UsharAlo logo
শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেনা কাঁধে মাথা রেখে নওয়াজের বুকে কাকার

usharalodesk
আগস্ট ১৪, ২০২৩ ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট: পাকিস্তানের অষ্টম তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আজ শপথ নেবেন বেলুচিস্তানের আওয়ামী পার্টির (বিএপি) সিনেটর আনোয়ার উল হক কাকার। বেলুচিস্তানের মতো ছোট্ট জায়গা থেকে রাতারাতি পুরো পাকিস্তানের কর্ণধার হয়ে ওঠা কাকারের সুশীল ভাবমূর্তির মুখোশের আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে তার টিকে থাকার সুযোগ সন্ধানী দূরদর্শিতা।

সেনাবাহিনীর কাঁধে মাথা রেখেই সেনাদোসর শাসকদলের নীতিনির্ধারক নওয়াজ শরিফের বুকে বুক মিলিয়েছেন কাকার। অথচ বনিবনা না হওয়া একসময় নওয়াজের দলও ছেড়ে আসেন কাকার। রোববার এমন ইঙ্গিতই দেওয়া হয়েছে ইসলামাবাদ ভিত্তিক দেশটির স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে।

সরকারের মেয়াদ শেষের মাসখনেক আগে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়ে শোরগোলের আগেই পাকিস্তান মুসলিম লীগে যোগ দেওয়ার জন্য লন্ডনে নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কাকার। পরবর্তীতে জুন মাসে নওয়াজকন্যা মরিয়ম নেওয়াজের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। তারপরই হুট করে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী। নিজের এ অবস্থানে আসতে বহু পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। বহুবার রং বদলেছেন। ছাড়তে হয়েছে বহু দল। ইমরান খান ক্ষমতায় আসার আগে তার সঙ্গেও বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কাকারের।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পরপরই হঠাৎ পালটাতে শুরু করেন তিনি। একসময়ের বন্ধুকে নিয়ে শুরু করেন নেতিবাচক মন্তব্য। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ক্ষমতায় এলেও পাকিস্তানের কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারবে না- এমন মন্তব্যও করেন তিনি। এমনটি পিটিআই কর্মীদের সামরিক আদালতে বিচারেরও দাবি তোলেন তিনি। ক্ষণে ক্ষণে নিজের এমন সুবিধাবাচক আচরণে প্রশ্ন ওঠে- কাকার আপনি কার? ডন, জিইও।

কাকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসাবে আলোচনায় আসার পরপরই আসন্ন নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এর প্রধান কারণ হলো তার সেনাপ্রীতি। পাকিস্তানের রাজনীতিতে ছয় বছর আগেই এই বীজ বুনেছেন তিনি। ডিসেম্বর ২০১৭ সালে, তিনি সেনা প্রেসক্রিপশনে বেলুচিস্তানে তার নিজের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন এবং প্রতিপক্ষ আব্দুল কুদৌস বিজেঞ্জোকে সমর্থন করেন।

আব্দুল কুদৌস বিজেঞ্জো ছয় মাসের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। কাকার ছিলেন মন্ত্রিসভায় তথ্য উপদেষ্টা। আনোয়ার উল হক কাকার ২০১৮ সালের মার্চে পিএমএল-এন-এর সমর্থনে স্বতন্ত্র হিসাবে ছয় বছরের জন্য সিনেটর নির্বাচিত হন। কিন্তু একই মাসে তিনি পিএমএল-এন থেকে দলত্যাগকারীদের একটি দলের অংশ হয়েছিলেন, যারা পরে বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কাকার সদাচারী হলেও বিশ্বস্ত নন। যে ব্যক্তি সিনেটর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার দল থেকে বিচ্যুত হয়ে নিজের প্রাদেশিক সরকারকে উৎখাত করার নেতৃত্ব দেয় তিনি কোনো দলের প্রতিনিধি হতে পারেন না। বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টির (বিএনপি-এম) চেয়ারম্যান আখতার মঙ্গল কাকারের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নওয়াজ শরিফকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি এমন একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন যার মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক রাস্তা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।’ তিনি আরও দাবি করেছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত তার দল এবং পাকিস্তানের মধ্যে আরও দূরত্ব তৈরি করবে।

জোটে নতুন মেহমানে নারাজ শরিক দল : নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনোয়ার উল হক কাকারের নিয়োগে নারাজ নওয়াজ শরিফের মুসলিম লীগ নওয়াজের শরিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। দলটির সিনিয়র নেতা খুরশিদ শাহ জানান, তার পরিবর্তে অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে ভালো হতো। এমনকি তারা কাকারের এ নিয়োগের ব্যাপারে অবগতও ছিলেন না। পাকিস্তান পিপলস পার্টি এ তালিকায় কিছু নাম আগে থেকেই চূড়ান্ত করে রেখেছিল। তাদের মধ্যে ছিলেন সেলিম আব্বাস, জলিল আব্বাস, মোহাম্মদ মালিক ও আফজাল খান। কাকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, সিনেটর কাকারকে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।

কে এই আনোয়ার উল হক কাকার? : আনোয়ার উল হক কাকার বেলুচিস্তানে শিক্ষকতা দিয়ে চাকরিজীবন শুরু করে। এরপর ২০০৮ সালে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএলকিউ) দলের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন। তবে সে নির্বাচনে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) প্রার্থীর নাসির আলী সাহের কাছে তিনি পরাজিত হন। পরবর্তীতে পিএমএলএন দলের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সানাউল্লাহ জেহরির মুখপাত্র হিসাবে তিন বছর কাজ করেন। ২০১৮ সালে জেহরিকে পদত্যাগে বাধ্য করে ৬ বছরের জন্য সিনেটর নির্বাচিত হন। আনোয়ার উল হক কাকার পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের বেলুচি আওয়ামী পার্টির (বিএপি) সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি মানবসম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত সিনেটের স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন। ব্যবসা উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, অর্থ ও রাজস্ব, পররাষ্ট্র এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সদস্য হিসাবেও কাজ করেছেন তিনি।

ঊষার আলো-এসএ