ঊষার আলো রিপোর্ট : তীব্র দাবদাহে পুড়ছে সারা দেশ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিও বিরাজমান করছে। আবহাওয়া দপ্তর এমনটিই জানিয়েছে। এমন হিট অ্যালার্টের মধ্যেই বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে আজ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চললেও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
অসহনীয় গরমে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে কোমলমতি শিশুরা। অনেক শিশু ঘরে থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। স্কুল খুললেও অধিকাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে নিরাপদ বোধ করছেন না। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুরা খেলাধুলা করতে মাঠে এদিকে-সেদিক ছোটাছুটি করে থাকে। এতে বাচ্চাদের নিষেধ করেও দমিয়ে রাখা যায় না।
এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। আবার বিদ্যুৎ থাকলেও রয়েছে তীব্র লোডশেডিং। তাছাড়া অনেক স্কুলের ক্লাসে ফ্যানের ব্যবস্থা নেই। থাকলেও পর্যাপ্ত নয়। পাশাপাশি হিট স্ট্রোকে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে। ফলে এই তাপপ্রবাহে সশরীরে ক্লাস করতে গেলে বাচ্চাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অভিভাবকরা। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করেছে।
ঈদের ছুটি শেষে গত ২১ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ছিল।
তবে অসহনীয় গরমের কারণে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত স্কুল-কলেজে ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও ছুটি শেষে আজ (রোববার) নতুন সূচি প্রকাশ করে প্রাথমিকের সব প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যক্রমের সময়ও এগিয়ে আনা হয়েছে। পাশাপাশি অ্যাসেম্বলিও বন্ধ রাখতে বলেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। শনিবার মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় এক শিফটের স্কুলে ক্লাস চলবে সকাল ৮ থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। দুই শিফটে পরিচালিত স্কুলের প্রথম শিফট সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় শিফট পৌনে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ক্লাস চলবে। তাপপ্রবাহ সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি বন্ধ থাকবে।
এদিকে গরমে এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার কারণে ক্ষতি পোষাতে আগামী সপ্তাহ থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবারও ক্লাস চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে প্রাথমিকের ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। অর্থাৎ অন্যান্য সময়ের মতো শনিবার প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।
অপরদিকে এক সপ্তাহের ছুটি শেষে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রোববার থেকেই ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি জানায়।
এদিকে তীব্র দাবদাহের কারণে এক সপ্তাহ বন্ধ ঘোষণা করলেও আজ যথারীতি চালু থাকছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের ক্লাস। আজ থেকে ক্লাস খুলছে। এছাড়া তীব্র গরমের কারণে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এখনো সেই সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার তীব্র দাবদাহে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ক্লাস অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাশাসন। এছাড়া সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ রাখাও নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, অধিকাংশ অভিভাবক এই দাবদাহের মধ্যে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছে না। তারা জানান, আরও এক সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা উচিত। কারণ প্রাপ্ত বয়স্ক লোকজন চলমান তাপমাত্রায় হাঁসফাঁস করছে সেখানে বাচ্চারা কীভাবে এই দাবদাহ সহ্য করবে! করোনা মহামারির সময় দুবছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল বিষয়টি উল্লেখ করে তারা। এই বিষয়ে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে অনলাইনে ক্লাস চালু করার দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।
ঊষার আলো-এসএ