UsharAlo logo
শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সামনের ভোটে ভুল শোধরাতে চায় আ.লীগ

usharalodesk
মে ২৮, ২০২৩ ১২:২৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : তৃণমূলের অনৈক্য গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন বড় ধরনের সতর্ক বার্তা দিয়েছে আওয়ামী লীগকে। দলীয় মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লার হারের পেছনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। অনেকেই এর সঙ্গে ভোটের আগমুহূর্তে মার্কিন নতুন ভিসানীতির ঘোষণাকেও যুক্ত করছেন।

এদিকে সামনেই আরও চার সিটি করপোরেশনের ভোট। এরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এমন সময় দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ সিটিতে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও হিসাব-নিকাশ। গাজীপুর সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় টিম পরাজরের কারণ অনুসন্ধান শুরু করেছে। দলের আগামী কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে লিখিত আকারে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে।

নেতারা ধারণা করছেন, কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা আসবে। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, এই নির্বাচনকে তারা শিক্ষা হিসাবে নিতে চান। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের ভুল-ক্রটি সংশোধন এবং ঐক্য সুদৃঢ় করে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে চান তারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী শনিবার বলেছেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন কেমন হয়েছে তা দেশবাসী দেখেছেন। এখানে আমাদের দলীয় প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। এই নির্বাচনে আমাদের মেয়র প্রার্থী কেন পরাজিত হলেন তা ‘পার্টি লেভেলে’ আলোচনা হবে। আমরা কারণগুলো জানার চেষ্টা করব।

তারপর বলতে পারব। মার্কিন ভিসানীতি এক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে অঙ্গীকার তারই প্রতিফলন ঘটেছে গাজীপুরে। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের মতামত প্রদান করেছেন। আওয়ামী লীগ জনগণের এই রায়কে সম্মান জানায়। নির্বাচনে জয়-পরাজয় আছে। এটি আমরা মনে করি। আওয়ামী লীগ চায় আগামী সংসদ নির্বাচনেও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের রায় প্রদান করুক। তবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের এই ফলাফল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলবে না বলে তিনি মনে করেন। মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার প্রভাব এই নির্বাচনে পড়েছে কিনা জানতে চাইলে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমি এখানে আওয়ামী লীগ সরকার, প্রার্থী এবং ভোটারের সদিচ্ছার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে চাই।

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আরও বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে আমরা শিক্ষা হিসাবে নিতে চাই। সামনের সিটি করপোরেশনসহ অন্য সব নির্বাচনে আমাদের ভুল-ক্রটিগুলো শুধরে, কোনো দুর্বলতা থাকলে সেগুলো দূর করতে চাই। তৃণমূল নেতাকর্মীদের আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ করে আরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জীয় হতে চাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, গাজীপুরে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হেরে গেছেন। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে হয়েছে বলে আমি মনে করি। এটার সঙ্গে ভিসানীতিকে যুক্ত করার কোনো অর্থ আমি দেখি না। কারণ প্রত্যেক দেশে একটা নিজস্ব ভিসানীতি রয়েছে। এটা মেনেই তারা ভিসা দিয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, তবে গাজীপুরে সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, সব রাজনৈতিক দলেরই এটা মনে রাখা উচিত যে, গণতন্ত্রে ভোটের মাধ্যমেই জিতে আসতে হবে। ফলে তাদের অভ্যন্তরণী দ্বন্দ্ব দূর করতে হবে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ফলে দলগুলোর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের এ বিষয়গুলোতে আরও বেশি দৃষ্টি দিতে হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, গাজীপুরের ভোটে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার একটা প্রভাব ছিল। তিনি বলেন, গাজীপুরের ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে, তবে এটাকে সুষ্ঠু ভোট বলা যাবে না। কারণ সুষ্ঠু ভোটে ভোটারের বিকল্প পছন্দ করার সুযোগ থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, ভোটে মার্কিন ঘোষণার একটা প্রভাব তো অবশ্যই ছিল। যারা নির্বাচনি কাজে যুক্ত ছিলেন তাদের ওপর একটা চাপ ছিল। এটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

এদিকে সামনে আরও চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এসব নির্বাচনকে ঘিরেও আওয়ামী লীগের কোন্দল স্পষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহীতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকট। প্রকাশ্যেই অনেকে নৌকার বিরোধিতা করছেন। ভোটের আর খুব বেশি সময় বাকি না থাকলেও নৌকার পক্ষে এখনো আওয়ামী লীগের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামানো সম্ভব হয়নি। বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহকে ঘিরে একটি বলয় তৈরি হয়েছে। ওই বলয় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে না। কোন্দলমুক্ত নয় সিলেট এবং রাজশাহীও।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও তার অনুসারীরা এখনো নৌকার প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে মাঠে নামেনি। আর সিলেটে তো দলের স্থানীয় কর্মীদের একটি বিরাট অংশ প্রবাসে রাজনীতি করে আসা আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে গাজীপুরের ভোটের পরে এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

ঊষার আলো-এসএ