ডেভিড হুকসের কথা মনে আছে? হ্যাঁ তিনিই, যিনি ২০০৩ সালের দিকে বাংলাদেশকে এক দিনেই টেস্টে হারানোর রেসিপি দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে! সেটা কিন্তু অজিদের জন্য নতুন কিছু ছিল না। এক দিনেরও কম সময়ে টেস্ট জেতার রেকর্ড কিন্তু তাদের ঝুলিতে ছিল বহু বছর আগেই।
সে যুগে টেস্ট ক্রিকেট সময় না বেধেও খেলা হতো। খেলা চলতেই থাকবে, যতক্ষণ না ফল আসে, এমন ছিল সেসব ম্যাচের নিয়ম। সে যুগে একটা ম্যাচ শেষ হয়ে গিয়েছিল এক দিনেরও কম সময়ে! অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। সে অবিশ্বাস্য ঘটনাটাই ঘটেছিল ৯৩ বছর আগের আজকের এই দিনে।
সে টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। টেস্টটা অস্ট্রেলিয়া জিতেছে, তাতে কোনো প্রকারের বিস্ময় নেই। তবে বিস্ময় এখানে যে, সে টেস্টের লাইন আপে নাম ছিল স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও ক্ল্যারি গ্রিমেটের মতো ক্রিকেটারদের। সে সময়ের সেরা দুই ক্রিকেটারের কেউই অস্ট্রেলিয়ার এই জয়ে অবদান রাখতে পারেননি!
দুজনের কারণটা অবশ্য ভিন্ন। আনফিট ছিলেন বলে ব্র্যাডম্যান নামতে পারেননি ব্যাট হাতে। ওদিকে পেসার গ্রিমেটকে বোলিংয়েই আনা হয়নি। প্রতিপক্ষ যখন তাদের পার্শ্বচরিত্রদেরই খেলতে পারছে না, তখন দলের সেরা বোলারকে আর কী দরকার!
‘আমার দাদীও এর চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারতেন’ – জেফ্রি বয়কটের এই উক্তিটা ক্রিকেটের বিখ্যাত উক্তিগুলোর একটা। সে কথাটাকেও বহু বছর আগে আক্ষরিক রূপ দিয়ে বসেছিল সে ম্যাচটা।
সে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় কে ছিলেন জানেন? বার্ট আয়রনমঙ্গার। বাঁহাতি এই স্পিনার সে ম্যাচে ২৪ রান খরচায় তুলে নিয়েছিলেন ১১ উইকেট। ক্রিকেট ইতিহাসে এর চেয়ে কম রানে ম্যাচে দশ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আর কোনো বোলারের নেই। সে রেকর্ডটা তিনি গড়েছিলেন যখন, এই ম্যাচে তার বয়স ছিল ৪৯ বছর ১০ মাস। ‘দাদা’ বলা চলে না ঠিক, তবে এমন বয়সে এভাবে রেকর্ড গড়ে বসাটাও মোটে স্বাভাবিক কিছু নয়!
ম্যাচের কথায় আসা যাক এবার। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটা জিতেছিল ইনিংস ও ৭২ রানে। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৬ রানেই অলআউট হয়ে যায়। জবাবে অস্ট্রেলিয়া তোলে ১৫৩ রান। আর দক্ষিণ আফ্রিকা জবাব দিতে নেমে একটু উন্নতি করে প্রথম ইনিংস থেকে, তবে আয়রনমঙ্গারের তোপে পড়ে অলআউট হয় ৪৫ রানে। ইনিংস আর ৭২ রানের হারের গ্লানি সঙ্গী হয় তাদের।
সে ম্যাচে সব মিলিয়ে বল মাঠে গড়িয়েছিল ৬৫৬টি। সর্বসাকুল্যে ১০৯.২ ওভার খেলা হয়েছিল সে লড়াইয়ে। তবে লো স্কোরিং ম্যাচে ওভাররেট বেশি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। সেটা চোখে পড়ে সময়ের হিসেবে ম্যাচের দৈর্ঘ্যটা দেখলে।
সে ম্যাচটা মাঠে ছিল সব মিলিয়ে মোটে ৫ ঘণ্টা ৫৩ মিনিট। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বাংলাদেশের মাটিতে দুই সেশনের কিছু বেশি সময় কাটে এই সময়ে। আর এক দিনে খেলা হয় প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টার মতো। সেখানে সেই টেস্টটা খেলা হলো কি না তার চেয়েও প্রায় দেড় ঘণ্টা কম!
টেস্টটা অবশ্য ঠিক এক দিনে শেষ হয়নি। বৃষ্টির কারণে খেলা মাঠে গড়িয়েছিল ৩ দিন। নাহয় ডেভিড হুকসের ওই কথার বহু আগে এক দিনের টেস্ট দেখে ফেলত বিশ্ব!
তবে ম্যাচটা বিশ্বরেকর্ড নিজেদের দখলে রেখেছিল প্রায় ৯২ বছর। ফল বের হওয়া ম্যাচগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন ওভার খেলতে হয়েছে এই ম্যাচে। ১০৭ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে গেল বছর এই রেকর্ডটা নিজেদের করে নিয়েছিল ভারত।
তবে একটা রেকর্ড অবশ্য এখনও আছে দলটার দখলে। সে ম্যাচে সব মিলিয়ে রান উঠেছিল ২৩৪টি, ফল বের হওয়া কোনো ম্যাচে এত কম রানের রেকর্ড ভাঙতে পারেনি আর কোনো ম্যাচই।
ঊষার আলো-এসএ