বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আবরারের মা রোকেয়া খাতুন। তিনি দ্রুত রায় কার্যকর ও পলাতক আসামিকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
শহিদ আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় হাইকোর্ট আজ যে রায় দিয়েছেন তাতে আমি সন্তুষ্ট। শুধু আমরা না, সারা দেশের মানুষ সন্তুষ্ট হয়েছে। প্রথম যখন রায় ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই রায়েও দেশবাসী সন্তোষ প্রকাশ করেছিল। বর্তমান সরকার, বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্টরা, ছাত্রজনতা, সাংবাদিক ও দেশবাসীর সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। মৃত্যুর চার বছর পরেও আমার সন্তানকে কেউ ভুলে যায়নি। সবাই আমার আবরারকে মনে রেখেছে, কেউ ভুলে যায়নি।
তিনি আরও বলেন, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান র্যাগিং মুক্ত থাক। বর্তমানে যেমন জুলুম অত্যাচার নেই। তেমন যেন সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব সময় নিরাপদ থাকে। ভবিষ্যতে যেন আমার মতো কাউকে সন্তান হারাতে না হয়। শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন লক্ষ্য যেন ধ্বংস না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যে রায় হয়েছে, সেটা দ্রুত কার্যকর করা হোক। যাতে আবরারের মতো কাউকে জুলুম অত্যাচার করতে না পারে কেউ। এরকম কাজ করি কেউ সাহস না পাই। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের ছেলের মতো করে দেখা। পিতামাতার মতো শাসন করতে হবে।
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে রোববার হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতকক্ষে আবরার ফাহাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসম চুক্তি এবং পানি আগ্রাসন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নৃশংস কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করে সংগঠনটির ক্যাডাররা। পরে রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়।
এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরদিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে একই বছরের ১৩ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
আবরার ফাহাদ ১৯৯৮ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের রায়ডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মো. বরকত উল্লাহ এবং মায়ের নাম রোকেয়া খাতুন। আবরার কুষ্টিয়া মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং পরে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে পড়াশোনা করেন। নটরডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা শেষে ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ আবরার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। পড়াশোনা চলাকালে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আবরারের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বর্তমান বুয়েটে মেকানিক্যাল বিভাগে অধ্যায়নরত।
ঊষার আলো-এসএ