ঊষার আলো ডেস্ক : মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দূর গ্রামের রোগী ও তাদের মাঝে রাত ২টার পর হাসপাতাল গেটের বাইরে সেহরী বিতরণ করেন। হাসপাতাল পার্শ্ববর্তী দুস্থ পরিবারেরও অনেকে আসে। সেখানে নুর নাহার বিনামূল্যে সেহরি বিতরণ করেন। কেউ সেখানে বসে নুর নাহারের দেয়া সেহরী খায়, কেউবা থালাবাটি ভরে সেহরী নিয়ে যায়। হাসপাতাল কাছেই নুর নাহার বেগমের বাড়ি।
তিনি পুরো রমজান মাসজুড়ে হাসপাতালের দূর গ্রামের রোগী, রোগীর স্বজন এবং নিকটবর্তী দুস্থদের মাঝে সেহরী বিতরণ করেন। সরেজমিনে নুর নাহার বেগমের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনদের জন্য ডেকচি ভরে রান্না করছেন। সেহরির আগে রিকশা ভ্যানে করে সেই খাবার নিয়ে আসেন হাসপাতাল গেটে। রাত ২টা বাজার সাথে সাথে হাসপাতাল থেকে থালা বাটি নিয়ে রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল গেটের সামনে ‘নাহার ফার্মেসি’র সামনে নারী-পুরুষরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যায়।
তাদের পাত্র তুলে দেয়া হয় ভাত, সবজি, মাছ-মাংস, ডাল। নুর নাহার বাড়ির পাশের পিডিবি মসজিদের মুসল্লিদের মাঝেও প্রতিদিন ইফতার বিতরণ করেন। এ হিসেবে ইফতার ও সেহরী মিলে প্রতিদিন তিনি ২৫০ জন মানুষকে নিজ খরচে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন।
নুর নাহার বেগম জানান, মসজিদের মুসল্লিদেরও ইফতার দেন। নুর নাহারের স্বামী নুরুল ইসলাম মেহেরপুর পিডিবি অফিসে কর্মরত।
হাসপাতাল গেটে তাদের ‘নাহার ফার্মেসি’ নামে একটি ওষুধের দোকান রয়েছে। আছে বিঘা দশেক জমি। নুর নাহার ফার্মেসি ব্যবসা করেন। প্রতিদিন নিজ হাতে মসজিদের মুসল্লিদের জন্য ইফতার আয়োজন এবং রাত ১০টা থেকে সেহরী রান্না করেন। তাদের সঙ্গে ডিম, মাংস অথবা মাছের সঙ্গে চিকন চালের ভাত, ডাল একটি সবজি দিয়ে সেহরী সারেন।
সেহরী নেয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুরে ইয়াসমিন, ঝাউবাড়িয়া গ্রামের সাথী আরা, সীমান্ত গ্রাম ধলার সুলতানা বেগম, গাংনী উপজেলার রফিকুল ইসলাম, মুজিবনগর উপজেলার সুপিয়া খাতুনসহ অনেকেই জানান, কয়েকদিন ধরে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নুর নাহার বেগম তাদের সেহরী দেয়ার কারণে সেহরীর জন্য তাদের ও তাদের পরিবারের কাউকে চিন্তা করতে হয় না। রোগীদের মাঝে সেহরী বিতরণে নুর নাহারকে সহযোগিতা করেন হাসপাতাল এলাকার সাইফুল ইসলাম ও তারিকুল ইসলাম নামের দু’জন।
নুর নাহার বেগমের স্বামী নুরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, সন্তানের জন্য সব মা জীবন বিসর্জন দিতে পারে। সন্তানের জন্য এটুকু করে যদি মনে শান্তি অনুভব করে। আর আর ছেলে যখন নেই তখন কার জন্যই বা সহায়-সম্পত্তি রেখে যাব।
নুর নাহার বেগম জানান, তার একটি ছেলে ছিল। ২০১৫ সালে আত্মহত্যা করে। পরের বছর থেকে তিনি তার আত্মার শান্তির জন্য ছেলের নামে ইফতার আর সেহরী খাওয়ানো শুরু করেছেন। তাছাড়া প্রেমে ব্যর্থ যেসব যুবক-যুবতী আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে গিয়ে হাসপাতালে আসেন। তাদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহসহ তাদের মানসিক সেবা দিয়ে থাকি।
(ঊষার আলো-এমএনএস)