এম এন আলী শিপলু : খুলনা জেলায় এ মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ছিল ৫৭ হাজার পাঁচশ’ চল্লিশ হেক্টর জমিতে। আর আবাদ হয় ৬০ হাজার একশ’ ৫০ হেক্টর জমিতে। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায়, ২১ হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষি অধিদপ্তর ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে দুই লাখ ৫৭ হাজার মেট্টিক টন। ইতিমধ্যেই ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। অল্প-স্বল্প মাড়াই বাকি। প্রতি হেক্টর জমিতে হাইব্রীড জাতের ধান ৪.৯৬ মেট্টিক টন উৎপাদনের লক্ষমাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয়েছে ৪.৯৫ মেট্টিক টন।
মাত্রাতিরিক্ত তাপদাহ, টানা আট মাস অনাবৃষ্টি, গরম বাতাসের ঝড়ো হাওয়া ও প্রয়োজনীয় সেচ সুবিধা না থাকায় জেলায় এবার বোরোর আশানুরূপ ফলন হয়নি। ধান মাড়াই’র পর চিটে পাওয়া যাচ্ছে ১০ শতাংশ। হাইব্রীড জাতের উৎপাদনে বেশি ঘাটতি হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আশাবাদী ছিলেন মৌসুমে জেলায় দুই লাখ ৫৭ হাজার মেট্টিক টন ধান উৎপাদিত হবে। কিন্তু তা হয়নি।
খুলনার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শষ্য) মোঃ আতিকুল ইসলাম জানান, টানা আট মাস অনাবৃষ্টি। বোরো সেচের ওপরেই নির্ভরশীল। বীজতলা থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত ভূ-গর্ভের পানির ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয় বোরো চাষিদের। কালবৈশাখীর ঝড়ে একশ’ দশ হেক্টর জমির বোরো আক্রান্ত হয়। তাপদাহের কারণে ১৯ হেক্টর জমির বোরো ফসল ক্ষতি হয়। পুরো মৌসুমে বোরো ৩৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা সহনশীল। গত মাসে খুলনায় ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা বয়ে যায়। সবমিলিয়ে উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়নি। উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। জেলায় হাইব্রীড জাতের বোরো আবাদের পরিমাণ বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। জেলার হাট-বাজারগুলোতে প্রতি মন ধান এক হাজার ৫০ টাকা থেকে ১১শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত রবি শস্যের মৌসুম। আর এই সময় যে ধান রোপণ করা হয় সেটি বোরো ধান। খুলনা জেলা একটি লবণাক্ত এলাকা। এখানে লবণসহনশীল ধান রোপণ করা হয়।
তিনি বলেন, এবার ৫৭ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষমাত্রা ছিল। ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে হাইব্রিড ধানের ফলন ভালো হয়। মধ্য অক্টোবর থেকে ধান রোপণ শুরু হলেও কেউ-কেউ দেরি করে বীজতলা প্রস্তুত করেছেন। যে কারণে মধ্য মার্চের পরিবর্তে এবার মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত ধান কাটা চলবে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তিন শতাংশের বেশি ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। এবার এক হাজার ৪০ টাকা মণ ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে ডুমুরিয়া উপজেলায় বোরো আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের তুলনায় ৫৫৫ হেক্টর ধানের আবাদ বেশি হয়েছে। ধানের বর্তমান অবস্থা খুব ভালো। গত বছর ডুমুরিয়া উপজেলায় বোরো আবাদ হয়েছিল ২১ হাজার ২০৫ হেক্টর। এ বছর আবাদ হয়েছে ২১ হাজার ৬৬০ হেক্টর। যা গতবারের তুলনায় ৫৫৫ হেক্টর বেশি। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ১ লাখ ৩৪ হাজার ২৯২ টন। আর চালের লক্ষমাত্রা ৮৫ হাজার ৬৩২ টন। উপজেলায় চালের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে ৫৫ হাজার টন। এর মধ্যে আউশ আবাদ হয় ৩২০ হেক্টর এবং আমন ১৫ হাজার ৬২৫ হেক্টর।
(ঊষার আলো-এমএনএস)