UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

স্ত্রী-সন্তানরা আশ্রয়কেন্দ্রে, চুরির ভয়ে ঘর পাহারায় পুরুষ

usharalodesk
মে ১৪, ২০২৩ ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণার পরও চুরির ভয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন উপকূলের মানুষ। তবে প্রশাসন বাধ্য করে মাত্র ১০ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পেরেছে। গবাদিপশু নিয়ে পাহাড়ি এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র ও আত্মীয় ও স্বজনদের বাড়িতে নারীরা আশ্রয় নিলেও ঘর পাহারা দিচ্ছেন পুরুষ।

পেকুয়ার বাসিন্দা আব্দুল খালেক বলেন, আমাদের এলাকার চুরির প্রবণতা একটু বেশি। তাই স্ত্রী-সন্তানদের আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর আমি ঘর পাহারা দিচ্ছি।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ রোববার (১৪ মে) বিকেলের দিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানতে পারে ঘোষণা দিলেও মোখার অগ্রভাগের প্রভাবে রাত ২টার পর থেকে কক্সবাজারে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় স্থলভাগের ২০-৩০ মিটার উপরে ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করেছে।

পাঁচ লাখের বেশি জনসংখ্যার চকরিয়ার উপকূলীয় ৮ ইউনিয়নে বাস করে দুই লাখের বেশি মানুষ। পাহাড় ঘেষা দশ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বাস করে তিন লাখের বেশি মানুষ। সেখানে ৯৬টি সাইক্লোন শেল্টার ও মুজিবকেল্লায় ধারণক্ষমতা রয়েছে ৮০ হাজার মানুষের।

সিপিপি চকরিয়ার টিম লিডার বলেন, ইউনিয়ন টিম লিডারসহ ১ হাজার ৪০০ ভলান্টিয়ার দুর্যোগ মোকাবিলায় নির্ঘুম কাজ করে যাচ্ছে। ৭০০ পুরুষ সদস্যের চেষ্টায় আশ্রয়কেন্দ্রে ঝুকিপূর্ণ ঘরগুলো থেকে মানুষকে মুজিবকেল্লা ও সাইক্লোন শেল্টারে নেওয়া হয়েছে। সারারাত প্রশাসনের নির্দেশনায় টিমের সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে অন্তত ৬ হাজার নারী ও শিশুকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে পেরেছে। এখনো চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, আশা করছি ঘূর্ণিঝড় পুরোদমে শুরু হওয়ার আগে পুলিশ, আনসার ভিডিপি, সিপিপি ও রেড ক্রিসেন্ট সদস্যদের চেষ্টায় বিপদের ঝুঁকিতে থাকা সবাইকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হবো। ভলান্টিয়ারদের মধ্যে ৭০০ নারী সদস্যও রয়েছে। তাদের অধিকাংশ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে মানুষ ঘর থেকে মালামাল চুরি হওয়ার ভয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে অনীহা প্রকাশ করছে।

দুর্যোগ চলাকালীন চুরি-ছিনতাইসহ নানা রকম অপরাধ রোধের জন্য চকরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তীর নেতৃত্ব পুলিশের একাধিক দল ও আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা তাহেরা বেগমের নেতৃত্বে আনসারের কয়েকটি দল বিভিন্ন ইউনিয়নে টহলের পাশাপাশি সাইক্লোন শেল্টারভিত্তিক দ্বায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়া পেকুয়ায় ১২১টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে অন্তত এক লাখ বিশ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। তবে, এসব সাইক্লোন শেল্টারের বেশিরভাই ফাঁকা দেখা গেছে। অনেক চেষ্টায় কয়েক হাজার নারী ও শিশুকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে পেরেছেন কর্মীরা।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে চকরিয়া ও পেকুয়ার ২৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মানুষকে নিরাপদ স্থানে যেতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। এতে উপকূলের আংশিক মানুষ আশ্রয়ের জন্য ছুটলেও পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ ৩ হাজারের বেশি পরিবারের কোনো সদস্যই প্রশাসনের ডাকে সাড়া দেয়নি।

চকরিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা রাহাত উজ জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা পুরোপুরি শুরু হওয়ার আগেই যেভাবেই হোক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম  বলেন, যারা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিচ্ছেন তাদের ঘরবাড়ির মালামালের দায়িত্ব আমাদের। চুরির ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে এবং পাশাপাশি স্থানীয় মেম্বার ও কাউন্সিলরদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঊষার আলো-এসএ