ঊষার আলো রিপোর্ট : খুলনার ডুমুরিয়ায় নিরব মন্ডল (১৩) নামের এক স্কুলছাত্রকে রশিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ৫ কিশোর গ্রাং এ হত্যার সাথে জড়িত।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত কক্ষে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়। টিভি সিরিয়াল ক্রাইম প্রেট্রোল দেখেই খুনের পরিকল্পনার ১ মাসের মাথায় হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করা হয়। নিহত নিরব উপজেলার গুটুরিয়া গ্রামের শেখর মন্ডলের ছেলে এবং গুটুদিয়া অক্কুর চন্দ্র গোলদার বান্ধব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র। এ ঘটনায় ডুমুরিয়া থানা পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত সরঞ্জমসহ ঘাতক ৫জনকে আটক করেছে। ডুমুরিয়া থানা পুলিশ ও একাধিক দায়িত্বশীল সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে উপজেলার গুটুদিয়া অক্কুর চন্দ্র গোলদার বান্ধব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেনীর ছাত্র নিরব মন্ডলকে মেরে ফেলা হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের ৫শিক্ষার্থী সংঘবন্ধ হয়ে তাকে হত্যা করে। সংঘবন্ধ ওই ৫জন হল নবম শ্রেনীর ছাত্র মৃত সৈয়দ মোল্লার ছেলে সোহেল মোল্ল্যা (১৫), জিলেরডাঙ্গা গ্রামের পংকজ মন্ডলের ছেলে পিতু মন্ডল (১৪), গুটুদিয়া গ্রামের প্রকাশ রায়ের ছেলে ১০ শ্রেণীর ছাত্র হিরক রায় (১৫), তেলিখালী গ্রামের অনিমেশ রায়ের ছেলে ১০ শ্রেণীর ছাত্র পিয়াল রায় (১৫) ও গুটুদিয়া গ্রামের ক্ষিতিশ মন্ডলের ছেলে ষষ্ট শ্রেনীর ছাত্র দ্বীপ মন্ডল (১৩)।
জানা গেছে, সংঘবন্ধ এই চক্রটি লেখাপড়ায় তেমন মনোযোগী ছিল না। এরা কিছুটা সিনেমা স্টাইলে ঘোরাফেরা করতো। বিশেষ করে ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোলের প্রতি বেশি আশক্ত ছিল। আর ওই স্টাইল কাজে লাগিয়ে নেমে পড়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার ধান্দায়। আর ওই চক্রটি প্রথমেই বেছে নেয় স্কুলের সহজ সরল শিক্ষার্থী নিরব মন্ডলকে। তাদের সাথে নিরবের বিরোধের সুত্রপাত ঘটে স্কুলের ভিতরে সিগারেট খাওয়া নিয়ে। ওই সুত্র ধরেই নিরবের সাথে তাদের দ্বন্দ শুরু হয়।
এক মাস আগে থেকেই ওরা তাকে হত্যা ও জিম্মি করে টাকা আদায়ের ফন্দি করে। এক পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার ছুটির পরে ওই দলের সদস্য দ্বীপ মন্ডল কৌশলে নিরবকে স্কুলের পেছনে একটি পরিত্যক্ত ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থান করছিল অন্য চারজন। এরপর কথা আছে বলেই ঝাপটে ধরে তার গলায় রশি পেঁচিয়ে ঘরের ডাবার সাথে ঝুলিয়ে তাকে হত্যা করে। কিছুক্ষণ পরে তার মৃত্যু নিশ্চিত জেনে মরদেহ নামিয়ে ওই ঘরের কোনায় পুরানো কাপড় চোপড়ের মধ্যে লুকিয়ে রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এদিকে নিহত নিরব মন্ডলের বাড়ি ফিরতে দেরি দেখে তার স্বজনরা খোঁজাখুজি শুরু করে। এরই মধ্যে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে একটি মোবাইল ফোন দিয়ে পিতা শেখর মন্ডলের নিকট ছেলে ফেরৎ দেয়ার কথা বলে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা চায় ওই চক্রটি। এরপর বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়। থানা পুলিশ ওই মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই নেমে পড়ে উদ্ধার অভিযানে। পুলিশ মোবাইল ট্যাকিংসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে একজনকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরপর একে একে ৫জনই পুলিশের জালে ধরা পড়ে এবং তাদের দেয়া তথ্যে’র ভিত্তিতে রাত সাড়ে ১২টার দিকে স্কুলের ওই পরিত্যক্ত ঘর থেকে নিরবের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বি সার্কেল মহসীন আল মুরাদ পরিদর্শন করেন।
এ ঘটনায় ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শংকর প্রসাদ মন্ডল বলেন, নিরব মন্ডল নিহতের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সে নিয়মিত স্কুলে আসতো। তবে ওই ছেলেগুলো ভালো ছিল না। ওদের চলাফেরা ও পড়ালেখার লক্ষণ সন্তোষজনক ছিল না।
বিষয়টি নিয়ে ডুমুরিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেখ কনি মিয়া (বিপিএম) সাংবাদিকদের বলেন, ৩০লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে স্কুলছাত্রকে আটকে রাখা হয়েছে, এমন অভিযোগ পেয়ে আমরা মাঠে নেমে পড়ি। অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে থানার সকল অফিসার কাজ শুরু করে এবং রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে খুনীদের আটক করা হয়। আর তাদের দেয়া তথে’র ভিত্তিতে সাড়ে ১১টার মধ্যে মরদেহ উদ্ধার ও হত্যার কাজে ব্যবহৃত দড়ি, মোবাইল ফোন ও সিম জব্দ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে, এরা টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে এ ধরনের দুঃসাহসিক কাজ করেছে। যা দেখে তারা টাকা আয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে এবং আটক ৫জনের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।