UsharAlo logo
শনিবার, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লেবাননে উৎকণ্ঠায় প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি

ঊষার আলো ডেস্ক
অক্টোবর ১০, ২০২৪ ৭:৪৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

যুদ্ধকবলিত লেবানন থেকে প্রায় তিন হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে ফিরতে চাইলেও আপাতত সেটি সম্ভব হচ্ছে না। দেশটি থেকে আকাশপথে চলাচল সীমিত হয়ে পড়ায় এ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। লেবাননে অবস্থানরত এই বাংলাদেশিদের বড় অংশই নারী ও শিশু।

স্থানীয় বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, ফিরে আসতে চাওয়া প্রবাসীদের বেশিরভাগই হিজবুল্লাহ অধ্যুষিত লেবাননের দাহি শহরসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা। আপাতত লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে তাদের ঠাঁই মিলেছে।

বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় বৈরুতে ওই অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরগুলো তৈরি করেছেন বাংলাদেশি কমিউনিটির সচ্ছল ব্যবসায়ীরা। আশ্রিত প্রবাসীদের প্রতিটি দিন কাটছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন শিশুসহ আশ্রয় নেওয়া পরিবারের সদস্যরা।

দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা দুই বছরের ছেলে আব্রাহামকে নিয়ে বিপাকে পড়া রেশমা বলেন, আমার অসহায় লাগছে। ছেলেটাকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অপেক্ষা করছি। কবে দেশে যেতে পারব সেই আশায় আছি।

সেখানে আশ্রয় নেওয়া আরেক নারী হাসি আক্তার জানান, প্রায় শূন্য হাতে পালিয়ে আসতে হয়েছে তাদের। ফলে মানুষের সহযোগিতার ওপরই এখন চলতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাগজপত্র (বৈধতার কাগজ) থাকা সত্ত্বেও আমরা রাস্তায় বের হয়ে এসেছি। মালিক কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি। মালিক কোনো টাকা-পয়সাও দেয়নি। আমরা টাকা ছাড়াই যার যার জীবন নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে এসেছি।

পরিত্যক্ত বা ব্যবহার না হওয়া বাড়ি ভাড়া করে আপাতত অস্থায়ী আশ্রয় শিবির করা হলেও প্রতি দিন কয়েক হাজার মানুষের জন্য খাবার সংস্থান করা কঠিন হয়ে পড়েছে স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য।

বৈরুতের এক আশ্রয়কেন্দ্রের পরিচালনাকারীদের একজন সুব্রত সাহা (ওরফে বাবু সাহা) জানান, দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা বাংলাদেশিদের জন্য বৈরুতে যারা মোটামুটি সচ্ছল কমিউনিটির। সেসব মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে এই আশ্রয়কেন্দ্র চালানো হচ্ছে।

আরেকটি আশ্রয়কেন্দ্রের অন্যতম পরিচালক প্রবাসী ব্যবসায়ী সোহেল মিয়া বলেন, প্রতিদিনই চাঁদা তুলে আশ্রিত বাংলাদেশি ভাই-বোনদের জন্য খাবারের সংস্থান করতে হচ্ছে।

তবে, দিন যতই গড়াচ্ছে, আশ্রিত মানুষগুলোর জন্য খাবারের সংস্থান করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন স্বেচ্ছাসেবীরা। এ জন্য স্থানীয় কমিউনিটির বাইরে সরকারকে দ্রুত সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তারা।

স্বেচ্ছাসেবক আল আমিন ইজ্জত বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে অনুরোধ করব, যেন তারা সাহায্য করে। আমরা আর পেরে উঠছি না, হিমশিম খাচ্ছি।

এদিকে, আটকে পড়া প্রবাসীদের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন বলেন, থাকা ও খাওয়ার সংস্থানের জন্য এরই মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কিছু অর্থের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ভয় ও আতঙ্কে যারা দেশে ফিরতে মরিয়া, তাদের জন্য সময়টা আরো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিরে যাওয়ার অপেক্ষা যত বাড়ছে, ফিরতে না পারার শঙ্কা ততই ঘনীভূত হচ্ছে। বিশেষ করে যখন লেবাননের আকাশপথ অনিরাপদ হয়ে ওঠায় বৈরুত থেকে আকাশপথে চলাচল সীমিত হয়ে এসেছে।

দেশে ফিরতে অপেক্ষমাণ প্রবাসীদের তালিকা দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে বলে মনে করছেন স্বেচ্ছাসেবী সোহেল। তার মতে, কীভাবে ফেরা যাবে সেটি কেউ বলতে পারছে না। অন্যদিকে, দেশে তাদের পরিবার-পরিজনের মধ্যেও উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

বিশেষ করে যেসব মায়েরা ছোট শিশু নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় ঘুরছেন, তাদের জন্য বিষয়টি অনেক বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, যারা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে চাইবেন, তাদের তালিকা তৈরি করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টার মতে, অনেক অর্থ খরচ করে বিদেশে যাওয়া প্রবাসীরা সহজে দেশে ফিরতে চায় না।