UsharAlo logo
সোমবার, ১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাতিল হচ্ছে ৪ হাজার অপারেটরের নিয়োগ

usharalodesk
জানুয়ারি ১৩, ২০২৫ ১২:৩৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট :  বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপের ১৬ হাজার ৭৮৯ জন অপারেটর নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর রাজনৈতিক ও দলীয় চাপে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার জনের নিয়োগ বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের চাপে পেছনের তারিখ দেখিয়ে নতুন করে সাড়ে ৪ হাজার দলীয় নেতাকর্মীর আবেদন জমা হয়েছে বিএমডিএ-এর সেচ বিভাগে। শিগগিরই সংশোধিত নতুন নিয়োগ কমিটি করে এসব দলীয় সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগ দেওয়া হবে।

বিএমডিএ-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পাওয়া সাড়ে ৪ হাজার অপারেটর বাদ পড়বেন। বিষয়টি জানাজানির পর সংশ্লিষ্টদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বিএমডিএ-এর কর্মকর্তারা।

অভিযোগ উঠেছে, একটি দলের কতিপয় রাজনৈতিক নেতা গভীর নলকূপ অপারেটর নিয়োগকে কেন্দ্র করে ব্যাপক নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেছেন রাজশাহীসহ আশপাশের জেলা-উপজেলায়। কোনো কোনো নেতা ২০০ থেকে ২৫০ জনের জন্য লিখিতভাবে সুপারিশ দিয়েছেন। ছোট নেতারা সুপারিশ দিয়েছেন ৫ থেকে ৭ জনের। অপারেটর নিয়োগের জন্য কতিপয় নেতা ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব নেতা প্রতিদিন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে নিজেদের তালিকা জমা দিচ্ছেন। এর ফলে বিএমডিএ-এর নিয়োগসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কারও তালিকা ফিরিয়ে দিতে পারছেন না বা মুখের ওপর নাও বলতে পারছেন না। ফলে অপারেটর নিয়োগ নিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

বিএমডিএ-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শুরু থেকেই রাজনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে যোগ্যদের বাছাই করে অপারেটর নিয়োগের চেষ্টা তারা করেছিলেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা যোগ্যদেরই নির্বাচিত করে চূড়ান্ত তালিকাও প্রকাশ করেন। কিন্তু এখন রাজনৈতিক চাপে তারা অনেকের নিয়োগ বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছেন। রাজনৈতিক চাপের কারণে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দুই সপ্তাহ পরও এখন পর্যন্ত কাউকে নিয়োগপত্র না দেওয়ার কারণও এটি। নিয়োগপত্রের জন্য নির্বাচিতরাও ঘুরছেন বিএমডিএতে।

বিএমডিএ সূত্র জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ১৬ হাজার ৭৮৯টি গভীর নলকূপ রয়েছে। গত অক্টোবরে গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগের নোটিশ জারি করা হয়। ৩ থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২৩ হাজার ৭৫০টি আবেদন জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে ধারাবাহিকভাবে ২৩ হাজার ৭২১ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচিত অপারেটরদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর থেকে দলীয় তালিকা অনুযায়ী রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে বিএমডিএ অফিসের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা নির্বাচিত তালিকা বাতিল করে দলীয় লোকদের নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে বিএমডিএ-এর মাঠ পর্যায় ও জোনাল কার্যালয়গুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বিএমডিএ-এর কর্মকর্তারা দলীয় নেতাদের বুঝিয়ে নতুন করে আবেদন দিতে বলেন। এখন দলীয় সুপারিশগুলো থেকে সাড়ে ৪ হাজার জনকে নতুন করে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে দলীয় সুপারিশে পেছনের তারিখ দেখিয়ে সাড়ে ৪ হাজার আবেদনপত্র নতুনভাবে জমা নেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেশি দলীয় সুপারিশ এসেছে রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী ও পবা থেকে। কিছু সুপারিশ এসেছে নওগাঁর নিয়ামতপুর, মান্দাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও সদর উপজেলা থেকেও রাজনৈতিকভাবে সুপারিশ দিয়ে নতুন তালিকা জমা করা হয়েছে। এগুলো বর্তমানে যাচাই-বাছাই করছেন কর্মকর্তারা। সাক্ষাৎকার ছাড়াই তাদের নিয়োগের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএমডিএ।

রাজশাহীর পবায় নতুন করে ২৮৩টি দলীয় আবেদন জমা হয়েছে। তানোর উপজেলার ৩১৭টি নতুন আবেদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তানোর উপজেলা বিএনপির একজন নেতা একাই ২০০ জনের আবেদনে সুপারিশ দিয়ে তালিকা দিয়েছেন বিএমডিএতে। তানোর বিএনপির আরেক সাবেক নেতা ১১৭ জনের আবেদনে দলীয় সুপারিশ করেছেন। এসব নেতা প্রতিদিন বিএমডিএ-এর প্রধান কার্যালয় রাজশাহীতে গিয়ে তাদের তালিকা মোতাবেক অপারেটর নিয়োগের জন্য কর্মকর্তাদের চাপ দিচ্ছেন।

কৃষকরা অভিযোগে জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের পর উত্তরাঞ্চলজুড়ে বিএমডিএ-এর অধিকাংশ গভীর নলকূপ দখল করে নেন একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। যদিও গভীর নলকূপগুলোর চাবি এখনো দখলদারদের থেকে উদ্ধার করতে পারেনি বিএমডিএ। ফলে মাঠ পর্যায়ে নিবিড় সেচ প্রদানে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

বিএমডিএ-এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, অপারেটর নিয়োগের চূড়ান্ত প্রকাশের পর বিভিন্ন এলাকা থেকে আপত্তি আসে। ফলে নিয়োগের তালিকা পুনর্বিবেচনা ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। নতুন করে সাড়ে ৪ হাজার আবেদন নেওয়া হয়েছে। এজন্য নতুন করে একটি সংশোধিত নিয়োগ কমিটি গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। সব অপারেটর পদে নিয়োগ দলীয় সুপারিশে নেওয়া হবে কি না-এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়।

ঊষার আলো-এসএ