বিশেষ প্রতিনিধি : শেষ চৈত্রের দাবদহে জীবন ওষ্ঠাগত। তাপমাত্রার ব্যারোমিটার বাড়ছেই। অদৃশ্য শক্র করোনার হানা। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি উদ্যোগের কমতি নেই। আছে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা। কিন্তু সব ছাপিয়ে মানুষের লড়াই যেন শেষ হয়না। বেঁচে থাকার এমনই এক লড়াই করলেন হাজারো বয়স্ক মানুষ। তাদের অধিকাংশই রূপসা নদী পাড়ের বাসিন্দা। এসেছিলেন মহানগরী খুলনার আইনজীবী ভবনের অগ্রণী ব্যাংকের বুথে তিন মাসের বয়স্ক ভাতা তুলতে।
শ্রীফলতলার শামসুল হক বলেন, ‘সরকার আমাদের জন্য ভাল উদ্যোগ নিছে। কিন্তু যারা টাকা দিচ্ছে, তারা সব নষ্ট করছে। আমরা বুড়ো মানুষ, এখনতো শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এভাবেতো পারিনা।’
যুগিহাটি গ্রামের মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘অসুস্থ ও বয়স্ক দুলা ভাইয়ের ভাতা তুলতেআসছি। দেখেন হাজার হাজার বৃদ্ধ মানুষ। ১৫’শ টাকা নিতে অসুস্থ হলে ১৫ হাজার টাকায়ও কুলোবে না। সরকারের এ ভাতা ইউনিয়নে ইউনিয়নে সহজ ভাবে দেয়া উচিত। না হলে মানুষ বাঁচতে না। এঁরা সবাইতো ঝুঁকিতে পড়লো; কে দেখবে।’
রূপসার সেনের বাজার এলাকার মধ্যপাড়ার বাসিন্দা ষাটোর্দ্ধ বৃদ্ধা রাবেয়া বেগম। তিনি বলেন, ‘সেই সকাল আটটায় আইছি। এখন দেড়টা বাজে। কিছুই খেতে পারি। কথা বলতে পারছিনে। কয়ডা টাকার জন্য আয়ছি। ব্যাডারা ঠেইলে ফেইলে দিচ্ছে। জানিনা ফিইরে যাইতে পারবো কিনা।’
লকডাউনের একদিন আগে মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে রূপসা এলাকার কয়েক হাজার বয়স্ক মানুষ এসেছিলেন এ ব্যাংকটিতে। কিন্তু একদিনে এতো মানুষের চাপে অনেকটাই অসহায় ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। একদিনে এতো মানুষকে সেবা দিতে হ্যা- মাইকের ব্যবস্থা করেও করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা দিতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। আবার ভিড়ের চাপে অনেকই বয়স্ক মানুষই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি এ অবস্থা বিরাজ করে।
অগ্রণী ব্যাংক খুলনা করপোরেট শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. হেদায়েত হোসেন শেখ বলেন, ‘ব্যাংকের রূপসা সেনের বাজার শাখা বন্ধ হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। আমরা এদিন অতিরিক্ত জনবল দিয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য হ্যা- মাইক সরাবরাহ করেছি। তারপরও গ্রাহকদের ভোগান্তি হয়েছে। তবে আগামীতে তাদের আর ব্যাংকে আসতে হবে না। বয়স্ক মানুষ ঘরে বসে বিকাশের মাধ্যমেই তাদের ভাতা পাবেন।’