ঊষার আলো রিপোর্ট: করোনার পর এসএসসির প্রথম পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলো। এতে ফল নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের আগ্রহ একটু বেশিই ছিল। তবে হিসাব পালটে দিয়েছে ঢাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর হঠাৎ করে ডাকা পালটাপালটি সমাবেশ। এ কারণে রাজধানীতে ফল পাওয়া শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই অনলাইনে ফল জানতে পেরেছে। তবে আশপাশে বাসা যাদের তারা ফল প্রকাশের পরপর স্কুলে জড়ো হয়।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে এমন চিত্র মিলেছে। ঢাকার অন্য বড় স্কুলগুলোতেও বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস চোখে পড়েনি। তবে এমনটা যেন প্রত্যাশিতই ছিল। সমাবেশকে ঘিরে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির আশঙ্কায় অভিভাবকরাও ঝুঁকি নিতে চাননি।
শিক্ষকরা জানান, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে রাস্তাঘাটে গাড়ি কম থাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের উপস্থিতি অনেকটা কম ছিল। তবে ঢাকার আশপাশের পরিস্থিতি ছিল একেবারেই ভিন্ন। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আনন্দ-উল্লাস ছিল চোখের পড়ার মতো। এসব স্কুলগুলোতে ফলাফলে আগের মতোই সাফল্য ধরে রেখেছে।
ভিকারুননিসা নূন : মেয়েদের জন্য রাজধানীর অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। বরাবরের মতো এবারও সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। ২ হাজার ৯৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে এবার পাশ করেছে ২ হাজার ৮৬ জন। এক্ষেত্রে পাশের হার ৯৯ দশমিক ৪৩। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬৫৯ জন। তবে ফেল করেছে ১২ জন। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই আগে অনলাইনে নিজের ফলাফল জানতে পেরেছে। আশপাশের শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে আনন্দে মেতে উঠে।
প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের মেয়েরা বরাবরই ভালো করে। এবারও প্রত্যাশা অনুযায়ী, অনেক ভালো করেছে। ওদের ফলাফলে সবাই খুশি। আমরা চাই এ ফলাফল সব সময় ধরে রাখতে। ফলাফলে যখন শিক্ষার্থীরা উল্লাস করছে, তখন স্কুলের বাইরে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উপচে পড়া ভিড়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসেছেন অভিভাবকরাও। মেয়ে রিদিতা এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। মেয়েকে ঘিরে বাবা ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ আহমেদ ও মা রাশেদা আক্তার শিশুর মতো কাঁদছিলেন।
বাবার ভাষ্য, সন্তান যখন হাসে-খুশিতে আনন্দ করে-বাবা-মা আনন্দে দিশেহারা হয়ে উঠেন। ওরা নেচে-গেয়ে আনন্দ করে। আমরা আনন্দে কাঁদি। শুক্রবার দুপুর দেড়টা। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ মাঠে রিদিতা ও তার মা-বাবার মতো অনেক অভিভাবকও আনন্দ করছিলেন।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ : এসএসসির ফলে এ বছরও সাফল্য ধরে রেখেছে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সন মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে এবার ১ হাজার ৫৫৬ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরমধ্যে পাশ করে ১ হাজার ৫৫২ জন। এক্ষেত্রে পাশের হার ৯৯ দশমিক ৭৪। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ১১৮ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ অর্জনের হার ৭২ দশমিক ৪।
প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর জহিরুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের গুণগতমানের শিক্ষা প্রদানে মাইলস্টোন কোনো আপস করে না। ভালো ফলাফলের জন্য আসল নিয়ামক আমাদের শিক্ষার্থীরা সারা বছর শ্রেণি শিক্ষার ব্যাপারে সচেতন ও পরিশ্রমী। এখানে শিক্ষিকরা যেমন পাঠদানে আন্তরিক, তেমনি অভিভাবকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ এ প্রতিষ্ঠানের ভালো ফলাফল শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার ফসল।
মনিপুর স্কুল : এ বছর রাজধানীর মনিপুর স্কুল ও কলেজে ৩ হাজার ৮৮০ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাশ করেছে ৩ হাজার ৫৫৪ জন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ২৪৮ জন। অর্থাৎ মোট পাশের হার ৯১ দশমিক ৬০ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২ দশমিক ১৬। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। যারা কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জন করতে পারেনি তাদের কল্যাণ কামনা করেছেন।
সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ : রাজধানীর সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে শতভাগ পাশসহ ১ হাজার ১২২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক সবাই আনন্দে আত্মহারা। তবে তাদের এই সাফল্য প্রথম নয়। এসএসসি, এইচএসসিসহ প্রতিষ্ঠানের সব পর্যায়ে এমন সাফল্য অর্জন করে আসছে। এবার ১ হাজার ৫৬২ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। কেউ অকৃতকার্য হয়নি।
ফলাফল প্রকাশের পর উপস্থিত শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উদ্দেশে প্রিন্সিপাল মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘আজ বড় আনন্দের দিন, এসএসসি পরীক্ষায় আমরা অসাধারণ সাফল্য পেয়েছি। এই অর্জন শিক্ষার্থী-অভিভাবক-শিক্ষকদের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল। এ প্রতিষ্ঠান যে কোনো বোর্ড পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফল অর্জন করে।
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে : রাজধানীর কাকরাইলে উইল লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে এবার পরীক্ষার্থী ছিল ২ হাজার ২৩ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৬৩ জন। তবে ফলাফল প্রকাশের পর বেলা ১১টার দিকে সেখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা। প্রতিষ্ঠানটি পল্টনের কাছে হওয়ায় এমন চিত্র যেন প্রত্যাশিতই ছিল।
উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয় : রাজধানীর উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা গতবারের তুলনায় কমেছে। বিদ্যালয়টিতে গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৯০ জন এবার যার সংখ্যা ১৮৫। তবে বিদ্যালয়ে ফলাফলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জহুরা বেগম। এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিদ্যালয়টি থেকে ৩০২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। কৃতকার্য শিক্ষার্থীর হার শতভাগ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮৫ জন শিক্ষার্থী।
ঊষার আলো-এসএ