বলেন, হাসপাতালে সর্বস্তরের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দরা ডা: সুজাত আহমেদকে হাসপাতালে উপ-পরিচালক হিসেবে যোগদান না করতে পারে সে জন্য তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। তিনি বলেন, এর আগের দিনও তারা একই দাবিতে বিক্ষোভ করে। তিনি বলেন, গতকাল ডা: সুজাত আহমেদ উপ-পরিচালক হিসেবে যোগদানের জন্য হাসপাতালে আসেননি।
উল্লেখ্য, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট খুলনা জেনারেল হাসপাতালে বিদেশগামী যাত্রী ও সাধারণ কোভিড-১৯ রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবে প্রেরণ করা হতো। তবে ল্যাবে যে পরিমাণ নমুনা পাঠানো হতো তার থেকে রোগীর সংখ্যা কম দেখিয়ে টেস্টের ফির টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত মোট ফি আদায় করা হয়েছিল ৪ কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার ১০০ টাকা। তবে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছিল ১ কোটি ৬৮ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ টাকা। বাকি ২ কোটি ৬১ লাখ ৪৪ হাজার ৪০০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুদকের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক খন্দকার কামরুজ্জামান বাদী হয়ে ২০২১ সালের ১৮ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার তদন্ত শেষে তিনি সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আসামিরা হলেন- মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) প্রকাশ কুমার দাস, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) মো: রওশন আলী, ক্যাশিয়ার তপতী সরকার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: এস এম মুরাদ হোসেন, তৎকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করা খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ ও সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ। চার্জশিটে বলা হয়েছে, পরস্পর যোগসাজশে সরকারি রসিদ বইয়ের বাইরে ডুপ্লিকেট রসিদ বই ব্যবহার করে তারা ওই টাকা আত্মসাৎ করেন।
ঊআ-বিএস