ঊষার আলো রিপোর্ট : মানুষের মধ্যে ধৈর্য, আত্মসংযম ও পরার্থপরতার মতো আন্ত সামাজিক গুণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সেরা সময় হচ্ছে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত, বিশেষ করে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যেই ধৈর্য ও আত্মসংযমের বিকাশ ঘটে বেশি। আর পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পরার্থপরতা বা পরোপকারিতার গুণটি বিকশিত হয়। শিশুদের এসব দক্ষতা তাদের শিক্ষাগত ফলাফলের ক্ষেত্রেও ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ভালো করার জন্য কার্যকর। তাই সরকারি কিংবা পারিবারিকভাবে এসব দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিশুদের পেছনে বিনিয়োগের সেরা সময় এটাই।
প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত একটি গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। যদিও এসব দক্ষতা শেখানোর কোনো ব্যবস্থা দেশের বিদ্যমান সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত নেই। কিন্তু ভারতসহ বিশ্বের ১০০টি দেশে প্রাথমিক স্কুলের সিলেবাসে এসব দক্ষতা শেখানো হচ্ছে। গতকাল সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত সেমিনারে এসব বিষয় উঠে আসে।
মূল আলোচনায় ড. শ্যামল চৌধুরী বলেন, ‘শিশুদের আন্ত সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কোন পর্যায় থেকে পারিবারিকভাবে বা সরকারি বিনিয়োগ বেশি দরকার সেটি দেখার জন্যই গবেষণাটি করা হয়। শিশুদের মধ্যে শূন্য থেকে ৩৬ মাস বয়স পর্যন্ত মানসিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়।
গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে মাত্র এক দিন ৪০ মিনিটের একটি ক্লাসের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে পরার্থপরতা ৯ শতাংশ পর্যন্ত এবং ১১ শতাংশ আত্মনিয়ন্ত্রণ দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ধৈর্যের মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য দেখা যায়নি। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উন্নতি দেখা গেছে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তিনটি দক্ষতার ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দক্ষতা উন্নয়নে এগিয়ে ছিল।
তবে পরার্থপরতার গুণটি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় একই মাত্রায় বেড়েছিল। ফলে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই বেশি উপযুক্ত হিসেবে এ গবেষণায় উঠে এসেছে।
এমনকি বিশেষ ক্লাসে যুক্ত এসব শিক্ষার্থী তাদের শ্রেণি পরীক্ষার ছয়টি বিষয়েও গড়ে ২০ শতাংশ বেশি নম্বর পেয়েছে। গবেষণার জন্য নেওয়া দুটি পরীক্ষায়ও তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি নম্বর পেয়েছে। দেশের ১৫০টি গ্রামের ১৩৫টি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের স্যাম্পল নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। এদের মধ্যে ৬৯টি স্কুলে আন্ত সামাজিক দক্ষতার জন্য আলাদা একটি ক্লাস নেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির মধ্যে প্রতি ক্লাস থেকে পাঁচজন করে মোট তিন হাজার ২২২ জন শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হয় বিশেষ এই ক্লাসের জন্য।
আর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্যও ভারত থেকে প্রশিক্ষক নিয়ে আসা হয়েছিল। ২৮ সপ্তাহ বাছাইকৃত এসব শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুলনা করে এসব ফলাফল প্রস্তুত করা হয়।
প্রশ্নোত্তর পর্বে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল ইসলাম জানতে চান যে বর্তমান সিলেবাসে এসব দক্ষতা শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে কি না। জবাবে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এ অধ্যাপক বলেন, ‘২০১৯ সালে গবেষণাটি চলাকালে দেশের বিদ্যমান সিলেবাসে এসব দক্ষতা শিক্ষা দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তবে অল্প বিনিয়োগে সিলেবাসে এটা যুক্ত করতে পারলে বড় ধরনের রিটার্ন পাওয়া যাবে। বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে এটা সিলেবাসে যুক্ত আছে। এমনকি প্রতিবেশী ভারতেও এসব দক্ষতার প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।’
ঊষার আলো-এসএ