ঊষার আলো রিপোর্ট : আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩১৪টি উন্নয়ন প্রকল্প সমাপ্ত করাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এসব প্রকল্প ২০২৪ সালের জুনে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এ অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনও প্রকল্পগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। কিন্তু আগের কোনো অর্থবছরেই এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে আগামী অর্থবছরও প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য পূরণ হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান রোববার বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ না করে তো জোর করে তা সমাপ্ত ঘোষণা করা যায় না। কিন্তু কেন প্রতি অর্থবছর একই ঘটনা ঘটছে-তা বিশ্লেষণ করে দেখা হবে; খতিয়ে দেখা হবে। কেন বারবার এমন হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা পরিকল্পনা কমিশন থেকে চেষ্টা করছি। তবে প্রকৃত দায়িত্ব হলো-সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) মূল এডিপিতে এ রকম সম্ভাব্য সমাপ্য প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ২৮০টি। তবে সংশোধিত এডিপি তৈরির সময় সেটি বেড়ে ৩১৮টিতে দাঁড়ায়। তবে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যপূরণ কতটা হবে তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। কেননা ইতোমধ্যে অনেক প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ বাড়ানোর পাঁয়তারা শুরু হয়েছে।
নতুন এডিপি পর্যালোচনা করে দেখা যায়-আগামী অর্থবছরে সম্ভাব্য সমাপ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ২৫৭টি, সমীক্ষা প্রকল্প ৩০টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৮টি এবং নিজস্ব অর্থায়নের ৯টি প্রকল্প রয়েছে। সম্ভাব্য সমাপ্য তালিকায় সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে সড়ক পরিবহণ খাতে। এ সংখ্যা ৪৯টি। এছাড়া স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়ন খাতে ১৫টি, পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ খাতে ২৫টি, গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলী খাতে ৪২টি, সাধারণ সরকারি সেবা খাতে দুটি, জনশৃঙ্খলা ও সেবা খাতে সাতটি এবং শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে সাতটি প্রকল্প, কৃষি খাতে ২৩টি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ছয়টি, স্বাস্থ্য খাতে ৪৬টি, ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতে ছয়টি, শিক্ষায় একটি, সামাজিক সুরক্ষায় নয়টি এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১৮টি প্রকল্প রয়েছে। এসব বিনিয়োগ প্রকল্পের বাইরে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প সমাপ্তির লক্ষ্য আছে ১৮টি। কারিগরি সহায়তা প্রকল্প রয়েছে ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প আছে নয়টি। এ প্রসঙ্গে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন রোববার বলেন, এর পেছনে নানা কারণ আছে। তবে গাফিলতিও যে নেই সেটি বলা যাবে না। একইসঙ্গে দক্ষতার অভাবও আছে। পাশাপাশি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়া অনুমান নির্ভর প্রকল্প নেওয়া এবং বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করাটাও এক্ষেত্রে দায়ী। আমরা চেষ্টা করছি ওয়ার্ক প্ল্যান নেওয়ার। যাতে সেই অনুযায়ী তারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। অনেক সময় বাধ্য হয়ে মেয়াদ বাড়াতেও হয়।
আইএমইডির বিভিন্ন সময় প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়-এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতে ৩৫৫টি প্রকল্প সমাপ্ত করা হবে বলে ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ছিল ৩২১টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৩০টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প ছিল চারটি। মাঝ পথে এসে ২৩টি প্রকল্প কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) ৩৭৮টি প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৩২২টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৩৭টি এবং নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প ১৯টি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২৯৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এ তালিকার বাইরে থাকা প্রকল্পের মধ্যে ৪২টি শেষ হয়েছে। এ অর্থবছরে মোট সমাপ্ত প্রকল্প দাঁড়ায় ৩৩৬টিতে। কিন্তু এখানেও সমস্যা আছে। শতভাগ কাজ শেষ করে মাত্র ১৫০টি প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। বাকি ১৮৬ প্রকল্পে কাজ কিছু কিছু বাকি থাকলেও শেষ করা হয়েছে।
এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল ৪৩৯টি উন্নয়ন প্রকল্প। এর মধ্যে অর্থবছর শেষে ২৩৬টি প্রকল্প শেষ হয়েছে। বাকি ২০৩টি প্রকল্প পরের অর্থবছরের এডিপিতে যোগ হয়। তবে তালিকার বাইরে থাকা ২৮টিসহ এ অর্থবছরের মোট ২৬৪টি প্রকল্প শেষ হয়। এগুলোর মধ্যে পুরোপুরি শতভাগ কাজ ১৪০টি প্রকল্পের শেষ হয়েছে। কিছু কাজ বাকি থাকলেও ১২৪টি প্রকল্পের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে শেষ করা হয়েছে।
এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল ৩০৫টি প্রকল্প। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৪১টি প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে। বাকি ১৬৪টি প্রকল্প চলতে থাকে। লক্ষ্যের বাইরে ৪১টিসহ এ অর্থবছরের মোট ১৮২টি প্রকল্প সমাপ্ত হয়। তবে মাত্র ৯০টি প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। একইভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল ৩৪৬টি উন্নয়ন প্রকল্প। এর মধ্যে ২৪৫টি শেষ হয়েছে। এছাড়া লক্ষ্যমাত্রার বাইরে থাকা ৬৭টিসহ মোট ৩১২টি প্রকল্প শেষ হয়। এর মধ্যে শতভাগ কাজ মাত্র ১৫৫টি প্রকল্পের শেষ হয়।
সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, প্রধান সমস্যা হলো তদারকির অভাব। শুরু থেকে প্রকল্পগুলোতে কঠোর মনিটরিং করা দরকার। যেসব প্রকল্প সমাপ্ত করা হবে বলে ধরা হয় সেগুলোর ক্ষেত্রে জোরদার মনিটরিংয়ের বিকল্প নেই। এখানে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতাও থাকে। একইসঙ্গে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া দরকার। যাতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তদারকি কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়।
ঊষার আলো-এসএ