ঊষার আলো রিপোর্ট: দেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে নার্সিং পেশাজীবীরা। সরকারিভাবে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠানে এমএসসি ইন নার্সিং ডিগ্রি চালু আছে। বেসরকারিভাবে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও খরচ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ঘাটতিতে সেখানে এক-তৃতীয়াংশ আসন খালি থাকছে।
অন্যদিকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ নেই সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগ অনুযায়ী উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন বিষয়ভিত্তিক দক্ষ স্পেশালাইজড নার্স সংকটে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা রোগীরা সেবাবঞ্চিত হচ্ছে। যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে।
এমন পরিস্থিতিতে আধুনিক নার্সিংয়ের জনক ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেলের জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ বিশ্বের মতো দেশেও পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক নার্স দিবস-২০২৪।’
‘ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব নার্সেস’ (আইসিএন) এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে-‘আওয়ার নার্সেস, আওয়ার ফিউচার, দ্য ইকোনমিক পাওয়ার অব কেয়ার’ অর্থাৎ ‘আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ, সেবাই আমাদের অর্থনৈতিক শক্তি।’
দিবসটি উপলক্ষ্যে নার্সিং ও মিউওয়াইফারি অধিদপ্তরের উদ্যোগে সচেতনতামূলক শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সরকারি-বেসরকারি নার্সিং কলেজ ও হাসপাতালে সেমিনারসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে।
জানা গেছে, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সামরিকভাবে পরিচালিত ৩২টি প্রতিষ্ঠানে চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সে ২১০০ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া দশটি প্রতিষ্ঠানে দুই বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সে ৭২৫টি ও দুটি প্রতিষ্ঠানে দুই বছর মেয়াদি এমএসসি ইন নার্সিং ডিগ্রির ২৭০টি আসন রয়েছে। এর বাইরে ২১টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ১,৬৩০টি আসনের অনুমোদন থাকলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এক-তৃতীংশ আসন খালি পড়ে থাকছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন রোগীকে সুস্থ করতে চিকিৎসকের মতো নার্সরাও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখেন। তারা ২৪ ঘণ্টাই রোগী সেবায় নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু বিষয়ভিত্তিক ও উচ্চতর ডিগ্রিধারী নার্স সংকটে রোগীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
নার্সদের উচ্চশিক্ষা বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন (এমএসসি ইন নার্সিং) ডিগ্রি অর্জনে সরকারিভাবে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে রজাধানীর মুগদায় নার্সিং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ৬টি বিশেষায়িত বিষয়ের জন্য ১২০টি আসন থাকলেও মাত্র ৬০টি আসনে শিক্ষা ভর্তির সুযোগ রয়েছে। এছাড়া কলেজ অব নার্সিং (শেরেবাংলা নগর) এমএসি কোর্স চালুর অপেক্ষায় রয়েছে।
সম্প্রতি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ৯টি বিশেষায়িত বিষয়ে ৩টি করে মোট ২৭টি আসন চালু হয়েছে। বেসরকারিভাবে ২১টি প্রতিষ্ঠানে নার্সিংয়ে এমএসসি ডিগ্রি চালুর অনুমোদন পেয়েছে।
এছাড়া নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষায় এমএসসি বা পিএইচডি করার সুযোগ নেই। তবে ২২ জন নার্স দেশে সরকারিভাবে পিএইচডি ইন কমিউনিটি/পাবলিক হেলথ সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া বিদেশে পিএইচডি ইন নার্সিং করেছেন ১৬ জন। বর্তমানে ৮ জন নার্স বিদেশে পিএইচডি অধ্যয়নরত।
সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটস (এসএনএসআর) তথ্যমতে, দেশে ১ লাখ ৩৬ হাজার রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের বিপরীতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা রেজিস্টার্ড নার্স ও মিডওয়াইফের সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ২১ জন।
এর মধ্যে বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) ৭ হাজার ১৯২ জন এবং বিএসসি ইন পাবলিক হেলথ নার্স রয়েছে ১ হাজার ৬১৮ জন। সবমিলে চার বছর মেয়াদি বিএসসি পাশ রেজিস্টার্ড নার্সের সংখ্যা ১০ হাজার ১৫১ জন।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের সাবেক ডিপিএম এবং সিবিএনএস, জাইকা প্রজেক্টের সিনিয়র কনসালটেন্ট ড. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশে চিকিৎসা বিভাগের মতো বিষয়ভিত্তিক নার্সিং স্পেশালিটি থাকলেও বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। নার্সদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ তৈরিতে পিছিয়ে রয়েছে। সম্প্রতি দশটি পুরাতন নার্সিং কলেজে উচ্চতর ডিগ্রি চালুর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে।
ঊষার আলো-এসএ