পরিবারটির সহায় সম্বল বলতে তেমন কিছু ছিল না। বাবার সহায়সম্পদ বিক্রি করে পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনে সৌদি আরবে পাড়ি জমান ২২ বছর বয়সি তরুণ জহিরুল। তবে তার ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা অধরাই রয়ে গেল। জহিরুলের স্বপ্ন শেষ হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। গত ৩০ জুন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। মৃত্যুর ২৩ দিন পর সেই স্বপ্ন পরিবারের কাছে পৌঁছেছে কফিনে।
ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা বৈরাগী বাড়ির এলাকার। নিহত জহিরুল ওই এলাকার আব্দুল লতিফের বাড়ির ভাড়াটিয়া রশিদ মৃধার ছেলে।
বুধবার (২৩ জুলাই) সকালে হযরত শাহ জালাল বিমানবন্দর থেকে জহিরুলের লাশসহ কফিন বুঝে নেয় পরিবার। লাশটি দেশের আনার জন্য সহযোগিতা করেন মানবাধিকার কর্মী সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি।
নিহতের বাবা আব্দুর রশিদ মৃধা বলেন, দালালদের প্রলোভনে পড়ে সম্পদ বিক্রি করে ঋণ নিয়ে সাড়ে সাত লাখ টাকা খরচ করে আদরের সন্তান জহিরুলকে সৌদি আবর পাঠিয়েছিলাম। দালালরা বলছিল, সৌদিতে ভালো কাজ করতে পারবে। বেতন বেশি, যে টাকা খরচ করে যাবে তা বেশিদিন লাগবে না উঠাতে। সৌদি যাওয়ার পর শুনি দালালরা জহিরুলকে অবৈধভাবে নিয়ে গেছে। সে সৌদি থাকা বা কাজ করার অনুমতি পাবে না। একথা শুনে অসুস্থ হয়ে পড়ি।
তিনি আরও বলেন, সৌদি যাওয়ার কিছুদিন পর জহিরুল ফোন করে জানায়, সে দেশের লোকজন পেয়েছে। পালিয়ে থেকে মরুভূমিতে কাজ করতে পারবে। তবে থাকা ও কাজ করার অনুমতি নিতে হলে সৌদিতে দালাল আছে তাদের তিন লাখ টাকা দিতে হবে। কাজ করে এ টাকা ম্যানেজ করবে এবং অনুমতি পাওয়ার পর দেশে ঋণের টাকা পরিশোধ করবে। ফোনে প্রায় সময় জহিরুল আমাকে স্বান্তনা দিয়ে বলতো, আব্বা বেশি দিন লাগবে না টাকা পাঠাবো, একটু কষ্ট করে ধৈর্য ধরেন।
এ বাবা আরও বলেন, জহিরুলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি। ছেলেকে তো হারালাম না নিজেও মরলাম। ছেলের লাশটিও হারালাম। কারণ সৌদিতে অবৈধভাবে থাকার কারণে মরদেহ দেশে আনা সম্ভব নয় বলেই জানি। অবশেষে সহযোগিতার হাত বাড়ালেন সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি। সে শেষ বারের মতো ছেলের মুখটা দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। আবার সরকারের কাছ থেকে দাফনের জন্য নগদ অনুদানও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
ঊষার আলো-এসএ